
চিংড়ি খাতকে পুনরুজ্জীবিত করতে করণীয় বিষয়ক এই সংলাপের আয়োজন করে হিমায়িত খাদ্য রপ্তানিকারক সমিতি ও গবেষণা সংস্থা পিআরআই।
নব্বইয়ের দশকে দেশের চিংড়ি খাত রপ্তানি পণ্যের মধ্যে অন্যতম হলেও এখন অনেক পিছিয়ে পড়েছে। রপ্তানিতে এ খাতের পুনরুত্থানে কৃষি খাতের মতো সহায়তা চান চিংড়ি রপ্তানিকারকেরা। এ জন্য তাঁরা বিদ্যুৎ বিলে ২০ শতাংশ ছাড়, রপ্তানিতে নগদ সহায়তা, ঋণ পুনঃতফসিলকরণ সুবিধা এবং ৫০০ কোটি টাকার তহবিল গঠনের দাবি জানিয়েছেন।
রাজধানীর ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে আজ বুধবার সন্ধ্যায় চিংড়ি খাতের নীতিসহায়তা নিয়ে আয়োজিত এক নীতি সংলাপে এসব দাবি জানান খাতসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা। সংলাপটি আয়োজন করে বাংলাদেশ হিমায়িত খাদ্য রপ্তানিকারক সমিতি ও বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট (পিআরআই)। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার। বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর। সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি মো. শাহজাহান চৌধুরী।
সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন পিআরআইয়ের গবেষণা পরিচালক বজলুল হক খন্দকার। তিনি বলেন, ‘২০০০ সালে বাংলাদেশ এবং প্রতিযোগী দেশগুলোর রপ্তানির পরিমাণ একই রকম ছিল। কিন্তু গত ২৪ বছরে ভারত ১৪ গুণ, ভিয়েতনাম ৫ গুণ এবং ইন্দোনেশিয়া রপ্তানি ৩ গুণ বাড়িয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশের অবস্থা একই রয়ে গেছে। ২০২৪ সালে এ খাতে আমাদের রপ্তানি ছিল মাত্র ৩৩ কোটি ৪০ লাখ মার্কিন ডলার।’
চিংড়ির উৎপাদনশীলতা নিয়ে বজলুল হক খন্দকার বলেন, ‘আমাদের দেশে বাগদা চিংড়ির হেক্টরপ্রতি গড় উৎপাদন মাত্র দশমিক ৩৩ টন। আর গলদা চিংড়ির ক্ষেত্রে তা দশমিক ৫২ টন। অথচ ভারতে প্রতি হেক্টরে আমাদের চেয়ে ১৪ গুণ বেশি বা ৭ টনের বেশি চিংড়ি উৎপাদিত হয়। ভিয়েতনামে উৎপাদিত হয় সাড়ে ৩ টন।’ বজলুল হক খন্দকার বলেন, কম উৎপাদনশীলতা, উচ্চ সুদহার এবং ঋণ না পাওয়ায় এই খাতের উৎপাদন সক্ষমতার ২০ শতাংশ ব্যবহার হচ্ছে। ৬০ শতাংশ খামারি উৎপাদন ছেড়ে দিয়েছেন।
মূল প্রবন্ধে এ খাতের জন্য আড়াই হাজার কোটি টাকার তহবিল এবং প্রক্রিয়াকরণ খাতের জন্য আলাদাভাবে ৫০০ কোটি টাকার তহবিল গঠনের সুপারিশ করা হয়। একই সঙ্গে ঋণ পুনঃতফসিলকরণ সুবিধারও কথা বলা হয়।
কৃষিতে ২০ শতাংশ বিদ্যুৎ বিলে ছাড় দেওয়া হলেও চিংড়িতে দেওয়া হয় না। তাই কৃষি খাতের মতো চিংড়ি চাষেও বিদ্যুৎ বিলে ছাড়ের দাবি জানান হিমায়িত খাদ্য রপ্তানিকারক সমিতির ভাইস প্রেসিডেন্ট তরিকুল ইসলাম জহির। তিনি বলেন, ‘চিংড়ি রপ্তানি ৩ গুণ বাড়াতে আমাদের নীতি সহায়তা দরকার।’
প্রধান অতিথির বক্তব্যে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেন, ম্যানগ্রোভ বন কেটে চিংড়িঘের করার ও জেলি ব্যবহারের কারণে রপ্তানি কমার অভিযোগ রয়েছে। এখন আবার অতিরিক্ত মাছ আহরণের কারণে সাগরে মাছের মজুত কমেছে। ব্যবসায়ীদের দাবির বিষয়ে উপদেষ্টা বলেন, ‘মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ খাত বৈষম্যের শিকার। তাদের শিল্প খাতের মতো বিদ্যুৎ বিল দিতে হয়। এক বছর ধরে এটা নিয়ে কাজ করছি। আশা করছি শিগগিরই বিদ্যুৎ বিলে ২০ শতাংশ ছাড় পাব।’
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে গভর্নর বলেন, অর্থায়ন এ খাতের একমাত্র সমস্যা নয়। উৎপাদনশীলতা অনেক কম। তাই টাকা দিলেই সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে না। এ খাতকে এগিয়ে নিতে হলে যারা প্রকৃত উদ্যোক্তা, তাদের এগিয়ে আসতে হবে। উৎপাদন সক্ষমতার মাত্র ২০ শতাংশ ব্যবহার হচ্ছে। তাই যেখানে সমস্যা, সেখানে নজর দিতে হবে।
সভাপতির বক্তব্যে মো. শাহজাহান চৌধুরী বলেন, ‘এ খাতে অনেক বিদ্যুৎ ব্যবহার হয়। ২২-২৩ টাকা খরচ হয় প্রতি ইউনিটে। তাই আমাদের সহায়তা প্রয়োজন।’