আজ মঙ্গলবার ফার্মগেটে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের অডিটোরিয়ামে বাংলাদেশ ফিশারিজ রিসার্চ ফোরাম আয়োজিত দ্বিবার্ষিক ফিশারিজ কনফারেন্সে উপস্থিত অতিথিরা
আজ মঙ্গলবার ফার্মগেটে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের অডিটোরিয়ামে বাংলাদেশ ফিশারিজ রিসার্চ ফোরাম আয়োজিত দ্বিবার্ষিক ফিশারিজ কনফারেন্সে উপস্থিত অতিথিরা

সম্মেলনে অভিমত

মৎস্য খাদ্যের দাম কমালে মাছের দাম কমবে

দেশে মাছ উৎপাদনের প্রায় ৬০ শতাংশই আসে চাষ থেকে। কিন্তু উৎপাদন বাড়লেও মাছের দাম সেভাবে কমেনি। গবেষক ও বিশেষজ্ঞদের মতে, মাছের খাদ্যের দাম বেশি হওয়ায় এর দাম কমেনি। পাশাপাশি উৎপাদন বাড়াতে গিয়ে নিরাপদ পদ্ধতি অবলম্বন না করলে ভবিষ্যতে নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি হবে। তাই ফিড বা মৎস্য খাদ্যের দাম কমানো ও নিরাপদ মৎস্য চাষে জোর দিতে হবে।

আজ মঙ্গলবার রাজধানীর বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল (বিএআরসি) মিলনায়তনে বাংলাদেশ ফিশারিজ রিসার্চ ফোরাম (বিএফআরএফ) আয়োজিত ১০ম দ্বিবার্ষিক মৎস্য সম্মেলনে এমন মত উঠে আসে। সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার।

‘পরবর্তী প্রজন্মের মৎস্য ও জলজ চাষ: নিরাপদ খাদ্য, সমতা ও পরিবেশ’ প্রতিপাদ্যে আয়োজিত এই সম্মেলনের উদ্বোধনী অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন বিএফআরএফের সভাপতি ও বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জোয়ার্দার ফারুক আহমেদ। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন বিএফআরএফের সাধারণ সম্পাদক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মৎস্যবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মো. মনিরুল ইসলাম।

সম্মেলনে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ওয়ার্ল্ড ফিশ বাংলাদেশের কান্ট্রি রিপ্রেজেনটেটিভ ফারুক-উল ইসলাম। এতে তিনি বলেন, মাছ উৎপাদনের মান নিশ্চিত করতে তৃতীয় পক্ষের সার্টিফিকেট ব্যবস্থা চালু করা যেতে পারে। এতে মাছ রপ্তানি তিন থেকে পাঁচ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তিনি জানান, ফিড তথা মৎস্য খাদ্য উৎপাদনে আমদানিনির্ভরতা রয়েছে, তাই শুল্ক হ্রাস করা যেতে পারে। পাশাপাশি কৃষির মতো মৎস্য চাষেও প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ানো দরকার। এ ছাড়া ভবিষ্যতে মাছের খাবার সরবরাহে ড্রোন ব্যবহারের সম্ভাবনার কথাও তুলে ধরেন তিনি।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেন, কৃষিভিত্তিক উৎপাদন সম্প্রসারণের ফলে দেশে মাছের সরবরাহ বাড়লেও এর সঙ্গে সঙ্গে খাদ্যনিরাপত্তাসহ নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি হয়েছে। তিনি বলেন, ফুড সেফটি নিশ্চিত না হলে মাছের উৎপাদন বাড়ানোর কোনো অর্থ নেই। অ্যাকুয়াকালচারে উৎপাদিত মাছ যদি নিরাপদ না হয়, তাহলে সেটিকে প্রকৃত অর্থে মাছ বলা যায় না। এ ছাড়া ডলফিনের মতো ইলিশ রক্ষা আন্দোলনকে বৈশ্বিক রূপ দেওয়ার ওপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি।

মাছের পুষ্টিগুণ তুলে ধরে ফরিদা আখতার বলেন, মাছ শুধু পেট ভরানোর খাদ্য নয়; এটি প্রয়োজনীয় মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট ও ক্যালসিয়ামের গুরুত্বপূর্ণ উৎস। মাছ চোখ, হাড় ও মেধা বিকাশে সহায়ক ভূমিকা রাখে। বাঙালির মেধা বিকাশের পেছনেও মাছভিত্তিক খাদ্যাভ্যাসের বড় ভূমিকা রয়েছে।

* দেশে মাছ উৎপাদনের প্রায় ৬০ শতাংশ আসে চাষ থেকে। * মাছের খাদ্যের উচ্চমূল্যই দাম না কমার অন্যতম কারণ।

সামুদ্রিক মৎস্যসম্পদের বিষয়েও কথা বলেন উপদেষ্টা ফরিদা আখতার। তিনি মনে করেন, বাংলাদেশ এখনো সাগরের পূর্ণ সম্ভাবনার সদ্ব্যবহার করতে পারেনি। বর্তমানে মাত্র ৩০ শতাংশ সম্পদ ব্যবহার হচ্ছে। কাঠের নৌকা ও ট্রলার ভিন্ন পথে মাছ ধরছে এবং ট্রলারে ব্যবহৃত কিছু প্রযুক্তি উদ্বেগ তৈরি করছে। ‘সোনার প্রযুক্তি ব্যবহার করে একবারে সব মাছ তুলে আনার প্রবণতা সঠিক নয়’ বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে এসিআইয়ের গ্রুপ অ্যাডভাইজার এফ এইচ আনসারী বলেন, দেশে মাছের উৎপাদন বাড়লেও সবাই সমানভাবে লাভবান হচ্ছেন না। অনেক গবেষণার ফল মাঠপর্যায়ে কাজে লাগছে না। কিছু চাষি জানান, দুই কেজি ফিড দিয়ে মাত্র এক কেজি পাঙাশ পাওয়া যাচ্ছে। তিনি আরও বলেন, মাছ থেকে এখনো পর্যাপ্ত প্রক্রিয়াজাত খাবার তৈরি হচ্ছে না।

বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক অনুরাধা ভাদ্রা বলেন, দেশের ৬৪টি বিলুপ্তপ্রায় মাছের জাতের মধ্যে ৪১টি জাত পুনরুদ্ধার করা হয়েছে। ফিড উৎপাদনে অগ্রগতি হলেও দাম এখনো বেশি। এ ছাড়া খাদ্যনিরাপত্তা নিয়ে গবেষণা বাড়াতে হবে।

মৎস্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. আবদুর রউফ বলেন, মাছের চাষ ধরে রাখাও এখন একটি বড় চ্যালেঞ্জ। আধুনিকায়ন ও প্রযুক্তিনির্ভর চাষব্যবস্থার দিকে যেতে হবে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সাগরের তাপমাত্রা ও লবণাক্ততা বৃদ্ধিও নতুন সমস্যা তৈরি করছে।

সম্মেলনে আরও বক্তব্য দেন বাংলাদেশে এফএওর প্রতিনিধি দিয়া সানো, বিএফআরএফের সহসভাপতি মো. খালেদ কানক প্রমুখ।

এ ছাড়া গবেষক, শিক্ষক ও ব্যবসায়ী এবং ২০টি বিশ্ববিদ্যালয়ের মৎস্যবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীরা সম্মেলনে অংশ নেন।