
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্মাণাধীন গ্রন্থাগার ভবনের চারতলা থেকে পড়ে গত ১ আগস্ট মো. আরিফুল নামের এক শ্রমিক মারা গেছেন। আরও বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদালয়েও একই ধরনের শ্রমিক মৃত্যুর ঘটনা আছে। আর এ চিত্রই বলে দেয় কর্মক্ষেত্রে শ্রমিকের নিরাপত্তার বিষয়ে বাংলাদেশ কোথায় আছে।
সাবেক শ্রম সংস্কার কমিশনের প্রধান সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহমেদ এসব উদাহরণ উল্লেখ করে বলেছেন, ‘তবে হতাশ হলে চলবে না। আমরা এগোচ্ছি। এগোনোর প্রমাণই হচ্ছে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) তিন কনভেনশন অনুসমর্থন করেছে বাংলাদেশ। এ অনুসমর্থন মানে জাতির পক্ষ থেকে রাষ্ট্রের অঙ্গীকার। এখন সেই অঙ্গীকার বাস্তবায়নের পথে যেতে হবে।’
ঢাকার ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে গতকাল বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত ‘অগ্রগতির উদ্যাপন, ভবিষ্যৎ গড়া: শোভন কাজে অগ্রসর হতে বাংলাদেশের তিন আইএলও কনভেনশন অনুমোদন’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহমেদ এসব কথা বলেন।
গত অক্টোবরে আইএলওর তিন কনভেনশন অনুসমর্থন করে বাংলাদেশ, যার দুটি মৌলিক কনভেনশন। একটি ১৯৮১ সালের পেশাগত নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্যবিষয়ক কনভেনশন (নম্বর ১৫৫), আরেকটি ২০০৬ সালের প্রতিরোধমূলক নিরাপত্তা সংস্কৃতি গড়ার লক্ষ্যে করা কনভেনশন (নম্বর ১৮৭)। এ ছাড়া অনুসমর্থন করা হয়েছে ২০১৯ সালের সহিংসতা ও হয়রানি প্রতিরোধ কনভেনশন (নম্বর ১৯০), যা সহিংসতামুক্ত কর্মপরিবেশের অধিকার প্রতিষ্ঠা করে।
অনুসমর্থন করার কাজটিকে উদ্যাপন করতে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এবং আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) যৌথভাবে গতকাল অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। অনুষ্ঠানে জানানো হয়, ১৫৫ ও ১৮৭—উভয় কনভেনশন অনুমোদনের মাধ্যমে বাংলাদেশ এশিয়ার প্রথম দেশ হিসেবে আইএলওর ১০টি মৌলিক কনভেনশন অনুমোদন করেছে।
উদ্যাপন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন। বিশেষ অতিথি ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিকবিষয়ক বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী। শ্রমসচিব মো. সানোয়ার জাহান ভূঁইয়ার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ফাহমিদা আক্তার। আর সূচনা বক্তব্য দেন আইএলওর কান্ট্রি ডিরেক্টর ম্যাক্স টুনন।
বাংলাদেশে নিযুক্ত ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলার অনুষ্ঠানে বলেন, কোনো দেশই এগোতে পারবে না যদি না শতভাগ জনগোষ্ঠী ক্ষমতায়িত হয়। প্রযুক্তি হস্তান্তর, বিনিয়োগ, বাজার সুবিধা ইত্যাদির সঙ্গে শ্রম অধিকার সুরক্ষা জড়িত। আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের বিচারে এসব বিষয়ে বাংলাদেশ সঠিক পথেই আছে।
আইএলওর কান্ট্রি ডিরেক্টর ম্যাক্স টুনন বলেন, বাংলাদেশে প্রতিটি কর্মক্ষেত্র হবে নিরাপদ, সুস্থ ও সহিংসতামুক্ত। এগুলো কোনো বিশেষ সুবিধা নয়; বরং মানবিক মর্যাদা রক্ষার ন্যূনতম মান, যা সবার জন্য নিশ্চিত করা জরুরি। তিন কনভেনশন অনুমোদনের মাধ্যমে বাংলাদেশের শ্রমমানের উন্নয়ন হবে। বৈশ্বিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগে নতুন আস্থা তৈরি করবে এ ঘটনা। তিনি বলেন, কনভেনশনগুলোর প্রতিটি অধিকার যেন বাস্তবে দেশের কর্মক্ষেত্রে প্রতিফলিত হয়, সে পথে বাংলাদেশকে সহযোগিতা করবে আইএলও।
অনুষ্ঠানে মালিকপক্ষের প্রতিনিধি না থাকায় অসন্তোষ প্রকাশ করেন শ্রমিকনেতা নাইমুল আহসান। তিনি বলেন, শ্রম খাতের সার্বিক উন্নয়নে খাতভিত্তিক তথ্যভান্ডার দরকার। শুধু পোশাক নয়, অন্য খাতেও নজর দিতে হবে।
অনুষ্ঠানে এ ছাড়া বক্তব্য দেন পররাষ্ট্রসচিব আসাদ আলম সিয়াম, সাবেক শ্রমসচিব এ এইচ এম সফিকুজ্জামান, শ্রমবিষয়ক পরামর্শক জেনিফা কে জব্বার প্রমুখ।