
মজুরি বাড়ানোর দাবিতে চলমান শ্রমিক আন্দোলন থামাতে আবারও ‘কাজ নেই, মজুরি নেই’ ভিত্তিতে কারখানা পরিচালনার পাশাপাশি নতুন নিয়োগ বন্ধ রাখার কথা বললেন পোশাকশিল্পের মালিকেরা। নিজেদের কঠোর অবস্থানের কথা জানিয়ে তাঁরা বলেছেন, শ্রম আইনের ১৩(১) ধারার আওতায় কারখানা যত দিন বন্ধ থাকবে, তত দিন সংশ্লিষ্ট শ্রমিকেরা মজুরি পাবেন না।
রাজধানীর উত্তরায় তৈরি পোশাকশিল্পের মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর কার্যালয়ে গতকাল রোববার এক সংবাদ সম্মেলনে ন্যূনতম মজুরি ও বর্তমান শ্রম পরিস্থিতি বিষয়ে কথা বলেন সংগঠনটির সভাপতি ফারুক হাসান। তিনি বলেন, কোনো কারখানার শ্রমিকেরা কাজ না করলে কিংবা ভাঙচুর করলে কারখানা কর্তৃপক্ষ ‘কাজ নেই, মজুরি নেই’ ভিত্তিতে কারখানা বন্ধ রাখতে পারবে। যত দিন পর্যন্ত নিরাপত্তা নিশ্চিত হচ্ছে না, তত দিন নিজস্ব সম্পদ রক্ষায় শিল্পের উদ্যোক্তারা কারখানা বন্ধ রাখতে পারবেন বলে জানান তিনি।
শিল্প পুলিশের তথ্যানুযায়ী, মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে শ্রমিকের আন্দোলনের ঘটনায় গতকাল পর্যন্ত গাজীপুর, সাভার-আশুলিয়া ও ধামরাইয়ে ১৫৫টি কারখানা বন্ধ ছিল। যদিও বিজিএমইএর কর্মকর্তারা জানান, ১৩(১) ধারায় কারখানা বন্ধ আছে ১২২টি। তার মধ্যে গাজীপুরের কোনাবাড়ী এলাকায় ৩৮টি, সাভার-আশুলিয়া ও ধামরাইয়ে ৮০টি এবং ঢাকার উত্তরা ও মিরপুরে ৪টি।
এদিকে নিম্নতম মজুরি বোর্ড গতকাল মজুরির খসড়া কাঠামো প্রজ্ঞাপন আকারে প্রকাশ করেছে। ১২ হাজার ৫০০ টাকা ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণ করে তৈরি খসড়া কাঠামোর ওপর ১৪ দিন পর্যন্ত লিখিত আপত্তি বা সুপারিশ নেবে মজুরি বোর্ড। গতকালই ‘মজুরি বৃদ্ধিতে গার্মেন্ট শ্রমিক আন্দোলন’ নামের ১১ শ্রমিক সংগঠনের জোটের নেতারা লিখিতভাবে আপত্তি জানিয়েছেন। এতে তাঁরা ন্যূনতম মজুরি ২৫ হাজার ও মোট মজুরির মধ্যে মূল বেতন ৬৫ শতাংশ, সব গ্রেডে সমান হারে মজুরি বৃদ্ধি, প্রতিবছর ১০ শতাংশ হারে ইনক্রিমেন্টসহ সাত দফা দাবি জানান।
পোশাকশ্রমিকদের চলমান আন্দোলনে গতকাল পর্যন্ত চারজন পোশাকশ্রমিক নিহত হয়েছেন।
পোশাকশ্রমিক নিহতের ঘটনায় বিজিএমইএর দায় আছে কি না, সংবাদ সম্মেলনে তা জানতে চাইলে ফারুক হাসান বলেন, ‘আমরা মনে করি, কারখানায় কর্মরত অবস্থায় মৃত্যুর ঘটনা ঘটলে পোশাকশিল্পের মালিকের দায় ছিল। শ্রমিকেরা রাস্তায় নেমে ভাঙচুর করার সময় দেশের সম্পত্তি রক্ষায় নিয়োজিত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাঁদের সরিয়ে দিতে গেলে দুজন আহত হন। পরে তাঁরা মারা যান। অন্য দুজনের কথা বললাম না। এ ক্ষেত্রে কারখানা মালিকদের কোনো দায় নেই।’
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিজিএমইএর সহসভাপতি এস এম মান্নান, শহিদউল্লাহ আজিম ও নাসির উদ্দিন, পরিচালক ইনামুল হক খান প্রমুখ।
মজুরির আন্দোলনে ২৫টি কারখানায় ভাঙচুর হয়েছে এবং বড় ধরনের ক্ষতি হয়েছে তিন-চারটি কারখানায়—এমন তথ্য দিয়ে বিজিএমইএর সভাপতি বলেন, ‘আমরা গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ করছি, মজুরি বৃদ্ধির পরও আন্দোলনের নামে বিভিন্ন জায়গায় কারখানা ভাঙচুর হচ্ছে। অজ্ঞাতনামা কিছু উচ্ছৃঙ্খল শ্রমিক ও কিশোর গ্যাং কারখানার কর্মকর্তাদের মারধর করেছে।’ এ সময় তিনি কয়েকটি কারখানায় হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনার ভিডিও দেখান।
এক প্রশ্নের জবাবে ফারুক হাসান বলেন, ‘আমাদের রাজনীতির মধ্যে ফেলে দিয়েন না। তাতে দেশের ক্ষতি হবে।’
শ্রমিক আন্দোলন পোশাকের ক্রয়াদেশে কী প্রভাব ফেলছে, এমন প্রশ্নের জবাবে ফারুক হাসান বলেন, ‘বিদেশি ক্রেতাপ্রতিষ্ঠান ক্রয়াদেশ স্থগিত করে রেখেছে। এই পরিস্থিতি চলতে থাকলে তারা নতুন ক্রয়াদেশ দেবে না। আমরা ক্রেতাদের বোঝানোর চেষ্টা করছি যে শুধু ৫ শতাংশ কারখানা শ্রমিক আন্দোলনের কারণে বন্ধ হয়েছে। আমরা এই পরিস্থিতি সমাধানের চেষ্টা করছি।’
জানতে চাইলে শ্রমিকদের আন্তর্জাতিক জোট ইন্ডাস্ট্রিঅল, বাংলাদেশ কাউন্সিলের সভাপতি আমিরুল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘চূড়ান্ত হওয়া ন্যূনতম মজুরি আমাদের আকাঙ্ক্ষা পূরণ করতে পারেনি। এটি বাড়াতে হবে। ২০১৮ সালে বিভিন্ন গ্রেডে যে হারে মজুরি বেড়েছিল, এবারও সেটি করতে হবে। মূল বেতন ৬০ শতাংশ করতে হবে।’ তিনি আরও বলেন, বর্তমান আন্দোলন নিয়ে মালিকেরা যেভাবে কথাবার্তা বলছেন এবং যেসব ব্যবস্থা নিচ্ছেন, তাতে শ্রমিকেরা আরও ক্ষুব্ধ হচ্ছেন।