
চাহিদায় ১,২০০ থেকে ১,৮০০ বর্গফুট আয়তনের ফ্ল্যাট এগিয়ে।
আবাসন কোম্পানিগুলোর হাতেও এ রকম ফ্ল্যাট প্রচুর রয়েছে।
অধিকাংশ প্রতিষ্ঠান মূল্যছাড়, আকর্ষণীয় পুরস্কারসহ বিভিন্ন অফার রেখেছে।
কুয়াশামোড়ানো ছুটির দিনে শহরের মানুষ ধীরেসুস্থেই আড়মোড়া ভাঙে। এর ওপর মেলার আশপাশে রাজনৈতিক কর্মসূচি ছিল। সে জন্য রিহ্যাবের আবাসন মেলার তৃতীয় দিনে গতকাল শুক্রবার শেষ বিকেল থেকেই দর্শনার্থীদের উপস্থিতি বাড়তে থাকে। সন্ধ্যা পর্যন্ত যাঁরা এসেছেন, তাঁরা স্বচ্ছন্দেই মেলা ঘুরে দেখেছেন। যদিও দর্শনার্থীদের এই উপস্থিতি আবাসন প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মকর্তাদের মুখে তেমন হাসি ফোটাতে পারেনি।
মেলায় বিভিন্ন আবাসন প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা ও খোঁজখবর নিতে আসা ক্রেতাদের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, ঢাকায় এখন যাঁদের ফ্ল্যাট কেনার সামর্থ্য আছে, তাঁদের বড় অংশের কাছে মাঝারি আকারের অর্থাৎ ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৮০০ বর্গফুট আয়তনের ফ্ল্যাটের চাহিদা বেশি। অন্যদিকে আবাসন কোম্পানিগুলোর হাতেও মাঝারি আকারের প্রচুর ফ্ল্যাট রয়েছে। তবে গুলশান ও বনানীর মতো অভিজাত এলাকায় অবশ্য মাঝারি ফ্ল্যাট খুব একটা নির্মাণ করে না প্রতিষ্ঠানগুলো।
রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বাংলাদেশ–চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে আবাসন ব্যবসায়ীদের সংগঠন রিহ্যাবের আয়োজনে গত বুধবার শুরু হয় চার দিনের এই আবাসন মেলা। মেলার তৃতীয় দিন গতকাল বিকেলে ক্রেতা–দর্শনার্থীদের আবাসন প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি ভবন নির্মাণসামগ্রী, অন্দরসজ্জার বিভিন্ন উপকরণ ও গৃহঋণের খোঁজখবর নিতে দেখা গেছে।
দেশের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় আবাসন প্রতিষ্ঠান ইস্টার্ন হাউজিং লিমিটেড (ইএইচএল) এবারের মেলায় ধানমন্ডি, গুলশান ও আফতাবনগরের চারটি আবাসন প্রকল্পের ৮৫টি ফ্ল্যাট নিয়ে এসেছে। এর মধ্যে গুলশানে ফ্ল্যাটের দাম প্রতি বর্গফুট ৩৫ থেকে ৩৮ হাজার টাকা, যা ধানমন্ডিতে ২৫ থেকে ২৭ হাজার টাকা ও আফতাবনগরে ১২ থেকে ১৩ হাজার টাকা।
এ ছাড়া আফতাবনগরের পেছনে প্রায় ৩০০ বিঘা জমির ওপর জহুরুল ইসলাম সিটি–২ নামে একটি গেটেড কমিউনিটি গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছে ইস্টার্ন হাউজিং। সেখানে প্রথম ধাপে সাড়ে ১২ বিঘা জমিতে চারটি ভবন নির্মাণ করা হবে, যেখানে থাকবে প্রায় ২০০টি ফ্ল্যাট। প্রকল্পটিতে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, হাঁটার জায়গা, সুইমিং পুলসহ সব ধরনের নাগরিক সুযোগ-সুবিধা থাকবে। বর্তমানে প্রকল্পটির প্রচারের পাশাপাশি ক্রেতাদের কাছ থেকে তাঁদের চাহিদার কথা শুনছেন প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তারা। তাঁরা জানান, গ্রাহকদের চাহিদার ভিত্তিতে প্রকল্পের চূড়ান্ত নকশা করবেন স্থপতি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইস্টার্ন হাউজিংয়ের বিপণন বিভাগের নির্বাহী মহাব্যবস্থাপক মোহাম্মদ ফরহাদুজ্জামান বলেন, মেলায় ফ্ল্যাটের পাশাপাশি আফতাবনগরের ১৫টি প্লট আনা হয়েছে। এর মধ্যে চারটি প্লট বিক্রি হয়েছে।
আরেকটি স্বনামধন্য আবাসন প্রতিষ্ঠান র্যাংগস প্রপার্টিজ মেলায় ২০টি প্রকল্পের ফ্ল্যাট নিয়ে এসেছে। ধানমন্ডি, লালমাটিয়া, শেওড়াপাড়া, বনানী, বনানী ডিওএইচএস, গুলশান, বসুন্ধরা ও উত্তরায় অবস্থিত এসব প্রকল্পের ফ্ল্যাটের আকার ১ হাজার ৭৫০ থেকে ৪ হাজার ৫০০ বর্গফুট। প্রতি বর্গফুটের দাম ১১ হাজার থেকে ৪০ হাজার টাকা। মেলায় বুকিং দিলে ৫ লাখ টাকা মূল্যছাড়, ফ্রি কিচেন ক্যাবিনেট বা মোটরসাইকেল অথবা তিনটি মডেলের গাড়ি কেনার ক্ষেত্রে ৫ লাখ টাকা মূল্যছাড় রেখেছে তারা।
র্যাংগস প্রপার্টিজের সহকারী বিক্রয় মহাব্যবস্থাপক আহসান হাবিব প্রথম আলোকে বলেন, সাম্প্রতিক পরিস্থিতি ও রাজনৈতিক দলের কর্মসূচির কারণে গতবারের তুলনায় ৫০ শতাংশের কম দর্শনার্থী মেলায় আসছেন। ফলে প্রত্যাশা অনুযায়ী বেচাবিক্রি হবে না বলে আশঙ্কা তাঁর।
অ্যাসিউর গ্রুপ ঢাকার বসুন্ধরা আবাসিক, আফতাবনগর, উত্তরা, সিদ্ধেশ্বরী, ধানমন্ডি, মিরপুর, মোহাম্মদপুর, সাভার ডিওএইচএস ও পূর্বাচলের বিভিন্ন প্রকল্পের ৮৮০টি ফ্ল্যাট বিক্রির জন্য মেলায় এনেছে। এসব ফ্ল্যাটের আয়তন ১ হাজার ৬৫ থেকে ৪ হাজার ৫০০ বর্গফুট। প্রতি বর্গফুটের দাম ১০ হাজার ৫০০ টাকা থেকে ১৮ হাজার ৫০০ টাকা।
অ্যাসিউর গ্রুপের বিপণন ও বিক্রয় বিভাগের জ্যেষ্ঠ সহকারী মহাব্যবস্থাপক মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম সরকার প্রথম আলোকে বলেন, ক্রেতারা সাধারণত মাঝারি আকারের অর্থাৎ ১ হাজার ৫০০ থেকে ১ হাজার ৭০০ বর্গফুটের ফ্ল্যাট বেশি চান। অ্যাসিউরের কাছে এ রকম ফ্ল্যাট রয়েছে।
প্রায় তিন দশকের পুরোনো আবাসন প্রতিষ্ঠান সপ্তক গৃহায়ণ এলিফ্যান্ট রোড, মালিবাগ, উত্তরা ও লালমাটিয়ায় সাতটি আবাসন প্রকল্প নিয়ে মেলায় অংশ নিয়েছে। এসব প্রকল্পে রয়েছে ৬০টি ফ্ল্যাট। ফ্ল্যাটগুলোর আয়তন ১ হাজার ৮০০ থেকে ২ হাজার ২০০ বর্গফুট এবং প্রতি বর্গফুটের দাম ১৫ থেকে ২২ হাজার টাকা।
সপ্তক গৃহায়ণের পরিচালক (বিজনেস প্রমোশন) মঞ্জুরুল ইসলাম বলেন, আবাসন খাতে বর্তমানে মন্দা চলছে। অনিশ্চয়তার কারণে ক্রেতারা বিনিয়োগে সতর্ক হচ্ছেন। তবে এটি সাময়িক। দেশের সার্বিক পরিস্থিতির উন্নতি হলে আবাসন ব্যবসারও উন্নতি হবে।
রিহ্যাবের চার দিনব্যাপী আবাসন মেলা আজ শনিবার শেষ হবে। সকাল ১০টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত মেলা খোলা থাকবে। মেলা উপলক্ষে অধিকাংশ আবাসন প্রতিষ্ঠানই মূল্যছাড়সহ বিভিন্ন অফার দিচ্ছে।