আবাসন মেলার আনোয়ার ল্যান্ডমার্কের স্টলে ক্রেতারা ফ্ল্যাটের খোঁজ নিচ্ছেন। গতকাল রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে
আবাসন মেলার আনোয়ার ল্যান্ডমার্কের স্টলে ক্রেতারা ফ্ল্যাটের খোঁজ নিচ্ছেন। গতকাল রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে

চার দিনের আবাসন মেলায় ৩০৪ কোটি টাকার প্লট–ফ্ল্যাটের বিক্রি ও বুকিং

রাজধানী ঢাকায় অনুষ্ঠিত চার দিনের আবাসন মেলায় ৩০৪ কোটি টাকার ফ্ল্যাট, প্লট ও বাণিজ্যিক স্পেস বা জায়গা বিক্রি ও বুকিং হয়েছে। বিশেষ করে রেডি বা প্রস্তুত ফ্ল্যাট ও প্লটে বেশি আগ্রহ দেখিয়েছেন গ্রাহকেরা।

রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (রিহ্যাব) রাজধানীর আগারগাঁওয়ের বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে এ মেলার আয়েজন করেছে। গতকাল শনিবার ছিল মেলার শেষ দিন। গতকাল সন্ধ্যায় এক বিজ্ঞপ্তিতে রিহ্যাব জানিয়েছে, এবারের মেলায় মোট ৩০৪ কোটি ১১ লাখ ৫১ হাজার টাকার টাকার ফ্ল্যাট, প্লট এবং বাণিজ্যিক স্পেস বিক্রি ও বুকিং হয়েছে। এর মধ্যে ১৭২ কোটি টাকার ফ্ল্যাট, ৭৪ কোটি টাকার প্লট ও ৫৮ কোটি ১১ লাখ ৫১ হাজার টাকার বাণিজ্যিক জায়গা ছিল। এ ছাড়া প্রায় ৭৭৮ কোটি টাকার ব্যাংক কমিটমেন্ট এসেছে। তবে দেশের সার্বিক পরিস্থিতির কারণে এ বছর মেলায় ক্রেতা–দর্শনার্থী উপস্থিতি ও বিক্রি–বুকিং তুলনামূলক কম হয়েছে। ২০২৪ সালের রিহ্যাব মেলায় ৪০৩ কোটি ১২ লাখ ৭৪ হাজার টাকার ফ্ল্যাট, প্লট ও বাণিজ্যিক জায়গা বিক্রি ও বুকিং হয়েছিল।

গতকাল দুপুরে মেলা ঘুরে এবং আবাসন কোম্পানির কর্মকর্তা ও গ্রাহকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ফ্ল্যাট ও প্লট—উভয় ক্ষেত্রেই ক্রেতাদের আগ্রহ রয়েছে। বিশেষ করে এক–দেড় কোটি টাকার ফ্ল্যাট এবং ৫–১০ লাখ টাকার প্লটে আগ্রহ বেশি।

মূল্যছাড় চার প্রতিষ্ঠানের

প্রতিষ্ঠার ২০ বছর পূর্তি উদ্‌যাপন করছে দেশের অন্যতম আবাসন কোম্পানি বেসিক বিল্ডার্স। কোম্পানিটি এ উপলক্ষে বিশেষ মূল্যছাড় দিয়েছে, যা চলবে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত। রিহ্যাব আবাসন মেলায় ৬০টির বেশি প্রকল্প এনেছে বেসিক বিল্ডার্স। প্রকল্পগুলো রাজধানীর বসুন্ধরা, উত্তরা, বাড্ডা, বনশ্রী, বাসাবো, মিরপুর, মোহাম্মদপুর, কল্যাণপুর, কলাবাগান, রাজাবাজারে অবস্থিত। বেসিক বিল্ডার্সের ফ্ল্যাটগুলোর আকার সাড়ে ৮ হাজার থেকে ১৬ হাজার বর্গফুটের। বেশির ভাগ ফ্ল্যাটের দাম এক থেকে দেড় কোটি টাকার মধ্যে।

আবাসন মেলার বেসিক বিল্ডার্স লিমিটেডের স্টলে দুই গ্রাহক ফ্ল্যাটের খোঁজ নিচ্ছেন। গতকাল রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে

বেসিক বিল্ডার্সের উপব্যবস্থাপক মো. সৌমিক হাসান বলেন, ‘আমাদের কাছে যথেষ্ট প্রস্তুত ফ্ল্যাট রয়েছে। গ্রাহকেরা ফ্ল্যাটের আকারে ও দামে ঠকবেন না, এমনভাবেই প্রকল্পগুলো তৈরি। আমরা মান ও যথাসময়ে হস্তান্তরে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’

এদিকে আনোয়ার ল্যান্ডমার্ক আবাসন মেলায় ৪০টি প্রকল্প নিয়ে এসেছে। চলমান প্রকল্প আছে ২২টি। এর মধ্যে দুটি বাণিজ্যিক, বাকিগুলো আবাসিক। আনোয়ার ল্যান্ডমার্কের নতুন প্রকল্পগুলো রাজধানীর বসুন্ধরা, ধানমন্ডি, গুলশান, উত্তরা ও জলসিঁড়িতে অবস্থিত। রিহ্যাব মেলা থেকে আনোয়ার ল্যান্ডমার্কের ফ্ল্যাট বুকিং দিলে গ্রাহককে কিচেন ক্যাবিনেট ও দেড় টনের দুটি শীততাপনিয়ন্ত্রণ যন্ত্র (এসি) উপহার দিচ্ছে কোম্পানিটি।

আনোয়ার গ্রুপের মহাব্যবস্থাপক (বিক্রয় ও বিপণন) এ জেড এম তানভীর আহাদ বলেন, ‘আমাদের প্রকল্পগুলোতে আনোয়ার ইস্পাত ও সিমেন্টের মতো আনোয়ার গ্রুপের তৈরি নিজস্ব উপকরণ ব্যবহার হয়। ফলে গুণগত মান অক্ষুণ্ন থাকে। এ ছাড়া আমরা গ্রিন স্পেসের বিষয়ে গুরুত্ব দিয়ে থাকি।’

আবাসন মেলার প্রবাসী পল্লী গ্রুপের স্টলে দর্শনার্থীরা প্লটের খো*জ–খবর নিচ্ছেন। গতকাল রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বাংলাদেশ–চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে জাপান অর্থনৈতিক অঞ্চলের বিপরীত পাশে একটি প্লট প্রকল্প গড়ে তুলেছে প্রবাসী পল্লী গ্রুপ। সেখানে প্রতি কাঠা প্লটের দাম ১০ লাখ থেকে ৫০ লাখ টাকা। এ ছাড়া প্রবাসী পল্লী গ্রুপের প্রস্তাবিত পূর্বাচল সানাম সিটি ও পূর্বাচল রয়েল সিটিতে ৫ হাজার প্লট এবং প্রস্তাবিত ঢাকা–মাওয়া সিটিতে ১০ হাজার প্লট রয়েছে। কাঠাপ্রতি ৫ থেকে ১০ লাখ টাকায় এসব প্লট বিক্রি করা হচ্ছে।

প্রবাসী পল্লী গ্রুপের উপমহাব্যবস্থাপক (বিপণন ও বিক্রয়) মো. রাশেদুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের প্রকল্পগুলোতে হাসপাতাল, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, পার্কসহ আধুনিক নাগরিক সুযোগ–সুবিধা রয়েছে। বিশেষ করে জাপানি অর্থনৈতিক অঞ্চলের কারণে পূর্বাচল প্রবাসী পল্লী আবাসন প্রকল্পটিতে গ্রাহকদের বিশেষ আগ্রহ রয়েছে।’

আবাসন মেলার জিএলজি এসেটসের স্টলে দর্শনার্থীরা ফ্ল্যাট সম্পর্কে খোঁজ নিচ্ছেন। গতকাল রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে

মধ্যম ও উচ্চ আয়—উভয় শ্রেণির ক্রেতাদের জন্যই ফ্ল্যাট রয়েছে আবাসন কোম্পানি জিএলজি অ্যাসেটসের। আবাসন মেলায় তারা ২৪টি প্রকল্পের ১১৫টির বেশি ফ্ল্যাট নিয়ে আসে। প্রকল্পগুলো রাজধানীর উত্তরা, বনানী, মিরপুর ও মোহাম্মদপুরে অবস্থিত। এর মধ্যে বনানীতে আড়াই হাজার বর্গফুটের ফ্ল্যাট রয়েছে। এখানে প্রতি বর্গফুট ২৪–২৫ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মেলা উপলক্ষে সব ধরনের ফ্ল্যাটে ১৫ শতাংশ মূল্যছাড় দিয়েছে কোম্পানিটি।

জিএলজি অ্যাসেটসের উপমহাব্যবস্থাপক রুহুল আমিন বলেন, দেশের সার্বিক পরিস্থিতির কারণে আবাসন খাত বেশ কিছুদিন তুলনামূলক ধীরগতিতে এগিয়েছে। তবে আবাসন মেলায় এসে অনেক ক্রেতা নতুন ফ্ল্যাট কেনার আগ্রহ দেখিয়েছেন।