অ্যাপেক্স
অ্যাপেক্স

অ্যাপেক্স ফুটওয়্যারের মুনাফা কমেছে ৪ কোটি টাকার বেশি

  • ২০২৪–২৫ অর্থবছরে কোম্পানিটি মুনাফা করেছে ১৩ কোটি ৫৫ লাখ টাকা

  • ২০২৩–২৪ অর্থবছরে কোম্পানিটি মুনাফা করেছিল ১৭ কোটি ৬৪ লাখ টাকা

দেশের জুতা প্রস্তুত ও বাজারজাতকারী দেশীয় প্রতিষ্ঠান অ্যাপেক্স ফুটওয়্যারের মুনাফা কমে গেছে। এক বছরের ব্যবধানে কোম্পানিটির মুনাফা কমেছে ৪ কোটি ৯ লাখ টাকা বা ২৩ শতাংশ। গত জুনে সমাপ্ত অর্থবছরে অ্যাপেক্স ফুটওয়্যারের মুনাফা কমে দাঁড়িয়েছে ১৩ কেটি ৫৫ লাখ টাকায়। তার আগের অর্থবছরে যার পরিমাণ ছিল ১৭ কোটি ৬৪ লাখ টাকা। গত বৃহস্পতিবার কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদের সভায় গত অর্থবছরের আর্থিক প্রতিবেদন অনুমোদন করা হয়। আর্থিক প্রতিবেদনে কোম্পানিটির মুনাফা কমে যাওয়ার তথ্য তুলে ধরা হয়।

মুনাফা কমলেও লভ্যাংশের পরিমাণ বেড়েছে। গত অর্থবছরের জন্য কোম্পানিটি নগদ ও বোনাস মিলিয়ে শেয়ারধারীদের ৫০ শতাংশ লভ্যাংশ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যার মধ্যে ২৫ শতাংশ নগদ ও ২৫ শতাংশ বোনাস লভ্যাংশ। গত বৃহস্পতিবারের পর্ষদ সভায় আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা শেষে লভ্যাংশের এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ২০১৮–১৯ অর্থবছরের পর এবারই কোম্পানিটি শেয়ারধারীদের সর্বোচ্চ লভ্যাংশ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। গত তিন অর্থবছর শেষে কোম্পানিটি শেয়ারধারীদের নগদ ও বোনাস মিলিয়ে ৪৫ শতাংশ হারে লভ্যাংশ দিয়েছিল।

কোম্পানির তথ্য অনুযায়ী, কোম্পানিটি গত অর্থবছরের জন্য ২৫ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দেওয়ার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তাতে কোম্পানিটির খরচ হবে ৩৯ লাখ টাকার বেশি। এ ছাড়া প্রতি ১০০ শেয়ারের বিপরীতে কোম্পানিটির শেয়ারধারীরা পাবেন ২৫টি করে শেয়ার। সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) অ্যাপেক্স ফুটওয়্যারের প্রতিটি শেয়ারের বাজারমূল্য ছিল ২২৯ টাকা ৫০ পয়সা। সেই হিসাবে প্রতি ২৫টি শেয়ারের বাজারমূল্য দাঁড়ায় প্রায় ৫ হাজার ৭৩৭ টাকা।

ডিএসইর তথ্য অনুযায়ী, ১৯৯৩ সালে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত দেশের শীর্ষস্থানীয় জুতা প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক এই কোম্পানিটির পরিশোধিত মূলধন ১৫ কোটি ৭২ লাখ টাকা, যা ১০ টাকা অভিহিত মূল্যের ১ কোটি ৫৭ লাখ ২২ হাজার ৪৩৭ শেয়ারে বিভক্ত। এটি শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত স্বল্প মূলধনি কোম্পানিগুলোর একটি। মূলধন বাড়াতে কোম্পানিটি কয়েক বছর ধরে ধারাবাহিকভাবে শেয়ারধারীদের বোনাস লভ্যাংশ দিয়ে আসছে। ২০২২ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত প্রতিবছর কোম্পানিটি শেয়ারধারীদের ১০ শতাংশ হারে বোনাস লভ্যাংশ দিয়েছে। তাতে গত তিন বছরে কোম্পানিটির পরিশোধিত মূলধন ১০ শতাংশ হারে বেড়েছে। এবারই সর্বোচ্চ ২৫ শতাংশ বোনাস লভ্যাংশ ঘোষণা করা হয়েছে।

পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) ২০২১ সালের শেষে একটি নির্দেশনা জারি করেছিল। তাতে বলা হয়েছিল, শেয়ারবাজারের মূল বোর্ডে ৩০ কোটি টাকার কম মূলধনের কোনো কোম্পানি আর থাকতে পারবে না। ওই নির্দেশনার পর স্বল্প মূলধনি কোম্পানিগুলো বোনাস শেয়ার দিয়ে বা নতুন করে রাইট শেয়ার ইস্যুর মাধ্যমে তাদের মূলধন বাড়াচ্ছে। তারই অংশ হিসেবে অ্যাপেক্স ফুটওয়্যারও কয়েক বছর ধরে বোনাস শেয়ার ঘোষণার মাধ্যমে তাদের মূলধন বাড়াচ্ছে।

কোম্পানি–সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, গত অর্থবছর শেষে মুনাফা কমে যাওয়ার পেছনে কয়েকটি কারণ ছিল। তার মধ্যে অন্যতম হলো—গত বছরের জুলাই–আগস্টে ছাত্র–জনতার আন্দোলনে দেশজুড়ে ব্যবসা–বাণিজ্য বন্ধ থাকা, উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমে যাওয়া ও ব্যাংকের সুদহার বৃদ্ধি। গত বছরের জুলাই–আগস্টের আন্দোলনে দেশজুড়ে উত্তাল সময়ে প্রায় এক মাস অন্যান্য ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের মতো অ্যাপেক্সের বিক্রয়কেন্দ্রগুলোও বন্ধ ছিল। ওই সময়টাতে কোম্পানিটির বিক্রি শূন্যের কোটায় নেমে যায়। এ ছাড়া গত অর্থবছরের দীর্ঘ সময়জুড়ে ছিল উচ্চ মূল্যস্ফীতি। এ কারণে নিত্যপণ্যের দামে হিমশিম খাওয়া মানুষ জুতা কেনাও কমিয়ে দিয়েছিল। যার প্রভাব পড়েছে কোম্পানির ব্যবসায়। এ ছাড়া ব্যাংকঋণের সুদহার দুই অঙ্কের ওপরে চলে যাওয়ায় সুদ বাবদ খরচও বেড়েছে। সব মিলিয়ে তাই বছর শেষে কোম্পানির মুনাফা আগের বছরের চেয়ে কমে গেছে।

মুনাফা কমলেও কোম্পানির সম্পদমূল্য বেড়েছে। গত জুন শেষে কোম্পানির স্থাবর–অস্থাবর মিলিয়ে শেয়ারপ্রতি সম্পদমূল্য বা এনএভি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৩৬ টাকা ৬৮ পয়সা। আগের অর্থবছরে যার পরিমাণ ছিল ৪৩১ টাকা ২৪ পয়সা। সেই হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে শেয়ারপ্রতি সম্পদমূল্য প্রায় সাড়ে ৫ টাকা বেড়েছে।