বীকন ফার্মার মুনাফা বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ

দেশের ওষুধ খাতের কোম্পানি বীকন ফার্মার মুনাফা বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। গত জুনে শেষ হওয়া ২০২৪–২৫ অর্থবছরে কোম্পানিটির মুনাফা করেছে ৯৫ কোটি টাকা। তার আগের বছর, অর্থাৎ ২০২৩–২৪ অর্থবছরে কোম্পানিটি মুনাফা করেছিল ৫২ কোটি টাকা। সেই হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে কোম্পানিটির মুনাফা বেড়েছে ৪৩ কোটি টাকা বা প্রায় ৮৩ শতাংশ।

গতকাল বুধবার অনুষ্ঠিত কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদের সভায় গত অর্থবছরের আর্থিক হিসাব চূড়ান্ত করে মুনাফার এই হিসাব দিয়েছে কোম্পানিটি। শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি হিসেবে আজ বৃহস্পতিবার স্টক এক্সচেঞ্জের মাধ্যমে মুনাফার এই তথ্য বিনিয়োগকারীদের জানানো হয়। প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে।

এদিকে গতকালের পর্ষদ সভায় মুনাফার হিসাব চূড়ান্ত করার পাশাপাশি গত অর্থবছরের জন্য বিনিয়োগকারীদের ২১ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দেওয়ারও সিদ্ধান্ত নিয়েছে কোম্পানিটি। বীকন ফার্মার উদ্যোক্তা–পরিচালকদের বাইরে ব্যক্তিশ্রেণির সাধারণ বিনিয়োগকারী ও প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরাই শুধু এই লভ্যাংশ পাবেন। কোম্পানির উদ্যোক্তা–পরিচালকেরা এ বছর কোনো লভ্যাংশ পাবেন না বলে জানিয়েছে কোম্পানিটি।

ক্যানসারসহ বিভিন্ন রোগের ওষুধ উৎপাদন ও বাজারজাতকারী দেশীয় এই ওষুধ কোম্পানি জানিয়েছে, চলতি বছর লভ্যাংশ বাবদ তারা বিনিয়োগকারীদের মধ্যে ২৯ কোটি টাকা বিতরণ করবে, যার মধ্যে ১৮ কোটি ৫৪ লাখ টাকা পাবে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা। কারণ, গত সেপ্টেম্বর শেষে কোম্পানিটির শেয়ারের প্রায় সোয়া ৩৮ শতাংশই ছিল প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের হাতে। ওই শেয়ারের বিপরীতে লভ্যাংশবাবদ এই অর্থ পাবে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা। আর গত সেপ্টেম্বর শেষে ব্যক্তিশ্রেণির সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে ছিল কোম্পানিটির প্রায় ২২ শতাংশ শেয়ার। তার বিপরীতে এসব সাধারণ বিনিয়োগকারী ১০ কোটি ৬৪ লাখ টাকা লভ্যাংশবাবদ পাবেন।

চলতি বছর ঘোষিত লভ্যাংশের জন্য কোম্পানিটি রেকর্ড তারিখ নির্ধারণ করেছে আগামী ১৬ নভেম্বর। ওই দিন যাঁদের হাতে কোম্পানিটির শেয়ার থাকবে, তাঁরাই ঘোষিত লভ্যাংশ পাওয়ার যোগ্য বিবেচিত হবেন। ২০২৩–২৪ অর্থবছরে কোম্পানিটি সাধারণ ও প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের ২০ শতাংশ হারে লভ্যাংশ দিয়েছিল। আর উদ্যোক্তা–পরিচালকদের লভ্যাংশ দেওয়া হয়েছিল ১০ শতাংশ হারে।

সর্বশেষ ২০২৪–২৫ অর্থবছরের আর্থিক হিসাব চূড়ান্ত করা হলেও পুরো হিসাববছরে কোম্পানিটি কত টাকার ব্যবসা করেছে, তার পূর্ণাঙ্গ তথ্য এখনো প্রকাশ করেনি। বার্ষিক সাধারণ সভা বা এজিএমে এ তথ্য তুলে ধরা হবে। তবে গত অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসের আর্থিক প্রতিবেদনের তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, গত বছরের জুলাই থেকে চলতি বছরের মার্চ—এই ৯ মাসে কোম্পানিটি ৮৯৯ কোটি টাকার ব্যবসা করেছিল। তার বিপরীতে মুনাফা করেছিল সাড়ে ৮৬ কোটি টাকা। সেই হিসাবে অর্থবছরের বাকি তিন মাসে, অর্থাৎ এপ্রিল থেকে জুন—এই সময়ে কোম্পানিটি মুনাফা করেছে ১০ কোটি টাকার মতো।

এদিকে মুনাফা ও লভ্যাংশের খবরে শেয়ারবাজারে আজ বৃহস্পতিবার কোম্পানিটির শেয়ারের দাম কিছুটা বেড়েছে। ঢাকার শেয়ারবাজারে দুপুর পৌনে ১২টা পর্যন্ত কোম্পানিটির প্রতিটি শেয়ারের দাম দেড় টাকা বা প্রায় ১ দশমিক ৫ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০৯ টাকায়। এ সময় পর্যন্ত কোম্পানিটির প্রায় এক লাখ শেয়ারের হাতবদল হয়, যার বাজারমূল্য ছিল এক কোটি টাকার বেশি।

ক্যানসারের ওষুধ তৈরির জন্য ব্যাপকভাবে পরিচিত বীকন ফার্মা তাদের ব্যবসায়িক কার্যক্রম শুরু করে ২০০৬ সালে। ২০১০ সালে এটি শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হয়। ২৩১ কোটি টাকা মূলধনের এই কোম্পানি বর্তমানে শেয়ারবাজারে ভালো মৌলভিত্তির কোম্পানি হিসেবে ‘এ’ শ্রেণিভুক্ত।