স্টক এক্সচেঞ্জের মালিকানা থেকে ব্যবস্থাপনা পৃথক্করণ (ডিমিউচুয়ালাইজেশন) কর্মসূচি পুনর্মূল্যায়নের দাবি জানিয়েছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) ব্রোকারেজ হাউস মালিকদের সংগঠন ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ডিবিএ)। এই দাবি জানিয়ে গত বৃহস্পতিবার প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ও পুঁজিবাজার উন্নয়ন কমিটির চেয়ারম্যান আনিসুজ্জামান চৌধুরীর কাছে চিঠি দিয়েছে সংগঠনটি। চিঠির অনুলিপি দেওয়া হয়েছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ ও ডিএসই চেয়ারম্যান মমিনুল ইসলামকেও।
ডিবিএ সভাপতি সাইফুল ইসলাম স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়, ডিএসই ডিমিউচুয়ালাইজেশন কর্মসূচির বর্তমান নিয়মে ডিএসইর পরিচালনা পর্ষদ ১৩ সদস্যবিশিষ্ট। তাদের মধ্যে সাতজন স্বতন্ত্র পরিচালক, চারজন ডিএসই শেয়ারধারী পরিচালক, একজন কৌশলগত বিনিয়োগকারী পরিচালক ও একজন ব্যবস্থাপনা পরিচালক এক্স-অফিসিও হিসেবে মনোনীত হওয়ার বিধান রয়েছে। বিদ্যমান নিয়মে ডিএসইর পর্ষদ চেয়ারম্যান শুধু সাতজন স্বতন্ত্র পরিচালক থেকে মনোনীত করার বিধান রয়েছে। তবে এটিকে পর্ষদ গঠনের ক্ষেত্রে ভারসাম্যহীনতা বলে উল্লেখ করেছে ডিবিএ।
সংগঠনটি বলেছে, এই ভারসাম্যহীনতার কারণে অতীতে ডিএসইর চেয়ারম্যানসহ স্বতন্ত্র পরিচালকদের রাজনৈতিক বিবেচনায় নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তাদের মধ্যে অনেকেই পুঁজিবাজারের বাইরে থেকে এসেছেন। পুঁজিবাজার সম্পর্কে তাদের পর্যাপ্ত জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা না থাকায় সিদ্ধান্ত গ্রহণ বা পুঁজিবাজারের উন্নয়নে তাঁরা তেমন কোনো ভূমিকা রাখতে পারেননি। এ বিধানের ফলে মালিকানা স্বত্ববিহীন স্বতন্ত্র পরিচালকদের সংখ্যাগরিষ্ঠতার কারণে পুঁজিবাজারসহ অংশীজনদের স্বার্থের পরিপন্থী সিদ্ধান্ত নেওয়ার সুযোগ করে দিয়েছে। ফলে বাজারের শৃঙ্খলা নষ্ট হয়েছে। বিনিয়োগকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। ডিএসইর প্রাতিষ্ঠানিক ভিত্তি দুর্বল হয়েছে। এই বিধান থাকলে ভবিষ্যতে রাজনৈতিক সরকারের ক্ষেত্রেও এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি হতে পারে। এ জন্য সংশ্লিষ্ট ধারাটি (৪.১(বি)(আই)) সংশোধনের সুপারিশ করছে সংগঠনটি।
সুপারিশে ডিবিএ বলেছে, ডিএসই পরিচালনা পর্ষদ ১১ সদস্যবিশিষ্ট হবে। তাদের মধ্যে পাঁচজন স্বতন্ত্র পরিচালক, চারজন ডিএসই শেয়ারধারী পরিচালক, একজন কৌশলগত বিনিয়োগকারী পরিচালক ও একজন ব্যবস্থাপনা পরিচালক এক্স-অফিসিও হিসেবে নিযুক্ত হবেন। সে ক্ষেত্রে ‘পর্ষদ চেয়ারম্যান’ হওয়ার সুযোগ এক্স-অফিসিও পরিচালক বাদে অন্য সব পরিচালকদের জন্য উন্মুক্ত থাকবে। নতুন বোর্ড গঠনের পর প্রথম সভায় পর্ষদ চেয়ারম্যান নির্বাচিত হবেন।
ডিমিউচুয়ালাইজেশন কর্মসূচি পুনর্মূল্যায়নের পাশাপাশি আরও দুটি প্রস্তাব দিয়েছে ডিবিএ। সংগঠনটি বলেছে, ডিএসইর প্রধান নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা (সিআরও) যেন সরাসরি ব্যবস্থাপনা পরিচালককে (এমডি) রিপোর্ট করেন। বর্তমানে সিআরও শুধু রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স কমিটিকে রিপোর্ট করায় এমডি রেগুলেটরি বিষয় থেকে অনেকটাই দূরে থাকেন। এতে বাজার অংশগ্রহণকারীদের সঙ্গে তার সমন্বয়ে ঘাটতি দেখা দেয় ও আস্থার সংকট তৈরি হয়। ডিবিএ বলেছে, রেগুলেটরি বিষয়ে এমডির সক্রিয় ভূমিকা বাজারে আস্থা ফিরিয়ে আনতে সহায়ক হবে।
দ্বিতীয় সুপারিশে ডিবিএ বলেছে, ডিমিউচুয়ালাইজেশন কর্মসূচিতে থাকা নির্ধারিত ডিএসইর স্থায়ী সাংগঠনিক কাঠামো (অর্গানোগ্রাম) রহিত করা প্রয়োজন। বর্তমান কাঠামো স্টক এক্সচেঞ্জের ব্যবস্থাপনায় প্রয়োজনীয় পরিবর্তনের সুযোগ সীমিত রাখা হয়েছে। সংগঠনটি মনে করে, উক্ত সাংগঠনিক অর্গানোগ্রাম সংশোধন করার ক্ষমতা শুধু ডিএসই বোর্ডের ওপর ন্যস্ত থাকা উচিত। অর্থাৎ পরিচালনা পর্ষদ যেন প্রয়োজনে কাঠামো সংশোধনের পূর্ণ ক্ষমতা পায়, সেই ব্যবস্থা রাখার সুপারিশ করেছে ডিবিএ।