প্রস্তাবিত বাজেট নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানাতে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে সনদপ্রাপ্ত হিসাববিদদের সংগঠন আইসিএবি। আজ রাজধানীর কারওয়ানবাজারে, আইসিএবি কার্যালয়ে
প্রস্তাবিত বাজেট নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানাতে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে সনদপ্রাপ্ত হিসাববিদদের সংগঠন আইসিএবি। আজ রাজধানীর কারওয়ানবাজারে, আইসিএবি কার্যালয়ে

দুই হাজার টাকা করকে স্বাগত জানালেন সনদপ্রাপ্ত হিসাববিদেরা

কিছু সেবা পেতে নতুন অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে টিআইএনধারীদের রিটার্ন জমার ক্ষেত্রে ন্যূনতম দুই হাজার টাকা করের বিধান রাখা হয়েছে। এটি নিয়ে বিভিন্ন মহল থেকে সমালোচনা হলেও সনদপ্রাপ্ত হিসাববিদদের সংগঠন দ্য ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড অ্যাকাউনট্যান্টস অব বাংলাদেশের (আইসিএবি) নেতারা প্রস্তাবটিকে স্বাগত জানিয়েছেন।

আজ শনিবার এক সংবাদ সম্মেলনে আইসিএবির সাবেক সভাপতি হুমায়ুন কবির বলেন, ‘এই টাকা তো রাষ্ট্রীয় কোষাগারে যাবে। এ জন্য আমাদের গর্ব করা উচিত। বেতনের সঙ্গে এটার কোনো সম্পর্ক নেই। বিষয়টা করজাল বাড়ানোর জন্য একটা নিজস্ব উদ্ভাবনী উদ্যোগ।’

হুমায়ুন কবির আরও বলেন, ‘আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি যখন থেকে ই–টিআইএন চালু হয়েছে, তখন থেকেই এই দুই হাজার টাকার নিয়ম চালু করা প্রয়োজন ছিল।

রাজধানীর কারওয়ান বাজারে সিএ ভবনে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেট নিয়ে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে আইসিএবি। সেখানে প্রশ্নোত্তর পর্বে অনুষ্ঠানের সঞ্চালক হুমায়ুন কবির এসব কথা বলেন।

অনুষ্ঠানে বাজেট নিয়ে নিজেদের ভাবনা সাংবাদিকদের সমনে তুলে ধরেন আইসিএবির সভাপতি মো. মনিরুজামান। স্বাগত বক্তব্য দেন সংগঠনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) শুভাশীষ বসু। আর বাজেটের ট্যাক্স, ভ্যাট ও কাস্টমস খাতের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠান স্নেহাশীষ, মাহমুদ অ্যান্ড কোম্পানির অংশীদার স্নেহাশীষ বড়ুয়া।

আইসিএবির সাবেক সভাপতি হুমায়ুন কবির বলেন, একটা সেবা (রিটার্ন ডকুমেন্ট) কি সরকারি প্রতিষ্ঠান বিনা পয়সায় দিয়ে দেবে? তারা ই-টিআইএন চালু করল, সিস্টেম তৈরি করল, ব্যক্তির আয়কর হিসাবের ফাইল তৈরি করল—এসব সেবা কি এমনি এমনি হয়ে যাবে। আর আপনি যদি রিটার্ন জমা না দেন, তাহলে আপনার থেকে দুই হাজার টাকা নেবে কী করে?

২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাবে বলা হয়েছে, আয়কর অধ্যাদেশের ৭৫ ধারা অনুযায়ী রিটার্ন দাখিলের বাধ্যবাধকতা আছে, এমন করদাতার মোট আয় করমুক্ত সীমা অতিক্রম না করলেও আয়ের পরিমাণনির্বিশেষে ন্যূনতম করের পরিমাণ দুই হাজার টাকা হবে। বর্তমানে ৩৮ ধরনের সেবা নিতে হলে রিটার্ন জমার রসিদ লাগে। ফলে নতুন প্রস্তাব অনুসারে, এসব সেবা নিতে হলে রিটার্ন জমার জন্য ন্যূনতম দুই হাজার টাকা কর দিতে হবে।

সরকারের এমন প্রস্তাবের সমালোচনা করেছে বিভিন্ন সংগঠন। এর মধ্যে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। প্রতিষ্ঠানটি বলেছে, সরকারের এমন সিদ্ধান্ত বৈষম্যমূলক এবং নৈতিক নয়।

এ প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হলে আইসিএবির সাবেক সভাপতি হুমায়ুন কবির বলেন, ‘এ বিষয়ে প্রাতিষ্ঠানিক মতামত দেওয়ার সুযোগটা কম। তবে আমার ব্যক্তিগত মত হচ্ছে, থিঙ্কট্যাংক বা অন্য যাঁরাই এটা নিয়ে সমালোচনা করছেন, তাঁরা এই সিদ্ধান্তের গভীরতা বিশ্লেষণ করেননি।’

প্রস্তাবিত বাজেট নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানাতে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে সনদপ্রাপ্ত হিসাববিদদের সংগঠন আইসিএবি। আজ রাজধানীর কারওয়ানবাজারে, আইসিএবি কার্যালয়ে

হুমায়ুন কবির আরও বলেন, তাত্ত্বিকেরা এটা বৈষম্যমূলক বলে সমালোচনা করছেন। অথচ তাঁদের কারণেই দেশ থেকে অর্থ পাচার হয়। কোনো দেশ থেকে যখন প্রবাসী আয় বাড়ে, তখন তাঁদের গা জ্বালা করে। কারণ, তাদের কাছে ইনডেপথ কোনো স্টাডি নেই। তারা দেশের প্রতিটা ভালো বিষয় নিয়ে প্রশ্ন তোলে, বাধা দেয়।

বাজেট হলো আশাবাদের প্রতিফলন

বাজেটে প্রবৃদ্ধি ও রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য অবাস্তব কি না, সংবাদ সম্মেলনে আইসিএবির নেতাদের কাছে এমন প্রশ্ন করা হয়। এর জবাবে তাঁরা জানান, এই বাজেট হলো আশাবাদের প্রতিফলন। অতীতের ধারাবাহিকতায় এই বাজেট হয়েছে। এ জন্য সরকারের সঙ্গে আমরাও আশাবাদী। তবে আশাবাদ কতটুকু বাস্তবধর্মী, তা নিয়ে পর্যালোচনা করলে বোঝা যাবে।

আইসিএবি নেতারা বলেন, আমদানির বর্তমান অবস্থা যদি বজায় থাকে, তাহলে একটা স্বাভাবিক প্রবৃদ্ধি হবে। আর ডলার–সংকটসহ অন্যান্য পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে গেলে, তা আরও ইতিবাচক হবে। আর যদি বর্তমান চ্যালেঞ্জগুলো বিশেষ করে জ্বালানি সমস্যা যদি দীর্ঘসূত্রী হয়, তাহলে নতুন বিনিয়োগ তো দূরের কথা, বর্তমান বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানই প্রশ্নের মুখে পড়বে।

বাজেটে তাত্ত্বিকভাবে কিছু মিসিং লিংক রয়েছে বলে মন্তব্য করে আইসিএবির সাবেক সভাপতি হুমায়ুন কবির বলেন, বলা হয়েছে এটা সংযত বাজেট। তবে দেখা গেছে বার্ষিক উন্নয়ন পরিকল্পনায় (এডিপি), যেখান থেকে প্রবৃদ্ধি ও কর্মসংস্থান আসবে, বাজেট সংযত হয়েছে। কিন্তু যেখানে (পরিচালন ব্যয়ে) সংযত হওয়া উচিত ছিল, সেখানে হয়নি।

সংবাদ সম্মেলনে আইসিএবি জানায়, বাজেটে সরকার যে প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা এবং তার আলোকে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য ঠিক করেছে তার বাস্তবায়ন সম্ভাবনা নিয়ে অনেকের প্রশ্ন রয়েছে। বেসরকারি খাতে বিনিয়োগের যে উচ্চ প্রবৃদ্ধি লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে, তা অতীতে কখনো দেখা যায়নি। এ জন্যই অনেকে প্রশ্ন করেন যে তা বাস্তবভিত্তিক কি না। বাজেট প্রণয়নে যুক্তরা হয়তো ভালো উদ্দেশ্য থেকেই এটা করেছেন। তবে বছরের মাঝামাঝি সময়ে বাজেট সংশোধনের তো সুযোগ আছে।

বৈদেশিক লেনদেনের হিসাব ডলারে করার পরামর্শ

সংবাদ সম্মেলনে হুমায়ুন কবির বলেন, বাজেটে বৈদেশিক লেনদেন টাকার অঙ্কে হিসাব করা হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশের মতো তৃতীয় বিশ্বের দেশে বাজেটে বৈদেশিক লেনদেনের হিসাবে টাকার সঙ্গে সঙ্গে ফরেন কারেন্সিতে করা উচিত। অর্থাৎ বছরে কী পরিমাণ ডলার দরকার হবে, আর কোন উৎস থেকে এই ডলার আসবে, তার যথাযথ বিবরণ বাজেটে থাকা প্রয়োজন। তাহলে বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ বাড়াতে কী করণীয়, তা ভালোভাবে বোঝা যেত।

আইসিএবি সভাপতি মো. মনিরুজ্জামান বলেন, ডকুমেন্ট ভেরিফিকেশন সিস্টেম বা ডিভিএস বাস্তবায়ন হলে রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) আর্থিক খাতের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি বাড়বে। একই সঙ্গে তা কর সংস্কার, কর-জিডিপির উন্নতি ও রাজস্ব আহরণ বৃদ্ধিতে অবদান রাখবে।

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন আইসিএবির সহসভাপতি মো. ইয়াসিন মিয়া, এম বি এম লুৎফুল হাদী, কাউন্সিল সদস্য মোহাম্মদ ফোরকান উদ্দীন, মারিয়া হাওলাদার, প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা মাহবুব আহমেদ ছিদ্দিকী, জ্যেষ্ঠ উপপরিচালক মোমেনা হোসেন প্রমুখ।