
বিশ্বে প্রথম রঙিন ছবি তোলা হয় ১৮৯০ সালের দিকে। তবে বাংলাদেশে প্রথম রঙিন ছবি প্রিন্ট শুরু হয় ১৯৭৯ সালে। সেটি ঢাকার এলিফ্যান্ট রোডে ফুজি কালার ল্যাব ও স্টুডিওর হাত ধরে। এরপর সারা দেশে কার্যক্রম বিস্তৃত করে প্রতিষ্ঠানটি। তাদের দেখাদেখি অন্যরাও রঙিন ছবির ল্যাব করার উদ্যোগ নেয়। এভাবে সারা দেশে ছড়িয়ে যায় রঙিন ছবির স্টুডিও।
ফুজি কালার ল্যাবের কার্যক্রম নিয়ে সম্প্রতি কথা হয় প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইজাহার খান ইমরানের সঙ্গে। তিনি জানান, স্বাধীনতার আগে থেকেই দেশে ফটোগ্রাফির বেশ কদর ছিল। তখন মূলত সাদাকালো ছবিই তোলা হতো। তবে ১৯৭১ সালের পরে তা নতুন মাত্রা পায়। সদ্য স্বাধীন দেশে সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন প্রয়োজনে ছবির চাহিদা বাড়তে থাকে।
ইজাহার খান আরও জানান, ১৯৭২ সালের দিকে দেশে প্রথম রঙিন ছবির প্রচলন শুরু হয়। সে সময় দেশে ছবি তুলে তা প্রিন্ট করে আনা হতো জাপান, হংকং, ব্যাংকক, ভারত ও সিঙ্গাপুর ইত্যাদি দেশ থেকে। এতে একদিকে যেমন বেশি সময় লাগত, অন্যদিকে খরচও ছিল অনেক বেশি।
এমন এক পরিস্থিতিতে দেশে কালার ল্যাব স্থাপনে ইজাহার খানের বড় ভাই খান মো. আমির জাপানের ফুজি কোম্পানির সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তারই ধারাবাহিকতায় ১৯৭৯ সালের ১০ নভেম্বর প্রায় ১ কোটি টাকা বিনিয়োগে রাজধানীর এলিফ্যান্ট রোডের আল্পনা প্লাজার পাশের একটি ভবনে স্থাপন করা হয় দেশের প্রথম রঙিন ছবির স্টুডিও। ইমরান জানান, শুরুতে জাপান থেকে ফুজির কর্মীরা নিয়মিত এসে বিভিন্ন বিষয় শিখিয়ে দিয়ে যেতেন। তাঁদের কাছ থেকে আমাদের কর্মীরা শিখে পরে দেশের অন্য অনেক স্টুডিওর কর্মীদের প্রশিক্ষণ দিতেন।
রঙিন ছবি প্রিন্ট শুরুর অল্প কিছুদিনের মধ্যেই ব্যাপক সাড়া পায় প্রতিষ্ঠানটি। তাই স্টুডিওর মধ্যে ড্রেসিংরুম স্থাপনসহ বিভিন্ন আধুনিকায়ন করা হয়, তাতে চাহিদা আরও বাড়তে থাকে। ১৯৮৩ সালের মধ্যে মালিবাগ ও চট্টগ্রামে আরও দুটি শাখা খোলে ফুজি।
পর্যায়ক্রমে সারা দেশে ১১২টি নিজস্ব স্টুডিও ল্যাব স্থাপন করা হয়। আধুনিকায়নের ফলে ছবি প্রিন্টের জন্য আর বিদেশ যাওয়ার দরকার হতো না, দেশেই শুরু হলো রঙিন ছবি প্রিন্ট।
ফুজির সাফল্য দেখে আরও কিছু বিদেশি কোম্পানিও তখন তাদের কার্যক্রম শুরু করে। এর মধ্যে জাপানের কনিকা, যুক্তরাষ্ট্রের কোডাক ও জার্মানির আগফা কোম্পানি অন্যতম। তারাও প্রতিনিধির মাধ্যমে এ দেশে কালার ল্যাব ও ফিল্ম বিক্রির কার্যক্রম শুরু করে। একপর্যায়ে দেশে কনিকার প্রায় ৪০টি, কোডাকের ২৫ ও আগফার ১২টির মতো স্টুডিও ল্যাব কার্যক্রম শুরু করে।
ফুজির স্টুডিও ব্যবসার সেই রমরমা অবস্থা এখন আর নেই। বর্তমানে ফুজি ছাড়া দেশে আর অন্য কোনো কোম্পানির কার্যক্রম নেই। আর চাহিদা কমে যাওয়ায় এখন সারা দেশে ফুজির স্টুডিওর সংখ্যাও কমে মাত্র ৩২টিতে নেমে এসেছে।
ইজাহার খান বলেন, একটা সময় এ ব্যবসা খুবই রমরমা ছিল। প্রতিটি ল্যাব সকাল থেকে রাত ১২টা–১টা পর্যন্ত খোলা রাখতে হতো। বিশেষ করে জন্মদিন, ভ্রমণ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও সরকারি অনুষ্ঠানের ছবি তোলা ও প্রিন্টের চাহিদা ছিল অনেক। এখন মানুষের হাতে হাতে ক্যামেরা, তাই স্টুডিওর আবেদন কমে গেছে।