Thank you for trying Sticky AMP!!

বিকাশ-রকেট-নগদে লেনদেন আবারও এক লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে

হাতের মুঠোয় থাকা মোবাইল দিয়ে লেনদেন আবারও এক মাসে এক লাখ কোটি টাকা বা এক ট্রিলিয়ন টাকা ছাড়িয়েছে। এসব লেনদেনে অনেক সময় কারও সহায়তা প্রয়োজন হচ্ছে না। গ্রাহক নিজেই অ্যাকাউন্টে টাকা জমা করে কেনাকাটা করতে পারছেন। মোবাইল রিচার্জ, বিল পরিশোধ, টিকিট কেনা, পরিষেবা বিলসহ আরও সুবিধা তো রয়েছেই।

সব মিলিয়ে বিকাশ, রকেট, নগদের মতো মোবাইলে আর্থিক সেবা (এমএফএস) বাংলাদেশের সাধারণ মানুষকে এনে দিয়েছে আর্থিক স্বাধীনতা।

Also Read: সহজ উপায় হুন্ডি, সম্ভাবনা এমএফএসে 

বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান বলছে, গত জানুয়ারিতে এসব সেবায় লেনদেন হয়েছে ১ লাখ ৫৯৩ কোটি টাকা। ডিসেম্বরে লেনদেন ছিল ৯৬ হাজার ১৩২ কোটি টাকা। ফলে দিনে দিনে এসব সেবার ব্যবহার বাড়ছে, যা আনুষ্ঠানিক লেনদেনের আকারকে আরও বড় করছে। এর আগে গত বছরের এপ্রিলে এসব সেবায় লেনদেন প্রথম বারের মতো এক লাখ ৭ হাজার ৪৬০ কোটি টাকা ছাড়িয়েছিল।

খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আনুষ্ঠানিক মাধ্যমের কারণে এসব লেনদেনের হিসাব থাকছে। কে কাকে, কখন কত টাকা টাকা দিয়েছে, তার তথ্য জমা থাকছে। ফলে দিনে দিনে অবৈধ অর্থায়ন কিংবা ঘুষের মতো অপরাধ কমাতে এসব সেবা বড় মাধ্যম হয়ে উঠতে পারে।

এমএফএস–সেবায় শীর্ষে রয়েছে বিকাশ। বিকাশের নিবন্ধিত গ্রাহক ৬ কোটি ৭৫ লাখ। তাদের দিনে লেনদেন কমবেশি দুই হাজার কোটি টাকা। প্রতিষ্ঠানটির করপোরেট কমিউনিকেশন বিভাগের প্রধান শামসুদ্দিন হায়দার ডালিম বলেন, দেশের মানুষের মধ্যে মোবাইল লেনদেনের অভ্যস্ততা তৈরি হচ্ছে এবং আস্থা বাড়ছে। কার্যকরী ইকোসিস্টেম তৈরির মাধ্যমে মোবাইল লেনদেনের পরিসর আরও বেশি শক্তিশালী ও সমৃদ্ধ করতে নিরন্তর কাজ করে যাচ্ছে বিকাশ।

Also Read: বিকাশে সঞ্চয় করা যাবে ঢাকা ব্যাংক ও এমটিবিতে

প্রথম আলোকে তিনি বলেন, মোবাইলে আর্থিক সেবায় একটা সময় পর্যন্ত কেবল টাকা পাঠানো, উত্তোলন বা মোবাইল রিচার্জের মতো কার্যক্রম চালু ছিল। এখন ন্যানো লোন, মাসিক সঞ্চয় সেবা, পরিষেবা বিল পরিশোধ, সব ধরনের টিকিট কেনা, অনলাইন, অফলাইনসহ সব ধরনের লেনদেন মুহূর্তেই করার সুযোগ দিচ্ছে বিকাশ, যা মানুষের প্রতিদিনের জীবনের অংশে পরিণত করেছে।

লাখ কোটি টাকার লেনদেন

গত জানুয়ারিতে এমএফএস–সেবায় সব মিলিয়ে গ্রাহকের সংখ্যা হয়েছে ১৯ কোটি ৪১ লাখ ২৫ হাজার ১৩৭। তবে সক্রিয় গ্রাহক ৬ কোটির কম। একজন ব্যক্তি একাধিক সেবা ব্যবহার করতে পারেন, তাই প্রকৃত হিসাবধারী ঠিক কত জন, তা জানা যায়নি। গ্রাহক সেবা দিতে সারা দেশে এজেন্ট রয়েছে ১৫ লাখ ৬৯ হাজার ১১২টি। অবশ্য একটি এজেন্ট একাধিক সেবাদাতার সেবা দিচ্ছে।

Also Read: রেকর্ড লেনদেন ‘নগদে’

গত জানুয়ারিতে ১ লাখ ৫৯৩ কোটি টাকা লেনদেনের মধ্যে টাকা জমা ও উত্তোলন হয়েছে যথাক্রমে ৩১ হাজার ২৬০ কোটি টাকা ও ২৮ হাজার ৬৮৮ কোটি টাকা। একজন গ্রাহক অপর গ্রাহককে পাঠিয়েছেন ২৮ হাজার ৮৯৯ কোটি টাকা। কেনাকাটায় খরচ হয়েছে ৩ হাজার ৭৭২ কোটি টাকা, সরকারি ভাতা দেওয়া হয়েছে ১ হাজার ১৪৪ কোটি টাকা, বেতন-ভাতা দেওয়া হয়েছে ২ হাজার ৮৪৯ কোটি টাকা। এ ছাড়া মোবাইল রিচার্জ করা হয়েছে ৯০৫ কোটি টাকা ও পরিষেবা বিল দেওয়া হয়েছে ১ হাজার ৯৬১ কোটি টাকা।

গ্রাহকদের শুধু টাকা উত্তোলনের জন্য বাড়তি মাশুল গুনতে হয়, ফলে যে লেনদেন হয়েছে তার ২৮ শতাংশের জন্য ব্যবহারকারীকে বাড়তি খরচ করতে হয়েছে। আরও ২৯ শতাংশ অর্থ একে অপরকে পাঠাতে অল্প কিছু খরচ গুনতে হয়েছে।

এই সেবায় দ্বিতীয় অবস্থানে আছে নগদ। নগদের মাধ্যমে দৈনিক লেনদেন হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। নিবন্ধিত গ্রাহকসংখ্যা গত সপ্তাহ পর্যন্ত প্রায় সাড়ে সাত কোটি বলে জানান প্রতিষ্ঠানটির যোগাযোগ বিভাগের প্রধান জাহিদুল ইসলাম। তিনি জানান, সম্প্রতি তাঁরা গ্রাহকদের থেকে ভালো সাড়া পাচ্ছেন।

Also Read: এমএফএসে বাড়তি করে কমতে পারে বিনিয়োগ

প্রথম আলোকে তিনি বলেন, নগদ পেমেন্টে কেনাকাটায় কোটি টাকার বিএমডব্লিউ গাড়ির অফারের বাইরেও সহজেই এবং কম খরচে বিদেশ থেকে রেমিট্যান্স আনার সেবা চালু হয়েছে। ফলে সেবার আওতা বেড়েছে। এর বাইরে সরকারের ভাতা, উপবৃত্তি ও আর্থিক সহায়তার সিংহ ভাগ স্বচ্ছতার সঙ্গে নগদই বিতরণ করে।

সেবাটি শহরেও জনপ্রিয়

এই সেবাটি প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে লক্ষ্য করে চালু হলেও এখন শহরে বসবাসকারী নাগরিকেরাও এর বড় ব্যবহারকারী। ব্যবহার বাড়ার পাশাপাশি এই সেবা এখন শুধু টাকা পাঠানো ও গ্রহণের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। বিল পরিশোধ, কেনাকাটা, মোবাইল রিচার্জ, টাকা জমানো, ঋণ গ্রহণসহ নানা ধরনের লেনদেন করা যাচ্ছে। এর ফলে ব্যবহার বাড়ছেই। আবার উৎসব-পার্বণে এসব সেবার ব্যবহার বেড়ে যায় ১০ থেকে ১৫ শতাংশ পর্যন্ত।

এদিকে এমএফএস চালুর ফলে শুধু কম আয়ের মানুষের সুবিধা হয়েছে, বিষয়টি তেমন নয়। বড় করপোরেট ও বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান এবং শিল্পমালিকেরাও এর সুবিধা পেয়েছেন। এখন দেশের সব বড় ভোগ্যপণ্য প্রতিষ্ঠান তাদের পণ্য বিক্রির টাকা এ সেবার মাধ্যমে সংগ্রহ করছে, যাকে কালেকশন সেবা বলছে এমএফএস প্রতিষ্ঠানগুলো। আবার অনেক বড় শিল্প গ্রুপ তাদের শ্রমিকের বেতনও দিচ্ছে এমএফএসের মাধ্যমে।

শুধু তা-ই নয়, সরকারি ভাতা, বৃত্তি, কেনাকাটা, পরিষেবা বিল পরিশোধ—সবই করা যাচ্ছে। আবার ক্ষুদ্রঋণ বিতরণ ও আদায় এবং বিদেশি সংস্থার তহবিল বিতরণও হচ্ছে এসব সেবার মাধ্যমে।

Also Read: ‘কৃত্রিম শেয়ারবাজার’ কার ও কী কাজে লাগছে

বাংলাদেশ ব্যাংক অনুমোদিত ও ডাক বিভাগের সেবা নগদ মিলে দেশে এখন এমএফএস প্রতিষ্ঠান রয়েছে ১৩টি। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো বিকাশ, নগদ, রকেট, উপায়, এমক্যাশ, মাইক্যাশ, ট্যাপ।

বাংলাদেশে মোবাইলের মাধ্যমে আর্থিক সেবার যাত্রা শুরু হয় ২০১১ সালের মার্চে। বেসরকারি খাতের ডাচ্-বাংলা ব্যাংক প্রথম এ সেবা চালু করে। পরে এটির নাম বদলে হয় রকেট। এরপর ব্র্যাক ব্যাংকের সহযোগী প্রতিষ্ঠান হিসেবে এমএফএস–সেবা চালু করে বিকাশ।

বিগত কয়েক বছরে অনেক প্রতিষ্ঠান এ সেবায় যুক্ত হলেও এখনো সেবা মাশুল অনেক বেশি বলে অভিযোগ গ্রাহকদের। বর্তমানে ১ হাজার টাকা তুলতে একজন গ্রাহককে খরচ করতে হয় সর্বোচ্চ সাড়ে ১৮ টাকা। যদিও অনেকে নানা অফার দিয়ে ও একটি নির্দিষ্ট সীমা পর্যন্ত কম খরচে উত্তোলন সুবিধাও দিচ্ছে।

Also Read: একজন প্রকৌশলীর ব্যবসায়ী হওয়ার গল্প