Thank you for trying Sticky AMP!!

১৪ প্রতিষ্ঠান কোনো টাকা ফেরত দেয়নি

২৭ ই–কমার্স প্রতিষ্ঠানে আটকা ছিল ৫২৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে ১৩টি প্রতিষ্ঠান আংশিক টাকা ফেরত দিয়েছে।

প্রতীকী ছবি

প্রতারণার দায়ে অভিযুক্ত ২৭ ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের কাছে গ্রাহকদের পাওনা ছিল ৫২৫ কোটি টাকা। তার মধ্য থেকে গ্রাহকেরা ফেরত পেয়েছেন ২৮৫ কোটি টাকা। বাকি ২৪০ কোটি টাকা এখনো ফেরত পাননি গ্রাহকেরা। এ হিসাব ২০২১ সালের ৩০ জুনের পরের। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ই–কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছ থেকে পাওনাসংক্রান্ত হালনাগাদ এ চিত্র পাওয়া গেছে।

তবে ২০২১ সালের ৩০ জুনের আগের প্রতারিত কোনো গ্রাহকের দায়িত্ব সরকার নিতে চাইছে না। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ২৭টি ই–কমার্স প্রতিষ্ঠানে আটকে থাকা গ্রাহকের টাকা জমা রয়েছে পাঁচ লেনদেন পরিশোধকারী প্রতিষ্ঠানে (পেমেন্ট গেটওয়ে)। পেমেন্ট গেটওয়েগুলো হচ্ছে বিকাশ, নগদ, সফটওয়্যার শপ লিমিটেড (এসএসএল), সূর্যমুখী লিমিটেড এবং ফস্টার করপোরেশন।

আটকে থাকা টাকা গ্রাহকদের ফেরত দেওয়া যাবে কি না, সে ব্যাপারে আইন মন্ত্রণালয় থেকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা (ভেটিং) করায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। আবার বাংলাদেশ ব্যাংকেরও অনাপত্তি নেয়। দুই জায়গা থেকে সম্মতি পাওয়ার পরই টাকা ফেরত দেওয়ার উদ্যোগটি নেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ৫২৫ কোটি টাকার মধ্যে ১৪টি প্রতিষ্ঠান গ্রাহকদের কোনো টাকাই ফেরত দেয়নি। ১৩টি ফেরত দিয়েছে আংশিক টাকা। ফেরত না দেওয়া প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে ইভ্যালি, সিরাজগঞ্জ শপ, নিডস, টোয়েন্টিফোর টিকেটি, ই–অরেঞ্জ, উইকুম, আকাশ নীল, আলাদীনের প্রদীপ, আমার বাজার, আস্থার প্রতীক, বাড়ির দোকান ডটকম, নিরাপদ এবং ইনফিনিটি মার্কেটিং লিমিটেড।

এ পর্যন্ত ১৩ ই–কমার্স প্রতিষ্ঠান থেকে টাকা ফেরত পাওয়া গ্রাহকের সংখ্যা ২৫ হাজারের বেশি। আরও প্রায় ২৫ হাজার গ্রাহক টাকা ফেরত পাওয়ার অপেক্ষায় আছেন। তবে কবে নাগাদ সবাই পুরো টাকা ফেরত পাবেন, তা অবশ্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সুনির্দিষ্ট করে বলতে পারছে না। গ্রাহকদের টাকা ফেরত দেওয়ার প্রক্রিয়ার সমন্বয়কের দায়িত্বে রয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কেন্দ্রীয় ডিজিটাল কমার্স সেল।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ডিজিটাল কমার্স সেলের প্রধান মো. হাফিজুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, টাকা ফেরত চলমান প্রক্রিয়া। যেসব প্রতিষ্ঠান মামলায় জড়ানো এবং গত বছরের ৩০ জুনের আগে যাদের টাকা আটকে গেছে, সেগুলোর ব্যাপারে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কিছু করার বাস্তবতা নেই।

কোন গেটওয়েতে কত আটকা

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ই–কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলো পেমেন্ট গেটওয়ে হিসেবে বেশি বেছে নেয় মুঠোফোনে আর্থিক সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান নগদ ও সফটওয়্যার শপ লিমিটেডকে (এসএসএল)। তবে পরিমাণের দিক থেকে সবচেয়ে বেশি টাকা আটকে ছিল ফস্টার করপোরেশনে। প্রতিষ্ঠানটিতে আটকে থাকা অর্থের পরিমাণ ৩৮২ কোটি টাকা। এ ছাড়া নগদে ২০ কোটি ৬৯ লাখ এবং এসএসএলে ৮৯ কোটি ৬৯ লাখ টাকা আটকে ছিল। এ ছাড়া সূর্যমুখী লিমিটেডে ২৬ কোটি ২১ লাখ এবং বিকাশে ৪ কোটি ৯২ লাখ টাকা আটকে ছিল।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বলছে, ইভ্যালিতে আটকে থাকা গ্রাহকদের ২৬ কোটি টাকার মধ্যে বিকাশে প্রায় ৫ কোটি, নগদে ১৮ কোটি ও এসএসএলে ৩ কোটি রয়েছে। আর এসএসএলে আটকে আছে ই–অরেঞ্জের গ্রাহকদের ৩৪ কোটি ৫৪ লাখ টাকা।

এ বিষয়ে পেমেন্ট গেটওয়ে প্রতিষ্ঠান বিকাশের যোগাযোগ বিভাগের প্রধান শামসুদ্দিন হায়দারের সঙ্গে মুঠোফোনে কথা হয় গতকাল শনিবার। তিনি বলেন, ‘কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা পেলেই আমরা এ টাকা ছাড় করে দেব। এখানে আমাদের সিদ্ধান্তের কোনো জায়গা নেই।’ সন্দেহজনক কর্মকাণ্ড থাকায় বিকাশের পক্ষ থেকেই প্রথম ইভ্যালির সঙ্গে লেনদেনে নিষেধাজ্ঞা আনা হয় এবং এ কারণেই বিকাশে আটকে থাকা টাকার পরিমাণ অন্যদের তুলনায় কম বলে জানান তিনি।

ব্যবসায় আসছে ইভ্যালি ও কিউকম

কিউকম গত বুধবার এক বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, গত ১০ জানুয়ারি থেকে ১২ অক্টোবর পর্যন্ত তারা গ্রাহকদের ২২৪ কোটি ২৩ লাখ টাকা ফেরত দিয়েছে। আরও ৭ কোটি ৬৩ লাখ টাকা পরিশোধের জন্য প্রক্রিয়াধীন। তিন মাসের মধ্যে সবার টাকা ফেরত দেওয়ার প্রস্তুতি নিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।

বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, নতুন উদ্যমে সুপার অ্যাপের মাধ্যমে ব্যবসায়িক কার্যক্রম শুরু করেছে প্রতিষ্ঠানটি। মার্কেটপ্লেসের পাশাপাশি অনলাইনে দ্রুত খাবার সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান কিউফুড, গ্রোসারি শপ কিউমার্ট এবং লজিস্টিক ও পার্সেল ডেলিভারি প্রতিষ্ঠান পিকমি এক্সপ্রেস নিয়েও কাজ করছে কিউকম। ফ্যাশন, ওষুধসহ আরও কিছু সেবা চালু করবে প্রতিষ্ঠানটি।

এদিকে ৮ অক্টোবর এক ভার্চ্যুয়াল সংবাদ সম্মেলনে ইভ্যালির ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনা নিয়ে কথা বলেন কোম্পানিটির সহপ্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিন। কারাগার থেকে জামিনে বের হয়ে তিনি ইভ্যালি পরিচালনার দায়িত্ব নিয়েছেন।

সংবাদ সম্মেলনে শামীমা নাসরিন জানান, গ্রাহকের টাকা ফেরত দিতে এক বছর নিরবচ্ছিন্ন ব্যবসা করতে চান। তিনি আশাবাদী যে এক বছর ব্যবসা করতে পারলে বিনিয়োগ পাবেন এবং তা থেকে সব দেনা পরিশোধ করা সম্ভব। ২৮ অক্টোবর থেকে নতুন ক্যাম্পেইন শুরু করবেন বলেও জানান তিনি।

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও ই–কমার্সবিষয়ক গবেষক সুবর্ণ বড়ুয়া বলেন, ‘টাকা ফেরত দেওয়া এবং নতুন করে ব্যবসায় ফিরে আসাকে আমি স্বাগত জানাচ্ছি। আগে থেকেই বলে আসছিলাম যে ব্যবসা করার সুযোগ তারা পেতে পারে। তবে আইনকানুন মেনে চলতে হবে।’