বড় পদে নিয়োগ দেওয়া হবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক কোম্পানি ওপেনএআইতে। বেতনের পরিমাণ শুনলে অনেকের হয়তো চোখ কপালে উঠতে পারে। তবে এমনি এমনি বেতন দেওয়া হবে না। খাটতেও হবে সেভাবে। সেই সঙ্গে থাকতে হবে বুদ্ধিমত্তা।
ওপেন এআইয়ের কর্তা স্যাম অল্টম্যান জানিয়েছেন, রীতিমতো সুপারম্যান বা অতিমানব হতে হবে এই পদে কাজ করতে হলে। বেতন বার্ষিক ৫ লাখ ৫৫ হাজার ডলার (৬ কোটি ৭৭ লাখ ১০ হাজার টাকা (১ ডলার সমান ১২২ টাকা ধরলে)। সেই সঙ্গে পদধারী প্রত্যাশা পূরণ করতে পারলে কিছু ইকুইটি শেয়ারও দেওয়া হবে তাঁকে।
নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে ওপেনএআই জানিয়েছে, তাদের তৈরি কৃত্রিম মেধাপ্রযুক্তির সুরক্ষাব্যবস্থা দেখাশোনা করার জন্য যোগ্য মানুষ প্রয়োজন। কোম্পানির ‘সেফটি সিস্টেম’ বা নিরাপত্তাব্যবস্থা বিভাগে কাজ করতে হবে তাঁকে। ‘হেড অব প্রিপেয়ার্ডনেস’ পদে নিয়োগ দেওয়া হবে সেই ব্যক্তিকে। এআই মডেলের সুরক্ষা নিশ্চিত করার পাশাপাশি তা কীভাবে আরও উন্নত এবং বিকশিত করা যায়, সেই দায়িত্বও বর্তাবে তাঁর কাঁধে। ওপেনএআইয়ের সবচেয়ে সক্ষম কৃত্রিম মেধার মডেলগুলোর মূল্যায়ন এবং সুরক্ষাকাঠামো তৈরির পাশাপাশি সেগুলোকে আধুনিক বা যুগোপযোগী করে গড়ে তুলতে হবে তাঁকে।
ওপেনএআই জানিয়েছে, চ্যাটজিপিটি বানিয়েই ক্ষান্ত দিচ্ছে না তারা। একাধিক প্রজন্মের আরও অত্যাধুনিক এআই মডেল তৈরির জন্য বিপুল বিনিয়োগ করেছে তারা। যদিও সেগুলো ‘সুরক্ষাব্যবস্থা’ নিশ্চিত করা মোটেও সহজ নয়।
কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, সংশ্লিষ্ট প্রযুক্তি তৈরির সময় তথ্য ফাঁসের আশঙ্কা থাকে। এ আশঙ্কা দিন দিন আরও বাড়ছে। সেটি হলে প্রতিদ্বন্দ্বী কোম্পানি একই ধরনের এআই মডেল এনে বাজার দখল করতে পারে। তাই এ ধরনের জটিল সুরক্ষাব্যবস্থায় সবচেয়ে বেশি অগ্রাধিকার দিচ্ছে এই মহিরুহ প্রযুক্তি কোম্পানি।
সংবাদে বলা হয়েছে, এ কাজ প্রায় অসম্ভবের কাছাকাছি। কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, এআই ক্রমেই মানুষের মানসিক স্বাস্থ্য, সাইবার নিরাপত্তার জন্য হুমকি হয়ে উঠছে। এ বাস্তবতায় দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার হুমকি সামলাতে হবে।
এই পদে যিনি আসবেন, তিনি দায়িত্ব নেওয়ার আগেই আরেকটি বড় উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, খুব শিগগির এআই নিজেই নিজেকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার পর্যায়ে পৌঁছাতে পারে এবং একসময় ‘মানুষের বিরুদ্ধেও দাঁড়াতে পারে’।
সান ফ্রান্সিসকোভিত্তিক ওপেনএআইয়ের প্রধান নির্বাহী স্যাম অল্টম্যান বলেন, এ দায়িত্বের চাপ অনেক। শুরু থেকেই সেই ব্যক্তিকে গভীর ঝুঁকির মধ্যে কাজ করতে হবে। তিনি আরও বলেন, বিশ্ব সম্প্রদায়কে সহায়তা করার লক্ষ্যেই এই ‘অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ’ পদে নিয়োগ দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
এআই শিল্পের ভেতর থেকেই এ নিয়ে সতর্কবার্তা দেওয়া হচ্ছে। এ শিল্প নিজেই প্রযুক্তির ঝুঁকি নিয়ে উদ্বিগ্ন হচ্ছে। সোমবার মাইক্রোসফট এআইয়ের প্রধান নির্বাহী মুস্তাফা সুলায়মান বিবিসি রেডিও ফোরের টুডে অনুষ্ঠানে বলেন, ‘এ মুহূর্তে আপনি যদি এআই নিয়ে একটু হলেও ভয় না পান, তাহলে বলতে হয়, আপনি বিষয়টির দিকে মনোযোগই দিচ্ছেন না।’
এ মাসেই গুগল ডিপমাইন্ডের সহপ্রতিষ্ঠাতা ও নোবেলজয়ী ডেমিস হাসাবিস সতর্ক করে বলেন, এআই এমনভাবে ‘লাইনচ্যুত’ হতে পারে যে তা মানবতার জন্য ক্ষতিকর হয়ে উঠবে।
ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের বিরোধিতার কারণে জাতীয় বা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এআই নিয়ন্ত্রণে কার্যকর কাঠামো গড়ে ওঠেনি। এআইয়ের ‘গডফাদার’ হিসেবে পরিচিত কম্পিউটারবিজ্ঞানী যোশুয়া বেঞ্জিও সম্প্রতি মন্তব্য করেন, স্যান্ডউইচের জন্য যত নিয়মকানুন আছে, এআইয়ের জন্য যে নীতিমালা এখন আছে, সেটি তার চেয়েও কম। ফলে বাস্তবে এআই কোম্পানিগুলোকে অনেকটা আত্মনিয়ন্ত্রণের পথে যেতে হচ্ছে।