
সরকারি চাকরির নিয়োগপ্রক্রিয়ায় বড় পরিবর্তন এনেছে সরকার। একই ক্যাডার বা সার্ভিসে আগে নির্বাচিত কিংবা কর্মরত কোনো প্রার্থীকে ভবিষ্যতের বিসিএস পরীক্ষায় পুনরায় ওই একই ক্যাডারে সুপারিশ না করার বিধান যুক্ত করা হয়েছে। এ জন্য সংশোধন করা হয়েছে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (বয়স, যোগ্যতা ও সরাসরি নিয়োগের জন্য পরীক্ষা) বিধিমালা, ২০১৪।
আজ মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) প্রকাশিত সরকারি গেজেটে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এই সংশোধনী প্রজ্ঞাপন জারি করে। এতে বলা হয়, সরকার সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮-এর ৫৯ ধারা অনুযায়ী এবং সংবিধানের ১৪০(২) অনুচ্ছেদ অনুসারে বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) পরামর্শক্রমে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। প্রজ্ঞাপনটি তাৎক্ষণিকভাবে কার্যকর হবে।
এই সংশোধনের ফলে ৪৪তম বিসিএস নিয়োগ জটিলতা দ্রুততম সময়ের মধ্যে সমাধান হবে। পিএসসি জানিয়েছে, বিধি সংশোধন হওয়ায় দ্রুতই ৪৪তম বিসিএসের সংশোধিত ফলাফল প্রকাশ করা হবে।
কী পরিবর্তন হলো বিধিতে
২০১৪ সালের বিধিমালার বিধি ১৭ পুরোপুরি প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। নতুন বিধিতে বলা হয়েছে, পিএসসি এখন থেকে কৃতকার্য প্রার্থীদের মধ্য থেকে উপযুক্ত প্রার্থী বাছাই করে সরকারের কাছে সুপারিশ করবে। তবে চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশের আগে কমিশনের কাছে যদি প্রতীয়মান হয় যে—
১. কোনো প্রার্থী একই সার্ভিস বা ক্যাডারে ইতিমধ্যে কর্মরত, অথবা
২. পূর্ববর্তী কোনো বিসিএস পরীক্ষায় একই সার্ভিস বা ক্যাডারে নির্বাচিত হয়েও যোগদান করেননি, অথবা
৩. একই সার্ভিসে পুনরায় মনোনয়ন পেতে আগ্রহী নন বলে অনিচ্ছা প্রকাশ করেছেন,
তাহলে কমিশন সেই প্রার্থীকে বাদ দিতে পারবে বা সুপারিশ থেকে বিরত থাকতে পারবে। অর্থাৎ একজন প্রার্থী যদি পূর্ববর্তী বিসিএস পরীক্ষায় কোনো নির্দিষ্ট ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হন, তবে তিনি একই ক্যাডারে পুনরায় নির্বাচিত হওয়ার সুযোগ পাবেন না।
প্রজ্ঞাপনে নতুনভাবে যুক্ত করা উপধারায় পিএসসিকে আরও একটি ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। যদি কোনো প্রার্থীকে সুপারিশ করা থেকে বিরত থাকার কারণে শূন্য পদ তৈরি হয়, তবে কমিশন সম্পূরক ফলাফল প্রকাশ করতে পারবে। এতে নতুন করে উত্তীর্ণ প্রার্থীদের মধ্য থেকে মেধাক্রম ও পছন্দক্রম অনুযায়ী সুপারিশ করা যাবে। তবে এ কারণে আগের ঘোষিত ফলাফলে কোনো প্রার্থীর মেধাক্রম বা পছন্দক্রম ক্ষতিগ্রস্ত হবে না।
কেন এই পরিবর্তন গুরুত্বপূর্ণ
পিএসসি–সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, অনেক প্রার্থী একই বিসিএস পরীক্ষায় একাধিকবার একই ক্যাডারের জন্য আবেদন করতেন। কেউ কেউ আগে নির্বাচিত হয়েও যোগদান না করে আবারও পরীক্ষা দিতেন। এতে অনেক আসন দীর্ঘদিন খালি থেকে যেত এবং নতুন প্রার্থীরা সুযোগ থেকে বঞ্চিত হতেন।
৪৪তম বিসিএসের নিয়োগ জটিলতা কাটছে দ্রুত
বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি) ৪৪তম বিসিএসের চূড়ান্ত ফল চলতি বছরের ৩০ জুন প্রকাশ করে। ১ হাজার ৭১০টি শূন্য পদের বিপরীতে সুপারিশ করা হয় ১ হাজার ৬৯০ জনকে। তবে তাঁদের মধ্যে ৩৭২ জন আগেই একই বা সমতুল্য ক্যাডারে নিয়োগপ্রাপ্ত ছিলেন (রিপিট ক্যাডার)।এ বিষয়ে সংবাদ প্রকাশ, সমালোচনা ও বিতর্কের পর পিএসসি বিধি সংশোধনের সিদ্ধান্ত নেয়, যাতে রিপিট ক্যাডারের জায়গায় মেধাক্রম অনুযায়ী পরবর্তী প্রার্থীদের সুপারিশ করা যায়। কিন্তু বিধি সংশোধনের প্রশাসনিক জটিলতায় ৪৪তম বিসিএসের নিয়োগপ্রক্রিয়া আটকে ছিল।
পিএসসির এক ঊর্ধ্বর্তন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হওয়া সত্ত্বেও পিএসসির স্বাধীনতা নেই বললেই চলে। যেকোনো বিধি সংশোধনের জন্য আমাদের জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের মুখাপেক্ষী থাকতে হয়। ৪৪তম বিসিএসের নিয়োগ জটিলতা তৈরি হয়েছে পিএসসির বিধি সংশোধনের ক্ষমতা নেই বলে। বিধি সংশোধন ফাইল এত দিন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে ছিল।
৪৪তম বিসিএসের ফলাফল প্রসঙ্গে পিএসসির জনসংযোগ কর্মকর্তা মতিউর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিধি সংশোধন হওয়ায় দ্রুতই ৪৪তম বিসিএসের সংশোধিত ফলাফল প্রকাশ করা হবে।’