ইদানীং অনেকেই জিজ্ঞাসা করছেন, উন্নয়ন খাতে (ডেভেলপমেন্ট সেক্টর) যেহেতু বাজেট কমছে, ভবিষ্যতে কি কমিউনিকেশনসে ক্যারিয়ার গড়া সম্ভব?
সম্ভব কি অসম্ভব, সেটি নিয়ে আমার অভিজ্ঞতা থেকে এবারের লেখা।
নিজেকে স্ট্র্যাটেজিক কমিউনিকেটর হিসেবে তৈরি করতে হবে
এখন আর কী করছি সেটি নয়; বরং কেন করছি সেটির উত্তর জানাটাই গুরুত্বপূর্ণ। শুধু ছবি তোলা, ভিডিও বানানো, প্রেস রিলিজ বা গল্প লেখা যথেষ্ট নয়। এগুলোর প্রভাব কী হতে পারে, তা আগে থেকে অনুমান করতে জানতে হবে এবং বাস্তবেও তার প্রভাব দেখাতে হবে। প্রোগ্রাম বা প্রজেক্টের আউটপুটের সঙ্গে কমিউনিকেশনস লিংক না করলে, এটি সারা জীবন ‘সাপোর্ট রোল’–এ সীমাবদ্ধ থাকবে।
ডোনারের অগ্রাধিকার বুঝে, সে অনুযায়ী কমিউনিকেশনস পরিকল্পনা করতে হবে। ডোনার আপডেট, সাফল্যের গল্প ও ভিজ্যুয়াল স্টোরিটেলিংয়ের মাধ্যমে ফান্ড রেইজিংয়ে ভূমিকা রাখুন।
এখন ‘Jack of all trades, master of none’ নেতিবাচক নয়; বরং কমিউনিকেশনসে এটি বড় শক্তি। ডিজিটাল স্টোরিটেলিং, ডেটা ভিজ্যুয়ালাইজেশন, এআই প্রম্পট ইঞ্জিনিয়ারিং, সোশ্যাল মিডিয়া ইনসাইট—এসব দক্ষতা একজনের থাকা মানে ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল! একই সঙ্গে কনটেন্ট ক্রিয়েটর, ডিজিটাল মার্কেটার, মিডিয়া রিলেশনস ও ক্রাইসিস কমিউনিকেটর—যত বেশি হাইব্রিড স্কিল, তত বেশি অপরিহার্যতা।
সব সময়ই আমরা অন্য ব্র্যান্ডের ভিজিবিলিটি বাড়াই। এবার নিজের ব্র্যান্ডিংয়েও মন দিন। আপনার চিন্তা ও কাজ এমনভাবে শেয়ার করুন, যাতে অন্যরা অনুপ্রাণিত হয় বা কিছু শিখতে পারে। গুরু হিসেবে ব্র্যান্ডিং করতে হবে, সেটি বলছি না। তবে সব সময় দেখান যে you are always a work in progress। এ জন্য অনলাইন ও অফলাইন—দুই জায়গায় সক্রিয় থাকতে হবে।
হার্ড স্কিল অনেকটাই এখন এআই (কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা) দিয়ে করা সম্ভব। তাই আপনাকে আলাদা করবে সফট স্কিল, যেমন টেবিলে আলোচনা করার দক্ষতা, নেগোসিয়েশন, এমনকি প্রয়োজনে বসকেও গঠনমূলকভাবে চ্যালেঞ্জ করার ক্ষমতা। এগুলোই ভবিষ্যতে বড় পার্থক্য তৈরি করবে।
কাজ এমনভাবে করুন, যাতে বসকে আর আলাদাভাবে বোঝাতে না হয় যে আপনি কতটা গুরুত্বপূর্ণ। বরং ডোনার, মিডিয়া, পার্টনার, এমনকি সহকর্মীদের কাছ থেকে আপনার কাজের প্রশংসা শুনে বস নিজে যেন তা উপলব্ধি করতে পারেন, সেটিই আসল ভ্যালু।
বাংলাদেশের কনটেক্সটে, বাজেট–সংকটের মধ্যেও যাঁরা নিজেদের সাপোর্ট রোল থেকে মিশন ক্রিটিক্যাল রোলে রূপান্তর করতে পারবেন, তাঁরাই টিকে থাকবেন এবং এগিয়ে যাবেন।
ডেভেলপমেন্ট সেক্টরে একদিকে যেমন চাকরির কাটছাঁট হচ্ছে, অন্যদিকে আবার নতুন সুযোগও তৈরি হচ্ছে। এই ক্রাইসিসে টিকে থাকতে হলে আত্মবিশ্বাসই সবচেয়ে বড় শক্তি।
মনে রাখতে হবে, তোমার বডি ল্যাঙ্গুয়েজ, তোমার সম্পর্কে কারও প্রথম ধারণা তৈরি করে। আত্মবিশ্বাস মানে, সব উত্তর জানা নয়; বরং নিজের সক্ষমতাকে বিশ্বাস করা আর দৃঢ়ভাবে সামনে এগিয়ে যাওয়া।
সাক্ষাৎকার রুমে প্রবেশ, কোনো মঞ্চে ওঠা কিংবা ক্লাসে ঢোকা, যেখানেই হোক না কেন, নিজেকে আত্মবিশ্বাসী হিসেবে উপস্থাপন করতে হবে। মানুষ প্রথমেই লক্ষ করবে তোমার উপস্থিতি, তারপর শুনবে তোমার কথা।
তাই আত্মবিশ্বাস নিয়ে এগিয়ে চলো। সবাই তোমার কথা মন দিয়ে শুনবে।
*লেখক: আবদুল কাইয়ুম, কমিউনিকেশন হেড, ইউএনডিপি