
চাকরিপ্রার্থীরা দিন দিন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) টুলের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ছেন। জীবনবৃত্তান্ত (সিভি) তৈরি থেকে শুরু করে কভার লেটার লেখার ক্ষেত্রেও এআইয়ের ব্যবহার দ্রুত বাড়ছে। কিন্তু সিভিতে অতিরিক্ত এআই ব্যবহার সম্পর্কে সতর্ক করেছেন বিশেষজ্ঞরা। অন্ধভাবে এআইয়ের ওপর নির্ভরশীলতা চাকরি পাওয়ার ন্যূনতম সম্ভাবনাকে নষ্ট করে দিতে পারে।
চাকরিসংক্রান্ত প্রতিষ্ঠান ক্যারিয়ার গ্রুপ কোম্পানিজ–এর ২০২৫ মার্কেট ট্রেন্ডের প্রতিবেদন অনুযায়ী, চাকরিপ্রার্থীরা প্রায় ৬৫ শতাংশ আবেদনপত্রের কোনো না কোনো পর্যায়ে এআই ব্যবহার করছেন। তবে এর ফলে অনেক আবেদনপত্রের ভাষা ও কাঠামো একেবারে একই রকম হয়ে যাচ্ছে।
অন্ধভাবে এআইয়ের ওপর নির্ভরশীলতার ঝুঁকি
ক্যারিয়ার–বিষয়ক পরামর্শদাতা আমেরিকার দ্য ক্যারিয়ার রেভেন–এর প্রতিষ্ঠাতা জেন ডেলরেনজো বলেন, অনেক এআই টুল ‘হ্যালুসিনেশন’ বা কল্পিত তথ্য তৈরি করে। এর ফলে সিভি চাকরির বিজ্ঞপ্তির সঙ্গে মেলাতে গিয়ে এমন তথ্য যুক্ত হয়, যা সত্য নয়। একজনের উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, একজন নারী একাধিক চাকরিতে আবেদন করার জন্য এআই দিয়ে নিজের সিভি বদলে পাঠিয়েছিলেন। পরে দেখা যায়, এআই তাঁর কাজের অভিজ্ঞতা বাড়িয়ে দেখিয়েছে এবং ভুল তথ্য যোগ করেছে।
ডেলরেনজো বলেন, ইন্টারভিউতে ডাক পেলে আতঙ্কিত হয়ে যেতেন। আপনার সিভির প্রতিটি পয়েন্ট ব্যাখ্যা করতে সক্ষম হতে হবে। যদি আপনার বাস্তব অভিজ্ঞতা না থাকে, তা সঙ্গে সঙ্গে ধরা পড়ে যাবে।
ক্যারিয়ার–বিষয়ক সাবেক পরামর্শদাতা জেসি ক্যাস কারলিন বলেন, কখনো কখনো প্রার্থীরা ভুলবশত অনলাইন ফর্মে এআইয়ের প্রম্পট রেখেই পাঠিয়ে দেন। একবার এক প্রার্থী প্রশ্নের জবাবে লিখেছিলেন, ‘কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা হিসেবে আমার কোনো অনুভূতি নেই।’
মানুষের কাজ এখনো গুরুত্বপূর্ণ
কারলিনের মতে, এআইয়ের তৈরি সিভি প্রায়ই কি–ওয়ার্ডে ঠাসা থাকে, যা পড়তে অস্বস্তিকর লাগে। এগুলো আসলে এলোমেলো শব্দের জটলা। নিজের ভাষায় প্রভাব ও কাজের ফলাফল ব্যাখ্যা করা প্রার্থীরা এআই ব্যবহারকারীদের চেয়ে অনেক বেশি কার্যকর।
ডেলরেনজোর পরামর্শ, এআইকে পুরো কাজের দায়িত্ব না দিয়ে সহায়ক হিসেবে ব্যবহার করা উচিত। তিনি সতর্ক করে বলেন, এমনকি দক্ষ এআই টুলও কোম্পানির নাম ভুল করতে পারে। এটি অত্যন্ত বিব্রতকর হতে পারে। এমন ভুল আপনার চাকরি পাওয়ার সম্ভাবনাকে নষ্ট করে দেবে।
শেষ কথা
চাকরির আবেদনপ্রক্রিয়া ক্লান্তিকর ও চাপের হতে পারে। এ কারণে অনেকেই পুরোপুরি এআইয়ের ওপর ভরসা করতে চান। কিন্তু বিশেষজ্ঞদের মতে, এই শর্টকাট পথ দীর্ঘ মেয়াদে ক্ষতিকর। প্রথমে নিজের সিভি বা কভার লেটার নিজেই লেখা উচিত। এরপর এআই দিয়ে শুধু ভাষা শাণিত করতে পারেন।
কারলিন বলেন, এআই আপনার আবেদনপত্রকে আরও পরিশীলিত করতে সাহায্য করতে পারে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত নিয়োগকর্তারা সংযোগ স্থাপন করতে চান একজন বাস্তব ব্যক্তির সঙ্গে, কোনো অ্যালগরিদমের সঙ্গে নয়। তথ্যসূত্র: সিএনবিসি