বাংলাদেশ পুলিশে ক্যাডেট সাব-ইন্সপেক্টর (এসআই-নিরস্ত্র) পদে একটি নিয়োগ চলমান অবস্থায় নতুন আরেকটি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে। ফলে চাকরিপ্রার্থীদের জন্য সুযোগ আরও বেড়েছে। নতুন নিয়ম অনুসারে গত কয়েকটি ব্যাচ থেকে প্রার্থীদের কয়েকটি ধাপে পরীক্ষা নেওয়া হচ্ছে। সব ধাপে উত্তীর্ণ হতে হলে ভালোভাবে প্রস্তুতি নিতে হবে।
আবেদনকারী প্রার্থীদের মধ্য থেকে এসএসসি, এইচএসসি, ডিগ্রি/স্নাতক/সমমান পরীক্ষার ফলাফল এবং উচ্চতার ওপর ভিত্তি করে নির্ধারিত নিয়োগবিধি অনুযায়ী ওয়েববেজড প্রিলিমিনারি স্ক্রিনিংয়ের মাধ্যমে নির্দিষ্টসংখ্যক যোগ্য প্রার্থী শারীরিক মাপ, কাগজপত্র যাচাইকরণসহ শারীরিক সক্ষমতা যাচাই পরীক্ষার জন্য নির্বাচন করা হবে।
ওয়েববেজড প্রিলিমিনারি স্ক্রিনিংয়ে বাছাই করা প্রার্থীদের বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা তারিখ, সময় ও স্থানে শারীরিক মাপ, কাগজপত্র যাচাইকরণসহ শারীরিক সহনশীলতা পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে হবে। এ ধাপে প্রার্থীকে সাতটি ইভেন্টে অংশ নিতে হবে। ইভেন্টগুলো হলো দৌড়, লংজাম্প, হাইজাম্প, পুশআপ, সিটআপ, ড্র্যাগিং ও রোপ ক্লাইম্বিং। এ ধাপে মোট তিন দিন প্রার্থীর যোগ্যতা যাচাই করা হবে।
শারীরিক সক্ষমতা যাচাই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রার্থীদের ৩টি বিষয়ে ২৫০ নম্বরের লিখিত ও মনস্তত্ত্ব পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে হবে। ইংরেজি, বাংলা রচনা ও কম্পোজিশন বিষয়ে ১০০ নম্বর, সাধারণ জ্ঞান ও গণিত বিষয়ে ১০০ নম্বর এবং মনস্তত্ত্ব বিষয়ে ৫০ নম্বরের পরীক্ষা হবে।
লিখিত ও মনস্তত্ত্ব পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রার্থীদের নির্ধারিত স্থান, তারিখ ও সময়সূচি অনুযায়ী কম্পিউটার দক্ষতা পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে হবে। এ পরীক্ষায় মাইক্রোসফট অফিস, ওয়েব ব্রাউজিং ও ট্রাবলস্যুটিং বিষয়ে পরীক্ষা দিতে হবে।
এ ধাপে প্রার্থীদের ৫০ নম্বরের বুদ্ধিমত্তা ও মৌখিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে হবে। লিখিত, মনস্তত্ত্বসহ বুদ্ধিমত্তা ও মৌখিক পরীক্ষায় প্রাপ্ত নম্বরের ভিত্তিতে নিয়োগবিধি মোতাবেক উত্তীর্ণ প্রার্থীদের ফলাফল প্রকাশ করা হবে।
লিখিত, মনস্তত্ত্ব, বুদ্ধিমত্তা ও মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রার্থীদের কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতাল, ঢাকায় নির্ধারিত তারিখ ও সময়ে স্বাস্থ্য পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে হবে। স্বাস্থ্য পরীক্ষায় কোনো প্রার্থী একবার অযোগ্য হলে সেই প্রার্থীর আর পরীক্ষা নেওয়া হবে না।
স্বাস্থ্য পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সময় পূরণ করা পুলিশ ভেরিফিকেশন ফরম দাখিল করতে হবে। পুলিশ ভেরিফিকেশনে কোনো প্রার্থী সন্তোষজনক বিবেচিত হলেই কেবল প্রশিক্ষণের জন্য প্রাথমিকভাবে মনোনীত করা হবে।
মৌলিক প্রশিক্ষণের জন্য মনোনয়ন সিলেকশন বোর্ড কর্তৃক সুপারিশ করা প্রার্থীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষায় যোগ্য ঘোষণা ও পুলিশ ভেরিফিকেশন সম্পন্নের পর সন্তোষজনক বিবেচনায় মৌলিক প্রশিক্ষণের জন্য চূড়ান্তভাবে মনোনীত করা হবে। এ ক্ষেত্রে পুলিশ ভেরিফিকেশন ফরমে প্রার্থী কোনো তথ্য গোপন করলে বা অসম্পূর্ণ, ভুল কিংবা মিথ্যা তথ্য দিলে প্রার্থিতা বাতিল করা হবে। ক্যাডেট সাব-ইন্সপেক্টর অব পুলিশ (নিরস্ত্র) হিসেবে নির্বাচিত প্রার্থীদের বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমি, সারদা, রাজশাহীতে এক বছর মেয়াদি মৌলিক প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণ করতে হবে।
এসআই পদে ৩৯তম ব্যাচে সুপারিশ পাওয়া মো. নাহিদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ১ হাজার ৬০০ মিটার দৌড়ের প্রস্তুতির জন্য সহনশীলতা বাড়াতে হালকা ওজন নিয়ে দৌড়ানোর চর্চা করতে হবে, শ্বাসপ্রশ্বাস নিয়ন্ত্রণের জন্য নিয়মিত দম চর্চা করতে হবে। হাইজাম্পে লাফানোর ক্ষমতা বাড়াতে স্কোয়াট কৌশলগুলো শিখতে হবে। পুশআপের জন্য প্রতিদিন ১০ থেকে ১৫টি পুশআপ দিয়ে শুরু করে ধীরে ধীরে সংখ্যা বাড়াতে হবে। সিটআপের জন্য পেটের পেশি শক্তিশালী করতে প্রতিদিন ২০ থেকে ২৫টি সিটআপ দিয়ে শুরু করতে হবে। ওজন টেনে আনার ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য ওজন বহন করার কৌশল চর্চা করতে হবে। পুলিশের উপপরিদর্শক মাহফুজার রহমান প্রথম আলোকে বলেন, বাংলাদেশ পুলিশের একজন গর্বিত অফিসার হতে হলে প্রার্থীকে অবশ্যই শারীরিক ও মানসিকভাবে দক্ষ হতে হবে। লিখিত পরীক্ষার আগে মাঠের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে। এ জন্য একজন প্রার্থীকে কঠোর অনুশীলন করতে হবে। নতুন নিয়মে সাতটি ধাপে মাঠে পরীক্ষা হয়ে থাকে। প্রার্থীকে অবশ্যই মনে রাখতে হবে প্রতিটি ধাপে আলাদা করে পাস করতে হবে। এ জন্য নিয়মিত অনুশীলনের বিকল্প নেই। আবেদন করার সঙ্গে সঙ্গে বাসার আশপাশে মাঠে নিয়মিত দৌড়াতে হবে। এসআই নিয়োগের ভিডিও টিউটরিয়াল ইউটিউবে দেখে লংজাম্প, হাইজাম্প, পুশআপ, সিটআপ, ড্র্যাগিং ও রোপ ক্লাইম্বিং অনুশীলন করতে হবে।
লিখিত পরীক্ষার প্রস্তুতির বিষয়ে মো. নাহিদুল ইসলাম বলেন, লিখিত পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য ফ্রি হ্যান্ড রাইটিং, বানান ঠিক রাখা ও প্রাসঙ্গিক লেখা গুরুত্বপূর্ণ। কল্পনাশক্তি ব্যবহার করে নিজের ভাষায় লেখা এবং নির্ভুল তথ্য ও পরিসংখ্যান দিলে ভালো নম্বর পাওয়া যাবে। প্রতিটি বিষয় আলাদা করে পরিকল্পনা করে প্রস্তুতি নিলে পরীক্ষার দিন ভালো ফল করা সম্ভব। নিয়মিত চর্চা, সঠিক সময় ব্যবস্থাপনা ও মডেল টেস্টের মাধ্যমে নিজেকে প্রস্তুত করতে হবে। ইংরেজি পরীক্ষায় প্রধানত বাংলা থেকে ইংরেজি অনুবাদের ওপর বেশি জোর দেওয়া হয়। প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময় ধরে বাংলা থেকে ইংরেজি অনুবাদ অনুশীলন করতে হবে। প্রতিদিন এক থেকে দুটি রচনা বা ভাবসম্প্রসারণ লেখার চর্চা করতে হবে। গণিত পরীক্ষায় ভালো করার জন্য মৌলিক গণিতে জোর দিতে হবে। মাধ্যমিক পর্যায়ের বোর্ড বইগুলো থেকে গণিতের মূল বিষয়গুলো ভালোভাবে আয়ত্ত করতে হবে। সাধারণ জ্ঞান অংশের জন্য বাংলাদেশ ও বিশ্বের চলতি বিষয়গুলো সম্পর্কে ভালো ধারণা রাখা প্রয়োজন। এ ছাড়া নিয়মিত পত্রিকা পড়তে হবে।