বি-জেটের কোর্সে অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীরা
বি-জেটের কোর্সে অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীরা

স্বপ্নের চাকরিতে জাপান: বি-জেট বদলে দিয়েছে বাংলাদেশি প্রকৌশলীদের জীবন

তথ্যপ্রযুক্তিতে দক্ষ তরুণদের জন্য জাপানে ক্যারিয়ার গড়ার এক সুবর্ণ সুযোগ তৈরি করেছে বাংলাদেশ-জাপান আইসিটি ইঞ্জিনিয়ার্স ট্রেনিং প্রোগ্রাম (বি-জেট)। কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং, আইটি বা আইসিটি বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রিধারীরা এ প্রশিক্ষণ নিতে পারবেন। প্রোগ্রামটির ১৫তম ব্যাচে ভর্তির আবেদন চলছে। শেষ তারিখ ৩১ জুলাই ২০২৫।

জাপানের আইটি খাতে সফল যাঁরা

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে অনেক বাংলাদেশি ইঞ্জিনিয়ার জাপানের আইটি শিল্পে নিজেদের মেধার স্বাক্ষর রাখছেন। তাঁদের সফলতার পেছনের গল্পে একটি বড় অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করেছে ‘বি-জেট’। ছয় মাসব্যাপী এ নিবিড় প্রশিক্ষণ জাপানি ভাষা, ব্যবসায়িক শিষ্টাচার এবং দলবদ্ধভাবে আইটি প্রকল্পে কাজ করার জন্য বিশেষভাবে ডিজাইন করা হয়েছে। জানা যাক কয়েকজন সফল বি-জেট অ্যালামনাইয়ের অভিজ্ঞতা সম্পর্কে।

আসিফের ক্যারিয়ারের মোড় ঘুরিয়েছে বি-জেট

ইফতেখার আই আসিফ, বি-জেটের দ্বিতীয় ব্যাচ থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে বর্তমানে টোকিওর একটি আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স কোম্পানিতে কর্মরত। তিনি বলেন, ‘ক্লাসে মনোযোগ, পাঠ্যক্রমের ওপর বিশ্বাস এবং কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে আমি এ সাফল্য অর্জন করেছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘বি-জেট আমার ক্যারিয়ারের টার্নিং পয়েন্ট ছিল। এটি আমাকে আত্মবিশ্বাসী করেছে এবং নতুন পরিবেশ ও চ্যালেঞ্জের জন্য আমার সামনে সম্ভাবনার নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে।’

জাপানে যাওয়ার সেতুবন্ধ বি-জেট

আসিফের ব্যাচেই ছিলেন সিয়াম মোহাম্মদ আবদুল গাফফার। তিনিও সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে টোকিওর স্বনামধন্য একটি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত। সিয়ামের মতে, ‘কেউ যদি আন্তর্জাতিক মানের আইটি ক্যারিয়ার গড়তে চান, তবে বি-জেট তাঁর জন্য এক দারুণ সুযোগ।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমার জন্য বি-জেট ছিল জীবন বদলে দেওয়ার মতো একটি সেতু, যা আমাকে বাংলাদেশ থেকে জাপানের বিশ্বমানের প্রযুক্তি শিল্পে পৌঁছে দিয়েছে।’

বি-জেটের মাধ্যমেই সুযোগ পান রাফিউল

রাফিউল হাসান, বি-জেটের প্রথম ব্যাচে প্রশিক্ষণ নেন। বর্তমানে জাপানের আইরেট ইনকরপোরেটেড প্রতিষ্ঠানে ওয়েব ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কর্মরত। বি-জেটের অবদান প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘জাপানে ক্যারিয়ার গড়ার ব্যাপারে ইচ্ছা থাকলে বি-জেট হলো প্রথম পদক্ষেপ। এটি আমাকে দুটি শক্তিশালী হাতিয়ার দিয়েছে—জাপানি ভাষা এবং তাদের সংস্কৃতির সঙ্গে মানিয়ে চলার দক্ষতা। এই প্রোগ্রামের কল্যাণেই আমি জাপানে প্রথম চাকরির ইন্টারভিউ দেওয়ার সুযোগ পেয়েছিলাম।’

বি-জেট কী

বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল (বিসিসি) ও জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সির (জাইকা) যৌথ উদ্যোগে ২০১৭ সালে প্রোগ্রামটি চালু হয়। বর্তমানে এটি নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় ও কেইরিনকান (KEIRINKAN) দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে।

সার্টিফিকেট প্রদান অনুষ্ঠানে ১৩তম ব্যাচের শিক্ষার্থীরা

প্রোগ্রামের প্রধান বৈশিষ্ট্য

• জাপানি ভাষা প্রশিক্ষণ: জেএলপিটি এন-ফোর (JLPT N4) লেভেল পর্যন্ত জাপানি ভাষা এবং ব্যবসায়িক শিষ্টাচার শেখানো।

• ক্যারিয়ার সাপোর্ট: জাপানি কোম্পানির জন্য সিভি/রিজিউমি প্রস্তুত করা এবং জাপানের আইটি সেক্টরে ক্যারিয়ার গড়ার জন্য পূর্ণাঙ্গ সহায়তা প্রদান।

• সাফল্যের হার: এখন পর্যন্ত ১৪টি ব্যাচ সম্পন্ন হয়েছে এবং মোট ২৪৮ জন গ্র্যাজুয়েট জাপানের বিভিন্ন কোম্পানিতে নিজেদের ক্যারিয়ার শুরু করেছেন।

বি-জেটের মাধ্যমেই শুরু হোক ক্যারিয়ার

জাপানে কাজ করার বা একটি গ্লোবাল টেক ক্যারিয়ার গড়ার স্বপ্ন থাকলে বি-জেট হতে পারে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। নিজের ভবিষ্যতের জন্য বিনিয়োগ করার এটাই সেরা সময়। চলছে বি-জেট-এর ১৫তম ব্যাচের আবেদন প্রক্রিয়া। সেশন শুরু হবে এ বছরের অক্টোবর মাসে। ঢাকার নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বি-জেট সেন্টারে আগ্রহীদের প্রশিক্ষণ প্রদান করা হবে।

আবেদনের নিয়ম

বি-জেটে আবেদনকারীর শিক্ষাগত যোগ্যতা হিসেবে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (সিএসই), আইটি বা আইসিটি বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রি থাকতে হবে। তবে যাঁরা অক্টোবর ২০২৫-এর মধ্যে স্নাতক সম্পন্ন করবেন, তাঁরাও আবেদন করতে পারবেন। আগামী ৬ অক্টোবর ২০২৫ থেকে ১৩ মার্চ ২০২৬ পর্যন্ত প্রশিক্ষণটি চলবে।

আগ্রহীদের আবেদনের নির্দেশিকা (https://shorturl.at/LIee7) পড়ে আবেদন করতে হবে এই লিংকে-https://forms.gle/Jttm2CgFMYGuddgK6

আবেদনের শেষ তারিখ ৩১ জুলাই ২০২৫।