প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা: বিশেষ প্রস্তুতি ৪৬

বাংলা

সুন্দরবনের হরিণ ছবি: জিয়া ইসলাম
সুন্দরবনের হরিণ  ছবি: জিয়া ইসলাম

রচনা
প্রিয় পরীক্ষার্থী, জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা একাডেমী (নেপ)-এর চূড়ান্ত প্রশ্নকাঠামো অনুসারে বাংলা বিষয়ের ১৫ নম্বর প্রশ্নটি থাকবে ‘রচনা লেখো’। সংকেতসহ ৪টি রচনার শিরোনাম দেওয়া থাকবে, ১টির উত্তর লিখতে হবে। নিচে দুটি নমুনা রচনা দেওয়া হলো।
সুন্দরবন
সূচনা: পৃথিবীর সবচেয়ে বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বনের নাম সুন্দরবন। এটি বাংলাদেশের বনভূমিগুলোর মধ্যে অন্যতম একটি বন। ১৯৯৭ সালের ৬ ডিসেম্বর ইউনেসকো সুন্দরবনকে বিশ্ব ঐতিহ্য হিসেবে ঘোষণা করে।
নামকরণ: একপ্রকার সুন্দরী বৃক্ষের নাম অনুসারে এ বনের নাম হয়েছে সুন্দরবন। এটি আমাদের জাতীয় বন।
অবস্থান: বাংলাদেশের দক্ষিণে ৩টি জেলা যথা: খুলনা, সাতক্ষীরা ও বাগেরহাট জেলায় অবস্থিত এ বন। তবে বনটির একাংশ ভারতেও বিস্তৃত।

প্রাণী: বিভিন্ন ধরনের প্রাণী রয়েছে সুন্দরবনে। তবে গণ্ডারসহ অনেক প্রাণী বিলুপ্ত হয়ে গেছে। এখনো নানা প্রাণীর বৈচিত্র্যতায় ভরপুর এ বন। পৃথিবীখ্যাত ও বিরল রয়েল বেঙ্গল টাইগার এ বনের প্রধান আকর্ষণ। এ ছাড়া হরিণ, বানর, বন্য শূকর ইত্যাদি প্রাণীও এই বনে বাস করে। বিচিত্র জাতের পাখি রয়েছে এ বনে। মৌমাছির জন্যও বিখ্যাত এ বন। এ ছাড়া এর ভেতর দিয়ে বয়ে যাওয়া জলাশয়ে কুমির, সাপসহ বিভিন্ন জলজ প্রাণী রয়েছে।
রয়েল বেঙ্গল টাইগার: আকর্ষণীয় এবং বিখ্যাত এই প্রাণীটি সুন্দরবনের প্রাণ বলা যায়। এর গায়ের ডোরাকাটা দাগ আর গাম্ভীর্য সুন্দরবনের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে আরও সুন্দর করে তুলেছে।
হরিণ: নিরীহ, তৃণভোজী হরিণ সুন্দরবনের উল্লেখযোগ্য প্রাণীগুলোর মধ্যে অন্যতম।
বানর: সুন্দরবনে প্রচুর বানর রয়েছে। এরা হরিণের বন্ধু। বাঘ কিংবা শিকারি এলে এরা চেঁচামেচি করে হরিণকে সতর্ক করে দেয়।
মৌমাছি: সুন্দরবনে প্রচুর মৌচাক রয়েছে। মৌয়ালরা এসব মৌচাক থেকে মধু সংগ্রহ করে জীবিকা নির্বাহ করে।
অন্যান্য প্রাণী: সুন্দরবনের ভেতর দিয়ে বয়ে যাওয়া জলাশয়ে কুমির, সাপসহ অনেক জলজ প্রাণী রয়েছে। এছাড়া এ বনে রয়েছে অনেক পাখি ।
সুন্দরবনে বিলুপ্তপ্রায় প্রাণী: বিভিন্ন কারণে এ বনের অনেক প্রাণী বিলুপ্ত হয়েছে। এসবের মধ্যে গণ্ডার, হাতি, চিতাবাঘ, ওলবাঘ উল্লেখযোগ্য। এছাড়া এখনো অনেক প্রাণী বিলুপ্তির পথে।
আমাদের দায়িত্ব: এ বন আমাদের পরিবেশের ও প্রকৃতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই সঠিক পদক্ষেপ ও পরিকল্পনার মাধ্যমে এ বন রক্ষা করা আমাদের বড় দায়িত্ব।
বৃক্ষলতা: প্রধান বৃক্ষ সুন্দরী ছাড়াও অন্যান্য বৃক্ষ জন্মে এ বনে। গোলপাতা এ বনের একটি বিখ্যাত উদ্ভিদ।
আয়তন: সুন্দরবনের মোট আয়তন ১০ হাজার বর্গকিলোমিটার। তবে বাংলাদেশে অন্তর্গত সুন্দরবনের আয়তন ৬০১৭ বর্গকিলোমিটার।
উত্পন্ন দ্রব্য: এ বনে উত্পন্ন বিভিন্ন গাছের কাঠ, খড়ি, গোলপাতা এবং মধু সংগ্রহ করে অনেক মানুষ জীবিকা নির্বাহ করে।
উপসংহার: পৃথিবীর বিখ্যাত এবং বিরল বৈশিষ্ট্যের এ বন আমাদের গর্ব, আমাদের অহংকার। এ বনকে বাংলাদেশের ফুসফুস বলা হয়। ১৯৯৯ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি সুন্দরবনকে বন্য প্রাণীর জন্য অভয়ারণ্য হিসেবে ঘোষণা করা হয়। একে রক্ষা করা আমাদের একান্ত কর্তব্য।

বাংলাদেশের জাতীয় পাখি/ দোয়েল পাখি/ আমার প্রিয় পাখি
সূচনা: যে পাখির শিস দেওয়া সুরেলা গান আমাদের মনকে আন্দোলিত করে সেটি হচ্ছে দোয়েল। দোয়েল আমাদের জাতীয় পাখি।
আকৃতি: দেখতে ছোট ধরনের পাখি এটি। পাঁচ থেকে ছয় ইঞ্চির মতো লম্বা হয় এরা। দেহ উজ্জ্বল কালো বর্ণের। এদের গলার নিচ থেকে বুক পর্যন্ত এবং ডানা বরাবর সাদা রেখা দেহের সৌন্দর্যকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। লেজে সাদা ও নীলের মিশ্রণ সত্যিই নয়নাভিরাম। শরীরের তুলনায় লেজ লম্বা।
বাসস্থান: বাড়ির আশপাশেই এদের দেখতে পাওয়া যায়। এরা ঘন বন জঙ্গল কিংবা খোলা জায়গায় সব সময় থাকতে ভালোবাসে না। তাই বসতবাড়ির আশপাশে ছোট গাছ কিংবা সবজির মাচায় বাসা বাঁধে। গাছের কোটর, দেয়ালের ফাঁক, ঘরের চালের ফাঁকা জায়গা, সবজির মাচায় এরা বাস করে।
স্বভাব: সুরেলা কণ্ঠের সাথে সাথে কখনো কখনো বিচিত্র আওয়াজ ও অঙ্গভঙ্গি করেও আমাদের আনন্দ দিয়ে থাকে দোয়েল। শীতকালের শুষ্ক আবহাওয়ায় এরা বেশি গান গায়। কখনো কখনো একই স্থানে বসে অনেকক্ষণ গান গায়। লেবুর ডালে কিংবা ঘরের চালে কিংবা সবজি মাচায় বসে লেজ উঁচিয়ে যখন গান গায় সত্যিই ভালো লাগে।
উপকারিতা: দোয়েলের গান, সৌন্দর্য আমাদের আনন্দ দেয়। আবার ক্ষতিকর পোকামাকড় খেয়ে প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষায় সহযোগিতাও করে।
গানের পাখি: দোয়েলকে গানের পাখি বলে। এর মিষ্টি সুরেলা শিস মনকে ভরিয়ে তোলে। এদের মিষ্টি সুরের গান বিশেষ করে ভোরে ও দুপুরে মনকে বিমোহিত করে।
খাদ্য: পোকামাকড় ও কীটপতঙ্গই সাধারণত এদের প্রধান খাবার।
জাতীয় পাখি হিসেবে দোয়েল: সবুজ প্রকৃতি আর মানুষের কাছাকাছি একেবারে মিশে থাকে এ পাখি। এসব কারণেই দোয়েল আমাদের জাতীয় পাখির মর্যাদা পেয়েছে।
প্রাপ্তিস্থান: বাংলাদেশের সর্বত্র এ পাখি দেখতে পাওয়া যায়।
উপসংহার: দোয়েল পাখি অন্যান্য পাখির মতোই সৌন্দর্য বৃদ্ধি এবং প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষায় ভূমিকা রাখে। এ জন্য দোয়েল পাখি রক্ষা করা কর্তব্য।
তত্ত্বাবধায়ক, শিশুবান্ধব পাঠশালা সুন্দরগঞ্জ, গাইবান্ধা
স্বেচ্ছাসেবী শিক্ষক, শিবরাম আদর্শ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, গাইবান্ধা