
এ বছর উচ্চমাধ্যমিকে বা এইচএসসিতে পুনর্বিন্যাস করা পাঠ্যসূচি অনুযায়ী সব বিষয়েই পূর্ণ নম্বর ও পূর্ণ সময়ে পরীক্ষা হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু শেষ সময়ে এসে আজ মঙ্গলবার তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিষয়ের পরীক্ষা ১০০ নম্বরের পরিবর্তে ৭৫ নম্বরে নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। অবশ্য অন্য সব বিষয়ে পূর্ণ নম্বর ও পূর্ণ সময়ে পরীক্ষা হবে।
এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা নিয়ে আজ রাজধানীর সেগুনবাগিচায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটের প্রেস ব্রিফিংয়ে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি এ তথ্য জানান। এর আগে এই পরীক্ষাসংক্রান্ত জাতীয় মনিটরিং ও আইনশৃঙ্খলাবিষয়ক কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়।
পরে আন্তশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটি আইসিটি বিষয়ের পরিবর্তিত নম্বর বণ্টনের বিস্তারিত জানায়। নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ৭৫ নম্বরের মধ্যে ৩০ নম্বরের পরীক্ষা হবে সৃজনশীল (তত্ত্বীয়) বিষয়ে। এই অংশে আটটি প্রশ্নের মধ্যে তিনটির উত্তর দিতে হবে। সময় দুই ঘণ্টা। আগে আটটি প্রশ্নের মধ্যে পাঁচটির উত্তর দেওয়ার কথা ছিল। অন্যদিকে বহুনির্বাচনি (এমসিকিউ) অংশের নম্বর হবে ২০। এখানেও কিছুটা নমনীয়তা দেখানো হয়েছে। এই অংশে ২৫টি প্রশ্নের মধ্যে ২০টির উত্তর দিতে হবে। সময় হবে ২৫ মিনিটি। আগের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ২৫ মিনিটে ২৫টি প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার কথা ছিল। বাকি ২৫ নম্বর থাকবে ব্যবহারিক পরীক্ষার জন্য।
ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ডের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, আইসিটি বিষয়ের বিষয়বস্তু মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা শাখার পরীক্ষার্থীদের জন্য তুলনামূলক কঠিন বলে মনে হচ্ছে। এ জন্য মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ পর্যায়ের নির্দেশে শুধু আইসিটি বিষয়ের নম্বর পরিবর্তন করা হয়েছে।
পূর্বঘোষিত সময়সূচি অনুযায়ী ১৭ আগস্ট থেকে শুরু হবে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা। এ পরীক্ষা উপলক্ষে ১৪ আগস্ট থেকে আগামী ২৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দেশের সব কোচিং সেন্টার বন্ধ থাকবে।
পরীক্ষার্থী ও অভিভাবকদের একাংশ পরীক্ষা পেছানোর দাবির বিষয়ে সাংবাদিকেরা প্রশ্ন করলে সংবাদ ব্রিফিংয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন পরীক্ষা ১৭ আগস্ট থেকে হবে, এটি অনেক দিন আগেই ঘোষণা আছে এবং পরীক্ষার্থীদের অধিকাংশই সেই পরীক্ষাকে সামনে রেখে তৈরি হয়েছে। তারা পরীক্ষা দেওয়ার জন্য প্রস্তুত। যারা মনে করছে প্রস্তুত নয়, এখনো কয়েক দিন সময় আছে। তারা যদি একটু মনোযোগ দিয়ে পড়াশোনা করে, তাহলে তাদেরও পরীক্ষা অত খারাপ হবে না। পরীক্ষা পেছানোর কোনো সুযোগ নেই।
ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব মোকাবিলায় পরীক্ষাকেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের বিশেষ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলেও জানান শিক্ষামন্ত্রী।
এবার ১১টি শিক্ষাবোর্ডের অধীনে মোট পরীক্ষার্থী ১৩ লাখ ৫৯ হাজারের বেশি। গতবারের তুলনায় এবার দেড় লাখের বেশি পরীক্ষার্থী। পরীক্ষা শুরুর ৩০ মিনিট আগে পরীক্ষার্থীদের অবশ্যই কেন্দ্রে প্রবেশ করতে হবে। অনিবার্য কারণে কোনো পরীক্ষার্থীকে তারপর প্রবেশ করতে দিলে তার নাম, রোল নম্বর, প্রবেশের সময়, দেরি হওয়ার কারণ ইত্যাদি একটি রেজিস্ট্রারে লিখে ওই দিনই সংশ্লিষ্ট শিক্ষাবোর্ডে প্রতিবেদন পাঠাতে হবে।
এ বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি বলেন, পরীক্ষা শুরু হবে ১০টায়। কোনো বিশেষ কারণে যদি দেরি হয়, তাহলে সর্বোচ্চ সাড়ে ১০টা পর্যন্ত কেন্দ্রে প্রবেশের অনুমতি পাবে। এরপর আর হলে প্রবেশ করা যাবে না।
সময়সূচি অনুযায়ী, সাধারণ শিক্ষাবোর্ডগুলোর অধীন এইচএসসির লিখিত পরীক্ষা শেষ হবে ২৫ সেপ্টেম্বর। মাদ্রাসার আলিমের লিখিত পরীক্ষা ২৬ সেপ্টেম্বর ও কারিগরির লিখিত পরীক্ষা শেষ হবে ১৪ সেপ্টেম্বর।
সংবাদ ব্রিফিংয়ে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি বলেন, পরীক্ষা শেষ হওয়ার নির্ধারিত সময়ের (পরীক্ষা শেষ হওয়ার ৬০ দিনের মধ্যে) মধ্যে ফলাফল প্রকাশ করা হবে।
প্রেস ব্রিফিংয়ে আরও উপস্থিত ছিলেন শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী, কারিগরি ও মাদ্রাসা বিভাগের সচিব মো. কামাল হোসেন, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব সোলেমান খান ও ঢাকা শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক তপন কুমার সরকার।