৩৭৮ কলেজ-মাদ্রাসা ভর্তির জন্য শিক্ষার্থী পায়নি, আবেদনে শীর্ষে আনন্দমোহন কলেজ

  • কলেজ-মাদ্রাসায় একাদশ শ্রেণিতে আসন ২৫ লাখ ৬৩ হাজার ৬৩টি।

  • আবেদন করে ১০ লাখ ৭৩ হাজার ৩১০ জন।

  • ভর্তির জন্য নির্বাচিত ১০ লাখ ৪৭ হাজার ৯৬২ জন।

  • আবেদন করে ভর্তির জন্য নির্বাচিত হয়নি ২৫ হাজার ৩৪৮ জন, এর মধ্যে জিপিএ-৫ পাওয়া ৫ হাজার ৭৬৫ জন।

  • ১০টি কলেজে ভর্তির জন্য কেউ পছন্দক্রমই দেয়নি।

রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের অধীন আর এম জে কলেজে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির জন্য আসন আছে ১৫০টি। কিন্তু এই কলেজে ভর্তির জন্য একজন শিক্ষার্থীও নির্বাচিত হয়নি। সিলেটের জাফলং হানিফা খাতুন মেমোরিয়াল কলেজে আসন ৩০০টি। কিন্তু এখানেও ভর্তির জন্য কেউ নির্বাচিত হয়নি।

আসন্ন শিক্ষাবর্ষে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তিতে এমন ৩৭৮টি কলেজ-মাদ্রাসায় কোনো শিক্ষার্থীই নির্বাচিত হয়নি। এ ছাড়া সারা দেশে ১০টি কলেজে ভর্তির জন্য কেউ আবেদনই করেনি। আবার আবেদন করলেও ভর্তির জন্য নির্বাচিত হয়নি ২৫ হাজার ৩৪৮ শিক্ষার্থী, এর মধ্যে রয়েছে জিপিএ-৫ পাওয়া ৫ হাজার ৭৬৫ শিক্ষার্থী।

২০২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির প্রথম পর্যায়ের ফলাফল প্রকাশ করা হয়েছে গতকাল বুধবার। ফলাফলের তথ্য পর্যালোচনায় এ তথ্য পাওয়া গেছে।

দেশের সব কলেজ ও মাদ্রাসায় (নটর ডেম কলেজসহ কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছাড়া) কেন্দ্রীয়ভাবে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির বাছাইয়ের কাজটি করা হচ্ছে। ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের অধীন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) কারিগরি সহায়তায় কেন্দ্রীয়ভাবে অনলাইনে ভর্তির কাজটি হচ্ছে। এ প্রক্রিয়ায় ভর্তির জন্য কোনো পরীক্ষা হয় না। এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে ভর্তির জন্য শিক্ষার্থী বাছাই করা হচ্ছে। প্রসঙ্গত, কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে ভর্তির কাজটি আলাদাভাবে হয়ে থাকে।

গত ১০ জুলাই এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হয়। এবার ১১টি শিক্ষা বোর্ডে মোট পরীক্ষার্থী ছিল ১৯ লাখ ৪ হাজার ৮৬ জন, এর মধ্যে পাস করেছে ১৩ লাখ ৩ হাজার ৪২৬ জন। মানে ছয় লাখের বেশি পরীক্ষার্থী পাস করতে পারেনি।

ঢাকা শিক্ষা বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, এবার ভর্তিযোগ্য মোট কলেজ-মাদ্রাসা ৮ হাজার ১৫টি। এগুলোতে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তিযোগ্য আসন আছে ২৫ লাখ ৬৩ হাজার ৬৩টি। এসব আসনের বিপরীতে আবেদন করেছিল ১০ লাখ ৭৩ হাজার ৩১০ জন ভর্তিযোগ্য শিক্ষার্থী। এর মধ্যে ভর্তির জন্য নির্বাচিত হয়েছে ১০ লাখ ৪৭ হাজার ৯৬২ জন। বাকি ২৫ হাজারের বেশি শিক্ষার্থী আবেদন করেও ভর্তির জন্য নির্বাচিত হয়নি।

প্রথম ধাপের ফলাফলে যে ৩৭৮টি কলেজ-মাদ্রাসায় কোনো শিক্ষার্থী ভর্তির জন্য নির্বাচিত হয়নি, তার মধ্যে রাজশাহী বোর্ডে ৫৬টি, দিনাজপুরে ৪২টি, ঢাকায় ৩৯টি, ময়মনসিংহে ৩৫টি, যশোরে ১৬টি, বরিশালে ১৩টি, কুমিল্লায় ১২টি, সিলেটে ৩টি ও চট্টগ্রাম বোর্ডের অধীন একটি এবং ১৬১টি মাদ্রাসা।

এ ভর্তিপ্রক্রিয়ায় নির্ধারিত আবেদন ফি জমা দিয়ে সর্বনিম্ন ৫টি ও সর্বোচ্চ ১০টি কলেজ বা মাদ্রাসার জন্য পছন্দক্রম দিয়ে আবেদন করতে হয়। একজন শিক্ষার্থী যতগুলো কলেজে আবেদন করেছে, তার মধ্য থেকে শিক্ষার্থীর মেধা, কোটা (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে) ও পছন্দক্রমের ভিত্তিতে ভর্তির জন্য একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে তার অবস্থান নির্ধারণ করা হয়েছে।

ঢাকা শিক্ষা বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, এ প্রক্রিয়ায় দেখা যায়, অসংখ্য শিক্ষার্থী পরিচিত কলেজ-মাদ্রাসায় বেশি আবেদন করে। কিন্তু শিক্ষার্থীর ফলাফল, পছন্দক্রম ও আসনের মধ্যে সামঞ্জস্য না থাকায় সবাই ভর্তির জন্য নির্বাচিত হয় না। তবে দ্বিতীয় ও তৃতীয় পর্যায়েও ভর্তির আবেদনের সুযোগ রাখা হয়েছে। যারা প্রথম দফায় আবেদন করেনি, তারা এই দুই ধাপেও আবেদন করতে পারবে।

অবশ্য দ্বিতীয় ও তৃতীয় ধাপে সুযোগগুলো সীমিত হয়ে যায়। তখন পছন্দের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তির সুযোগটি সংকুচিত হয়ে পড়ে।

আবেদনের সংখ্যায় শীর্ষ ১০ কলেজ

আবেদনের সংখ্যা বিবেচনা শীর্ষ ১০টি কলেজের তালিকা করা হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি আবেদন করা হয়েছে ময়মনসিংহে অবস্থিত সরকারি আনন্দমোহন কলেজে। এই কলেজে আসন আছে ৯৮১টি। এর বিপরীতে ভর্তির জন্য আবেদন করেছিল ৩৬ হাজার ১৮৫ জন। এ বিবেচনায় দ্বিতীয় শীর্ষ তালিকায় আছে ঢাকার আদমজী ক্যান্টনমেন্ট কলেজে। এই কলেজে ২ হাজার ১৬১টি আসনের বিপরীতে আবেদন করেছিল ৩৫ হাজার ৮২টি। এ রকম বাকি আটটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হলো রাজধানীর বি এ এফ শাহীন কলেজ, শহীদ এ এইচ এম কামরুজ্জামান সরকারি ডিগ্রি কলেজ, কবি নজরুল সরকারি কলেজ, রাজশাহী সরকারি কলেজ, বাকলিয়া সরকারি কলেজ, বগুড়ার সরকারি এ এইচ কলেজ, দিনাজপুর সরকারি কলেজ এবং নিউ গভ. ডিগ্রি কলেজ।

কোন বোর্ডে কত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষার্থী পায়নি

ঢাকা শিক্ষা বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, প্রথম ধাপের ফলাফলে যে ৩৭৮টি কলেজ-মাদ্রাসায় কোনো শিক্ষার্থী ভর্তির জন্য নির্বাচিত হয়নি, তার মধ্যে রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের অধীন ৫৬টি, দিনাজপুরে ৪২টি, ঢাকায় ৩৯টি, ময়মনসিংহে ৩৫টি, যশোরে ১৬টি, বরিশাল শিক্ষা বোর্ডের অধীন ১৩টি, কুমিল্লায় ১২টি, সিলেটে ৩টি ও চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের অধীন একটি এবং ১৬১টি মাদ্রাসা।

যে ১০ কলেজে কেউ আবেদন করেনি

দেশের মোট ১০টি কলেজে কেউ ভর্তির জন্য আবেদনই করেনি। এর মধ্যে নয়টি কলেজই বরিশাল শিক্ষা বোর্ডের অধীনে। এই বোর্ডের অধীন কাঠালিয়া মাধ্যমিক গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজে আসন আছে ৪৫০টি। কিন্তু কোনো শিক্ষার্থী ভর্তির জন্য আবেদনই করেনি। চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের অধীন একটি কলেজে কেউ আবেদন করেনি। মোহাম্মদপুর স্কুল অ্যান্ড কলেজ নামে এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটিতে আসন ২০০ আছে।

৩৭৮ কলেজ-মাদ্রাসার ভর্তির জন্য কোনো শিক্ষার্থী না পাওয়া এবং ২৫ হাজারের বেশি শিক্ষার্থীর আবেদন করেও কোথাও ভর্তির সুযোগ না পাওয়ার বিষয়ে কথা হয় আন্তশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির সভাপতি ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক খন্দোকার এহসানুল কবিরের সঙ্গে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, অতীতে দেখা গেছে, দ্বিতীয় ধাপেও অনেকে আবেদন করে। এবারও তা–ই হবে বলে তাঁরা মনে করছেন। তবে প্রকৃত কারণটি পুরো ধাপ শেষ হওয়ার পরই বোঝা যাবে।