
ইন্টারন্যশনাল স্কুল অ্যাওয়ার্ড—শিক্ষাবিষয়ক কাজে অবদান রাখায় পৃথিবীর বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে উৎসাহিত করার জন্য এই পুরস্কার প্রদান করা হয়। গত রোববার (১৬ জুলাই) বাংলাদেশ সময় বেলা আড়াইটায় থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংকক শহরের ম্যারিয়ট মারকুইস হলে অনুষ্ঠিত হয় এ পুরস্কার প্রদানের নবম আসর। এবারের আসরে ‘বেস্ট অলরাউন্ডার স্কুল’ অ্যাওয়ার্ড অর্জন করেছে বাংলাদেশের উইটন ইন্টারন্যাশনাল স্কুল।
ভারতের সাবেক মন্ত্রী সুরেশ প্রভু এবং ইন্ডিয়ান আইডল প্রতিযোগিতার প্রথম আসরের চ্যাম্পিয়ন সংগীতশিল্পী অভিজিত সাওয়ান্থের কাছ থেকে পুরস্কার গ্রহণ করেন উইটন ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের মিডল স্কুল প্রধান রুমানা হক। পুরস্কার হিসেবে ছিল সনদ, ক্রেস্টসহ উইটন ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের ওপর একটি প্রবন্ধ, যেটি প্রকাশিত হয় ইন্টারন্যাশনাল স্কুল অ্যাওয়ার্ডের নবম আসর উপলক্ষে প্রকাশিত বিশেষ সাময়িকী ‘আরবান মিলঞ্জ’–এ।
পুরস্কার প্রাপ্তির অনুভূতি জানাতে গিয়ে রুমানা হক বলেন, ‘ইন্টারন্যাশনাল স্কুল অ্যাওয়ার্ড যেকোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জন্য একটি অত্যন্ত মর্যাদাপূর্ণ পুরস্কার। সেরা অলরাউন্ডার স্কুল হওয়ার জন্য উইটন ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের পক্ষ থেকে এই পুরস্কার গ্রহণ করতে পেরে আমি অত্যন্ত সম্মানিত বোধ করছি।’
রুমানা হক বলেন, ‘এটি সারা বিশ্বের শিক্ষাবিদদের সঙ্গে দেখা করা এবং নেটওয়ার্ক তৈরি করার একটি দুর্দান্ত সুযোগ ছিল। এ অর্জন উইটন পরিবারের প্রত্যেক সদস্যের অবদানের ফল। পুরস্কারটি আমাদের স্কুলের লক্ষ্য অর্জনের অনেক কাছাকাছি নিয়ে যেতে অনুপ্রাণিত করবে। আমি বিশ্বাস করি, স্বীকৃতির অনুপ্রেরণায় আমরা আমাদের শিক্ষার্থীদের জন্য আরও উন্নত শিক্ষার পরিবেশ দিতে সক্ষম হব।’
এবারের আয়োজনে বাংলাদেশ ছাড়াও ভারত, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, নাইজেরিয়া, লন্ডন, ইতালিসহ মোট ১৪টি দেশের স্বনামধন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে পুরস্কার দেওয়া হয়। পুরস্কারের জন্য সম্ভাব্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের তালিকা থেকে মোট তিনটি ধাপে যাচাই–বাছাইয়ের পর চূড়ান্ত বিজয়ী নির্বাচিত করা হয়।
উইটন ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের চতুর্মুখী কারিকুলাম প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে অলরাউন্ডার হিসেবে গড়ে তোলে। কারণ, স্কুলেই শিক্ষার্থীদের সব পড়া শেষ করা হয়। তাই কোনো শিক্ষার্থীকে প্রাইভেট পড়তে হয় না। পাশাপাশি ‘ও’ এবং ‘এ’ লেভেল পরীক্ষার্থীদের নিয়মিত ক্লাসের পাশাপাশি ‘ইনটেনসিভ কেয়ার’ নেওয়ার মাধ্যমে চূড়ান্ত পরীক্ষার জন্য যোগ্য করে তোলা হয়। বিশেষভাবে প্রযুক্তির ক্রমবর্ধমান অগ্রগতি এবং ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় উপযুক্ত নাগরিক গড়ে তোলার লক্ষ্যে ইতিমধ্যে কারিকুলামে ‘কোডিং’কে একটি পাঠ্যবিষয় হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, যা বাংলাদেশে প্রথম।
‘ও’ এবং ‘এ’ লেভেল পাস করা কোনো শিক্ষার্থী মেডিকেল বা ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের বাইরে ইসলামি বিষয় যেমন কোরআন, হাদিস, ফিকহ্ ইত্যাদি বিষয়ে শিক্ষা নিতে চাইলে সে সুযোগও রয়েছে। কারণ, ‘ও’ এবং ‘এ’ লেভেলের একজন শিক্ষার্থী সাধারণ বিষয়ের পাশাপাশি অতিরিক্ত বিষয় হিসেবে ইসলাম শিক্ষা এবং আরবি ভাষা শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে। ফলে এই স্কুলের শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যতে উচ্চশিক্ষার জন্য মদিনা বিশ্ববিদ্যালয়, আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়, উম্মুল কোরা বিশ্ববিদ্যালয়সহ পৃথিবীর খ্যাতনামা ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ রয়েছে।
এ ছাড়া আদর্শ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিসেবে যে গুণগুলো থাকা দরকার, প্রায় সব কটিই অন্তর্ভুক্ত করার চেষ্টা করেছে স্কুলটি। শিক্ষাবান্ধব পরিবেশে স্কুলেই শিক্ষার্থীদের সব পড়া শেষ করা হয়। ফলে কোনো শিক্ষার্থীকে প্রাইভেট পড়তে হয় না। নিয়মিত ক্লাসের পাশাপাশি ‘ইনটেনসিভ কেয়ার’ নেওয়ার মাধ্যমে ‘ও’ এবং ‘এ’ লেভেল পরীক্ষার্থীদের চূড়ান্ত পরীক্ষার জন্য যোগ্য করে তোলা হয়। শুধু পড়ালেখাই নয়, সহশিক্ষা ও প্রতিযোগিতামূলক কার্যক্রমভিত্তিক বাড়তি আয়োজন রয়েছে প্রতিষ্ঠানটিতে। বইমেলা, পিঠা উৎসব আর বিভিন্ন দিবস উদ্যাপনের মধ্য দিয়ে স্কুলটি সব সময় প্রাণবন্ত থাকে।
ঢাকার লালমাটিয়া এলাকায় উইটন ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের রয়েছে দুটি ক্যাম্পাস। প্রতিটি ক্যাম্পাসে সিনিয়র, মিডল, জুনিয়র স্কুলসহ তিনটি শাখা রয়েছে। ছয় বছর ধরে শিক্ষাদান করে আসা প্রতিষ্ঠানটির বর্তমান শিক্ষার্থী আট শতাধিক। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন আবদুল্লাহ জামান। বিদ্যালয়ের শিক্ষা ও প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিচালনায় রয়েছেন দক্ষ ও অভিজ্ঞ ১৪০ জন শিক্ষক ও ৩৫ জন কর্মী।