
নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি (এনএসইউ)-তে ওআইসি-কমস্টেক, ইসলামিক ফুড সিকিউরিটি সংস্থা (IOFS), ও এনএসইউ’র যৌথ আয়োজনে ৩য় কৃষি জৈবপ্রযুক্তি যুব ফোরামের উদ্বোধনী সেশন অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ শনিবারের এ অনুষ্ঠানে নীতিনির্ধারক, শিক্ষাবিদ ও আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেন এবং বৈশ্বিক খাদ্যনিরাপত্তা চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় জৈবপ্রযুক্তির গুরুত্ব তুলে ধরা হয়। পবিত্র কোরআন থেকে তিলাওয়াত, জাতীয় সংগীত এবং এনএসইউর অর্জন ও আন্তর্জাতিক অংশীদারত্বের একটি উপস্থাপনার মাধ্যমে অনুষ্ঠানটি শুরু হয়।
স্বাগত বক্তব্যে কমস্টেক ফোকাল পারসন ফর বাংলাদেশ ও এনএসইউর বায়োকেমিস্ট্রি অ্যান্ড মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের অধ্যাপক হাফিজুর রহমান বলেন, ‘জৈবপ্রযুক্তি কৃষি ও পুষ্টি চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় নতুন পথ খুলে দিতে পারে। আমাদের যুব সমাজকে এ যাত্রার নেতৃত্ব দিতে হবে এবং জ্ঞানকে বাস্তব সমাধানে রূপান্তর করতে হবে।’
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি অর্থ এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘বাংলাদেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে, যার জন্য আমাদের জিনোম বিজ্ঞানীদের ধন্যবাদ। কৃষিতে পুষ্টি, স্থিতিশীলতা ও উৎপাদন বৃদ্ধিতে জৈবপ্রযুক্তি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। শিক্ষায়, গবেষণায় এবং অভিযোজ্য প্রযুক্তিতে বিনিয়োগ বাড়ানো জরুরি।’
ইসলামিক ফুড সিকিউরিটি সংস্থার সহকারী মহাপরিচালক রাষ্ট্রদূত খুসরভ নোজিরি বৈশ্বিক সহযোগিতার গুরুত্ব তুলে ধরে বলেন, খাদ্যনিরাপত্তা একটি সম্মিলিত চ্যালেঞ্জ। এই ফোরাম যুব বিজ্ঞানীদের জ্ঞান ভাগাভাগি ও নেটওয়ার্ক তৈরি করার সুযোগ দেয়। জনসাধারণের বিশ্বাস অর্জনের জন্য জিনোম প্রযুক্তি নিরাপদ, স্বচ্ছ ও নৈতিকভাবে ব্যবহার করতে হবে।
অনুষ্ঠানের সম্মানিত অতিথি ওআইসি-কমস্টেক–এর কো-অর্ডিনেটর জেনারেল অধ্যাপক মুহাম্মদ ইকবাল চৌধুরী বলেন, ‘খাদ্যনিরাপত্তার সমস্যা মোকাবিলার জন্য আমাদের যুবকদের সঠিক সরঞ্জাম, আধুনিক প্রযুক্তি এবং সুযোগ দেওয়া প্রয়োজন, যাতে তারা বৈজ্ঞানিক জ্ঞানকে বাস্তব সমাধানে রূপান্তর করতে পারে। ফোরামের মতো প্ল্যাটফর্ম তাদের নতুন ধারণা বিনিময় এবং দক্ষতা বৃদ্ধি করতে সহায়তা করবে।’
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে এনএসইউ বোর্ড অব ট্রাস্টিজের চেয়ারম্যান আজিজ আল কায়সার বলেন, ‘কৃষি মানুষের জীবনের ভিত্তি এবং খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করা আজকের বিশ্বে বড় চ্যালেঞ্জ। উদ্ভাবনের মাধ্যমে আমরা কৃষকদের জন্য টেকসই সমাধান তৈরি করে দীর্ঘমেয়াদি খাদ্যস্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে পারি। এনএসইউ থেকে আমরা প্ল্যাটফর্ম তৈরি করে দিতে পারি, কিন্তু মূল চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করবে যুব গবেষকরা, যারা নতুন ধারণা ও প্রযুক্তি ব্যবহার করে বাস্তব সমস্যার সমাধান করবে।’
বিশেষ অতিথি এনএসইউ বোর্ড অব ট্রাস্টিজের সদস্য এম এ কাশেম বলেন, এই প্ল্যাটফর্ম শুধু নতুন জ্ঞান অর্জনের জন্য নয়, বরং যুব গবেষকদের উদ্ভাবন ও কার্যকর সমাধান বাস্তবায়নের সুযোগ দেওয়ার জন্যও গুরুত্বপূর্ণ।
বিশেষ অতিথি এনএসইউ বোর্ড অব ট্রাস্টিজের সদস্য বেনজীর আহমেদ বলেন, ‘আমি ওআইসিকে আহ্বান জানাচ্ছি যে মুসলিম সম্প্রদায়ের জন্য বিশেষভাবে কৃষি, জৈবপ্রযুক্তি ও খাদ্যনিরাপত্তার ক্ষেত্রে উদ্যোগকে অগ্রাধিকার দেওয়া হোক, যাতে বিজ্ঞান ও উদ্ভাবনের মাধ্যমে আমাদের অঞ্চলে টেকসই উন্নয়ন সম্ভব হয়।’
সেশনের সভাপতি ছিলেন উপাচার্য আবদুল হান্নান চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘ভবিষ্যৎ প্রজন্মের খাদ্যনিরাপদ ও টেকসই হতে হবে। জিনোম এডিটিং একটি শক্তিশালী হাতিয়ার। ছাত্র ও যুব গবেষকদের অন্তর্ভুক্ত করে আমরা একটি প্রজন্মকে তৈরি করছি, যারা খাদ্যনিরাপত্তার গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে প্রস্তুত।’
অনুষ্ঠানে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন এনএসইউর কোষাধ্যক্ষ ও সহ–উপাচার্য (ভারপ্রাপ্ত) আবদুর রব খান। তিনি বলেন, ‘আজকের সংলাপ কেবল একটি অনুষ্ঠান নয়, এটি অর্থবহ সহযোগিতার নতুন পথ খুলেছে। একাডেমিয়া ও আন্তর্জাতিক সংস্থা একসঙ্গে কাজ করলে বাস্তবসম্মত সমাধান উদ্ভাবন সম্ভব।’
দুই দিনের (১৩ ও ১৪ সেপ্টেম্বর) এ অনুষ্ঠানে বিভিন্ন প্রযুক্তিগত সেশনের আয়োজন করা হবে। সেশনগুলোতে তুরস্ক, মালয়েশিয়া, আজারবাইজান, পাকিস্তান, কাজাখস্তানসহ বিভিন্ন দেশের বক্তারা অংশগ্রহণ করছেন। আন্তর্জাতিক এ কর্মশালা কৃষি-জৈবপ্রযুক্তিতে জ্ঞান ভাগাভাগি এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতার একটি গুরুত্বপূর্ণ প্ল্যাটফর্ম।
বিজ্ঞপ্তি