আন্তর্জাতিক সাক্ষরতা দিবস আজ

দেশে এখনো ২২ শতাংশ মানুষ নিরক্ষর

দেশে সাত বছর ও তদূর্ধ্ব জনগোষ্ঠীর মধ্যে প্রায় ২২ শতাংশ এখনো নিরক্ষর। এ জনগোষ্ঠী মূলত বিদ্যালয়বহির্ভূত বা ঝরে পড়া শিশু এবং শিক্ষার সুযোগ থেকে বঞ্চিত প্রাপ্তবয়স্ক নারী-পুরুষ।

গতকাল রোববার প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়। আজ ৮ সেপ্টেম্বর আন্তর্জাতিক সাক্ষরতা দিবস উদ্‌যাপনের তথ্য জানাতে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার, সচিব আবু তাহের মো. মাসুদ রানা প্রমুখ।

‘প্রযুক্তির যুগে সাক্ষরতার প্রসার’ প্রতিপাদ্য নিয়ে এবার দিবসটি উদ্‌যাপন হচ্ছে। এ উপলক্ষে আলোচনা সভা, উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা সম্মাননা ও তারুণ্যের উৎসবসহ বিভিন্ন কর্মসূচি থাকছে।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে সাক্ষরতা শুধু অক্ষরজ্ঞান নয়। মাতৃভাষায় পড়া, লেখা, অনুধাবন, যোগাযোগ এবং গণনাসহ জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে কার্যকরভাবে জ্ঞান প্রয়োগের সক্ষমতা অর্জন প্রকৃত সাক্ষরতা। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর সর্বশেষ প্রতিবেদন (বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সমীক্ষা-২০২৪) অনুযায়ী দেশের সাত বছর ও তদূর্ধ্ব জনগোষ্ঠীর মধ্যে বর্তমানে সাক্ষরতার হার ৭৭ দশমিক ৯ শতাংশ। অর্থাৎ প্রায় ২২ দশমিক ১ শতাংশ জনগোষ্ঠী এখনো নিরক্ষর। উন্নত ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গঠনের জন্য তাদের সাক্ষরজ্ঞান ও কর্মমুখী প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ মানবসম্পদে রূপান্তর করা অত্যন্ত জরুরি। উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা আইন-২০১৪ অনুযায়ী ১০ থেকে ১৪ বছর বয়সী বিদ্যালয়বহির্ভূত শিশুদের উপানুষ্ঠানিক প্রাথমিক শিক্ষা এবং ১৫ বছর ও তদূর্ধ্ব বয়সী নিরক্ষর নারী-পুরুষকে সাক্ষরতা, জীবিকায়ন দক্ষতা ও জীবনব্যাপী শিক্ষা দেওয়ার কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।

বাসসের খবরে বলা হয়েছে, দিবসটি পালন উপলক্ষে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরো আজ সোমবার রাজধানীর তেজগাঁওয়ে এক আলোচনা সভার আয়োজন করেছে। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা অধ্যাপক বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার প্রধান অতিথি হিসেবে এ আলোচনা সভায় উপস্থিত থাকবেন।

দিবসটি উপলক্ষে প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস বাণী দিয়েছেন।

উল্লেখ্য, ১৯৬৭ সাল থেকে বিশ্বব্যাপী এবং ১৯৭২ সাল থেকে স্বাধীন বাংলাদেশে ৮ সেপ্টেম্বর আন্তর্জাতিক সাক্ষরতা দিবস পালিত হয়ে আসছে।

অর্থনৈতিক, সামাজিক, রাজনৈতিক নানা ধরনের প্রতিবন্ধকতা থেকে মুক্তির অন্যতম উপায় হলো সাক্ষরতা অর্জন করা। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এই সাক্ষরতার সংজ্ঞায় ভিন্নতা থাকলেও ১৯৬৭ সালে ইউনেসকো সর্বজনীন একটা সংজ্ঞা নির্ধারণ করে। তখন শুধু কেউ নাম লিখতে পারলেই তাকে সাক্ষর বলা হতো।

পরবর্তী সময়ে প্রায় প্রতি দশকেই এই সংজ্ঞায় পরিবর্তন এসেছে এবং ১৯৯৩ সালের একটি সংজ্ঞায় ব্যক্তিকে সাক্ষর হওয়ার জন্য তিনটি শর্ত পূরণ করতে হয়। শর্ত তিনটি হচ্ছে—

১. ব্যক্তি নিজ ভাষায় সহজ ও ছোট বাক্য পড়তে পারবে;
২. ব্যক্তি নিজ ভাষায় সহজ ও ছোট বাক্য লিখতে পারবে এবং
৩. ব্যক্তি দৈনন্দিন জীবনের সাধারণ হিসাব-নিকাশ করতে পারবে।

স্বাধীন বাংলাদেশে মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য জাতিকে নিরক্ষরতার অভিশাপ থেকে মুক্ত করার লক্ষ্যে বাংলাদেশের সংবিধানের ১৭ অনুচ্ছেদে অবৈতনিক বাধ্যতামূলক শিক্ষার অধিকার সন্নিবেশিত হয়েছে।

সাক্ষরতা ও উন্নয়ন একই সূত্রে গাঁথা। নিরক্ষরতা উন্নয়নের অন্তরায়। টেকসই সমাজ গঠনের জন্য যে জ্ঞান ও দক্ষতা প্রয়োজন, তা সাক্ষরতার মাধ্যমেই অর্জন করা সম্ভব।