নতুন প্রকাশিত একটি বৈশ্বিক উচ্চশিক্ষা মানসূচক দেখিয়েছে, বিশ্বে উচ্চশিক্ষায় এখনো যুক্তরাষ্ট্র শীর্ষ অবস্থানে থাকলেও চীন দ্রুত সেই ব্যবধান কমিয়ে আনছে। বিশেষ করে শীর্ষস্থানীয় অভিজাত বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে। চীনের রেনমিন বিশ্ববিদ্যালয় গত বৃহস্পতিবার এই সূচক প্রকাশ করেছে। এতে দেশ ও অঞ্চলের একাডেমিক সক্ষমতা বিশ্লেষণ করা হয়েছে তিন স্তরের কাঠামোয়, এগুলো হলো বিষয়ভিত্তিক শাখা, বিশ্ববিদ্যালয় এবং বিদেশে পড়াশোনার গন্তব্য।
যা আছে মূল্যায়নে
সূচকটি মোট ৪২টি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষাক্ষেত্র মূল্যায়ন করেছে। এর মধ্যে মানবিক ও সামাজিক বিজ্ঞান রয়েছে ১৩টি এবং বিজ্ঞান, প্রকৌশল, কৃষি ও চিকিৎসাবিজ্ঞানের অধীনে রয়েছে ২৯টি বিষয়। প্রতিষ্ঠানগুলোকে A+ থেকে C গ্রেডে মূল্যায়ন করা হয়েছে, যেখানে একাডেমিক উদ্ভাবন (৫০ শতাংশ), মেধা উন্নয়ন (৩০ শতাংশ) এবং আন্তর্জাতিক সুনাম (২০ শতাংশ) বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে।
শীর্ষে যুক্তরাষ্ট্র
ফলাফলে দেখা যায়, যুক্তরাষ্ট্র এখনো শক্ত অবস্থানে রয়েছে। সামগ্রিক র্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষ ১০০ প্রতিষ্ঠানের ৩৫ শতাংশই যুক্তরাষ্ট্রের। বিষয়ভিত্তিক রেটিংয়েও মানবিক ও স্টেম (বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, প্রকৌশল ও গণিত) শিক্ষা উভয় ক্ষেত্রেই যুক্তরাষ্ট্র এগিয়ে।
র্যাঙ্কিংয়ে চীনের অগ্রগতি
তবে চীনা বিশ্ববিদ্যালয়গুলো দ্রুত অগ্রগতি ও বিস্তৃত মানের পরিচয় দিচ্ছে। র্যাঙ্কিংয়ের পরিধি যত বিস্তৃত হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের ব্যবধান তত কমছে। শীর্ষ ১০০-এ চীনের অংশ ১৪ শতাংশ (এর মধ্যে ১১টি চীনা মূল ভূখণ্ডের), শীর্ষ ৩০০-এ ১৫ শতাংশ এবং শীর্ষ ৫০০-এ বেড়ে ১৭ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। তালিকাভুক্ত অধিকাংশ চীনা প্রতিষ্ঠানই মূল ভূখণ্ডভিত্তিক।
বিষয়ভিত্তিক বিশ্লেষণে দেখা গেছে, চীনের স্টেম শিক্ষা খাতে রয়েছে ‘বিস্তৃত মান, তবে শীর্ষ চূড়া তুলনামূলক কম’। উপাদান বিজ্ঞান, ইলেকট্রনিক প্রকৌশল, রসায়ন ও কম্পিউটারবিজ্ঞানে চীন আন্তর্জাতিকভাবে শক্ত প্রতিযোগিতা গড়ে তুলেছে। তবে মানবিক ও সামাজিক বিজ্ঞানে, অর্থনীতি ছাড়া অন্য বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে এখনো উল্লেখযোগ্য ব্যবধান রয়েছে। গবেষকেরা বলছেন, এর পেছনে বৈশ্বিক একাডেমিক আলোচনার কাঠামো ও ইংরেজিভিত্তিক প্রকাশনা ব্যবস্থার প্রভাব রয়েছে।
র্যাঙ্কিং প্রকাশ না করার কারণ
রেনমিন বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল্যায়ন গবেষণাকেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক ঝোউ গুয়াংলি বলেন, ‘আমরা ইচ্ছাকৃতভাবে ১ থেকে ৫০০ পর্যন্ত ধারাবাহিক র্যাঙ্কিং প্রকাশ করছি না।’ তাঁর মতে, তালিকাভুক্ত সব প্রতিষ্ঠানই আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য মানসম্মত পছন্দ—এটি বোঝানোই উদ্দেশ্য, যাতে অতিরিক্ত র্যাঙ্কিং চাপ এড়ানো যায়।
বিশ্বের সবচেয়ে বেশি আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী পাঠানো দেশ হওয়ায়, বিদেশে শিক্ষার মান নির্ধারণে একটি বৈজ্ঞানিক ও বিশ্বাসযোগ্য মানদণ্ড চীনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে তিনি জানান। এটি জাতীয় স্বার্থ, শিক্ষাসেবার উন্নয়ন এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণভাবে শিক্ষার্থী ও তাঁদের পরিবারের কল্যাণের সঙ্গে যুক্ত।
শিক্ষার গন্তব্যে পরিবর্তন
অনলাইন শিক্ষা প্ল্যাটফর্ম ইওএলের (EOL) প্রধান সম্পাদক চেন ঝিওয়েন বলেন, গত পাঁচ বছরে পশ্চিমা উন্নত দেশগুলোতে চীনা শিক্ষার্থীর সংখ্যা ধারাবাহিকভাবে কমেছে। অন্যদিকে বেল্ট অ্যান্ড রোড উদ্যোগভুক্ত দেশ ও অঞ্চলে পড়াশোনার আগ্রহ বাড়ছে। শিল্প স্থানান্তরসহ বাস্তব কারণের ফলে এখন অনেক পরিবার থাইল্যান্ড বা মালয়েশিয়ার মতো দেশকে শিক্ষার গন্তব্য হিসেবে বেছে নিচ্ছে। তিনি বলেন, এ ধরনের গতিশীল বাস্তবতা সূচকে অন্তর্ভুক্ত করা হলে আন্তর্জাতিক শিক্ষার পরিবর্তনশীল চিত্র আরও স্পষ্টভাবে প্রতিফলিত হবে।