আদালত, ক্লাসরুম থেকে রাজনীতির মঞ্চ—সবকিছুতে জার্মানিতে বাড়ছে ইংরেজি ভাষার কদর, এতে বিশ্ব দরবারে আরও গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে দেশটি। একটা সময় ছিল যখন জার্মান রাজনীতিবিদেরা ইংরেজি বলতে চাইতেন না। কিন্তু এখন বহু শীর্ষ নেতৃত্ব তাঁদের ইংরেজির জ্ঞান দেখাতে ছাড়ছেন না।
সম্প্রতি দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী বরিস পিস্টোরিয়াস ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী আনালেনা বেয়ারবককে দেখা গেছে ইংরেজিতে কথা বলতে। দেখা গেছে অর্থমন্ত্রী ক্রিস্টিয়ান লিন্ডনারকেও ব্লুমবার্গ টিভিতে জার্মান অর্থনীতি বিষয়ে ইংরেজিতে তর্ক করতে।
এর আগে সাবেক চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেলকে প্রায় কখনোই দেখা যায়নি ইংরেজি বলতে। তা সে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়েই হোক বা ২০১৯ সালে সিএনএনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারেই হোক। কিন্তু বর্তমান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎজ তা না করে একই চ্যানেলে নিজের বক্তব্য ইংরেজিতেই দেন। তবে একসময় সাবেক জার্মান মন্ত্রী গুইডো ভেস্টারওয়েলে ইংরেজির বিরোধিতা করতেন, তাঁর দল এফডিপিই বর্তমানে জার্মানিতে ইংরেজির ব্যবহার বাড়ানোর পক্ষে।
জার্মান অর্থনীতি রপ্তানির ওপর নির্ভরশীল। বিশ্বের বড় বড় অনেক সংস্থার কার্যালয় দেশটিতে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই ইংরেজি এখানে বাণিজ্যের ভাষা। এ বছরের আগস্টে জার্মান মন্ত্রিসভা একটি বিল পাস করে, এর মাধ্যমে ইংরেজি ভাষায় বাণিজ্যের কাজ চালানোর ব্যবস্থার নির্দেশ দেওয়া হয়। এ বিলের লক্ষ্য সম্পর্কে বলতে গিয়ে সরকারের মুখপাত্র ক্রিস্টিয়ান হফমান বলেন, জার্মানিকে বিচারব্যবস্থা ও অর্থনীতির দিক দিয়ে বিশ্বের কাছে আরও আকর্ষণীয় করে তোলাই লক্ষ্য।
তবে জার্মান ভাষা থেকে সহজেই কি ইংরেজিতে যাওয়া যাবে? এ বিষয়ে বাণিজ্যবিষয়ক আইনজীবী মিশায়েল ভাইগেল মনে করেন, বদল আসতে সময় লাগবে। এ ধরনের বদলকে বাস্তবায়ন করতে বিনিয়োগ দরকার, দরকার সময়।
সম্প্রতি পাস হওয়া দক্ষ কর্মীবিষয়ক আইনেও জার্মান ভাষার ওপর জোর কমানো হয়েছে। স্কুল–কলেজে দ্বিতীয় ভাষা হিসেবে ইংরেজিকে নিয়ে আসার প্রস্তাব রেখেছে দেশটি। তবে এটা নিয়ে জনগণের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে।
বিভিন্ন সরকারি অফিসে ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে ইংরেজির ব্যবহার। কিন্তু আরও উন্নত অনুবাদের কাজ ও প্রশিক্ষিত কর্মীর প্রয়োজন চোখে পড়ার মতো।
২০০৫ সাল থেকে জার্মানির সব প্রাথমিক স্কুলেই ইংরেজি পড়ানো হয়। তবে ফ্রান্স সীমান্তের কাছের অঞ্চলগুলোয় এখনো ইংরেজি চালু হয়নি। উচ্চশিক্ষার ডিগ্রি প্রোগ্রামগুলোর ১০ শতাংশই ইংরেজিতে পড়ানো হয়। এক সমীক্ষায় বলা হয়েছে, ইংরেজির ব্যবহার কম হওয়ার কারণে অনেক ক্ষেত্রেই বিদেশিরা জার্মানিতে দীর্ঘদিন থাকতে চান না।
কিন্তু ব্যতিক্রম বার্লিন। সেখানে বেশ কিছু ব্যবসার ক্ষেত্রে জার্মান ভাষার ব্যবহার প্রায় নেই বললেই চলে। একসময় যে বার্লিনে জার্মান ভাষা না জানলে কাজ পাওয়া কঠিন ছিল, সেই বার্লিনেই জার্মান ভাষা না জানলেও কাজ করছে নতুন প্রজন্ম।