যুক্তরাষ্ট্র এখনো আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য সবচেয়ে জনপ্রিয় গন্তব্য। বিশ্বের সেরা ১০০ বিশ্ববিদ্যালয়ের এক-তৃতীয়াংশের বেশি যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থিত। তবে শুধু র্যাঙ্কিং বা কোর্স নয়, সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হলো—কোন শহরে পড়বেন?
নিউইয়র্ক বা লস অ্যাঞ্জেলেসের মতো জনবহুল শহর থেকে শুরু করে অ্যান আরবার বা বোল্ডারের মতো ছোট কলেজ টাউন—প্রতিটি জায়গার অভিজ্ঞতা ভিন্ন। তাই যুক্তরাষ্ট্রে পড়ার গন্তব্য বেছে নিতে বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দেন ‘থ্রি–সি’র। এগুলো হলো ‘সম্প্রদায় বা কমিউনিটির আকার, সংস্কৃতি ও জলবায়ু।
১. কমিউনিটির আকার: বড় শহর নাকি ছোট কলেজ টাউন
যুক্তরাষ্ট্র বিশাল ও বৈচিত্র্যময়। বড় শহরগুলোতে পাওয়া যায় নানা সংস্কৃতির মিলন, বৈচিত্র্যময় খাবার এবং পেশাগত নেটওয়ার্ক ও ইন্টার্নশিপের সুযোগ। এখানে নিজের দেশের সাংস্কৃতিক বা ধর্মীয় কমিউনিটি খুঁজে পাওয়া সহজ, যা প্রবাসজীবনে মানসিক সহায়তা দেয়। তবে বড় শহরে বসবাসের খরচ তুলনামূলকভাবে বেশি।
অন্যদিকে ছোট শহর বা বিশ্ববিদ্যালয়কেন্দ্রিক কলেজ টাউনগুলো সাধারণত সাশ্রয়ী ও শিক্ষার্থীকেন্দ্রিক। এসব জায়গায় সবকিছু ঘুরেফিরে বিশ্ববিদ্যালয়কে ঘিরেই থাকে, যা আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য আরামদায়ক পরিবেশ তৈরি করে।
খরচের দিকেও দৃষ্টি রাখা জরুরি। ২০২৪ সালে মার্কিন শ্রম পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্যমতে, যুক্তরাষ্ট্রে একজন ব্যক্তির গড় মাসিক ব্যয় ছিল প্রায় পাঁচ হাজার মার্কিন ডলার, তবে এটি অঙ্গরাজ্যভেদে ভিন্ন। যেমন ওয়াশিংটন ডিসির কাছের লাউডাউন কাউন্টি (ভার্জিনিয়া) শহরে মাসিক খরচ ৯ হাজার ডলার ছাড়িয়ে যেতে পারে, আবার টেক্সাসের হিউস্টনে গড় মাসিক খরচ ৩ হাজার ডলারের কম।
২. সংস্কৃতি: কেমন অভিজ্ঞতা চান
কলেজজীবন শুধু পড়াশোনা নয়, এটি আপনার আগামী কয়েক বছরের জীবনধারার অংশ। ভাবুন—
—আপনি কি ক্যাম্পাসে থাকতে চান, নাকি বাইরে?
—আপনি কি সংগীত উৎসব, খেলাধুলা বা আউটডোর অ্যাডভেঞ্চারে আগ্রহী?
—নির্দিষ্ট খাবার বা উপাসনালয়ের প্রয়োজন আছে কি?
—পড়াশোনার পাশাপাশি পার্টটাইম কাজ করতে চান?
ছোট ক্লাস ও শিক্ষক-শিক্ষার্থীর ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ চাইলে লিবারেল আর্টস কলেজ হতে পারে ভালো বিকল্প। আর যদি বড় স্পোর্টস ইভেন্ট ও প্রাণবন্ত ক্যাম্পাস কালচার উপভোগ করতে চান, তবে ‘বিগ টেন কনফারেন্স’-এর বিশ্ববিদ্যালয়গুলো দেখুন। এগুলো পড়াশোনা ও ক্রীড়া উভয়ের ভারসাম্য রক্ষা করে।
৩. জলবায়ু: আবহাওয়া কেমন সামলাতে পারবেন
যুক্তরাষ্ট্রে একাধিক জলবায়ু অঞ্চল রয়েছে—রৌদ্রোজ্জ্বল মরুভূমি থেকে শুরু করে বরফাচ্ছন্ন শীত পর্যন্ত। তাই প্রস্তুতি নেওয়া জরুরি।
—পশ্চিম উপকূল (ক্যালিফোর্নিয়া, ওয়াশিংটন): দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়া রোদেলা, সান ফ্রান্সিসকো তুলনামূলক ঠান্ডা ও কুয়াশাচ্ছন্ন। ওয়াশিংটন ও ওরেগনে বৃষ্টি বেশি হয়।
—দক্ষিণ-পশ্চিম (অ্যারিজোনা): ফিনিক্সে বছরে প্রায় ৩০০ দিন রোদ থাকে, তবে ফ্ল্যাগস্টাফের মতো উঁচু এলাকায় ঠান্ডা ও তুষার পড়ে।
—দক্ষিণ-পূর্ব (জর্জিয়া, ফ্লোরিডা): গরম ও আর্দ্র গ্রীষ্ম, তাই নির্ভরযোগ্য এয়ার কন্ডিশনিং অপরিহার্য।
যুক্তরাষ্ট্রে কোথায় পড়বেন, তা নির্ধারণ কেবল একাডেমিক সিদ্ধান্ত নয়। এটি আপনার জীবনধারা, কমিউনিটি ও ব্যক্তিগত স্বাচ্ছন্দ্যেরও বিষয়। তাই ভালোভাবে গবেষণা করুন, বর্তমান শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলুন, আর কল্পনা করুন—আপনার স্বপ্নের শিক্ষাজীবন কেমন হতে পারে।