
ডেনমার্ক আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য আরও কঠোর নিয়ম নীতি চালু করছে। দেশটির মিনিস্ট্রি অব ইমিগ্রেশন অ্যান্ড ইন্টিগ্রেশন জানিয়েছে, নতুন নীতিমালা এবং উদ্যোগগুলো বাংলাদেশ ও নেপালের মতো দেশের নাগরিকদের জন্য ডেনমার্কের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তি হওয়া উল্লেখযোগ্যভাবে কঠিন করে তুলবে; যদি তাদের সঠিক শিক্ষাগত যোগ্যতা না থাকে। এই পদক্ষেপের অংশ হিসেবে, সরকার আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের পরিবারের সদস্য বা নির্ভরশীলদের আনার ক্ষমতাও সীমিত করবে। আর পড়াশোনা শেষে ওয়ার্ক পারমিটের (কাজের অনুমতি) মেয়াদ তিন বছর থেকে কমিয়ে মাত্র এক বছর করবে।
ডেনমার্কের সরকার ঘোষণা দিয়েছে, তৃতীয় কোনো দেশের (ইইউ নয়, এমন দেশ) শিক্ষার্থীদের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি নিয়ম আরও কঠোর করা হবে। বিশেষ করে বাংলাদেশ ও নেপালের শিক্ষার্থীরা যাতে ছাত্র ভিসা ব্যবহার করে শ্রমবাজারে ঢুকতে না পারেন, সে জন্য এই কড়া পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। ডেনমার্কের ইমিগ্রেশন ও ইন্টিগ্রেশন মন্ত্রণালয় ১৮ সেপ্টেম্বর এক নোটিশে জানায়, এখন থেকে ‘যাদের প্রয়োজনীয় যোগ্যতা নেই, তাদের জন্য ডেনিশ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করা অনেক বেশি কঠিন হবে।’
সাবেক মন্ত্রী কারে ডিবভাড বেক বলেন, ‘দুর্ভাগ্যজনকভাবে, কিছু মানুষ ছাত্র ভিসাকে ডেনমার্কের শ্রমবাজারে প্রবেশের ব্যাকডোর হিসেবে ব্যবহার করেছে। আমরা এখন এটার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছি। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশ ও নেপাল থেকে শিক্ষার্থী ও পরিবারের সংখ্যা বিপুলভাবে বেড়েছে।’
নতুন নীতির বিস্তারিত
১. কঠোর একাডেমিক যোগ্যতা: তৃতীয় কোনো দেশের শিক্ষার্থীদের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে হতে পারে বা নির্দিষ্ট ভাষা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে।
২. নথি যাচাই: ন্যাশনাল আইডি সেন্টারের সহায়তা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে শিক্ষার্থীদের শিক্ষাগত যোগ্যতার কাগজপত্র কঠোরভাবে যাচাই করতে হবে।
৩. আগের পারমিট পর্যালোচনা: বাংলাদেশি ও নেপালি শিক্ষার্থীদের আগে দেওয়া রেসিডেন্স পারমিটগুলোর (আবাসন অনুমতি) প্রতারণার অভিযোগ যাচাই করা হবে।
৪. পরিবার আনার সীমাবদ্ধতা: শিক্ষার্থীদের স্বামী/স্ত্রী বা নির্ভরশীল সদস্য আনার সুযোগ কমিয়ে দেওয়া হবে।
৫. পড়াশোনার পরে কাজের সময় কমানো: পড়াশোনা শেষে কাজের অনুমতি তিন বছর থেকে কমিয়ে এক বছরে নামানো হয়েছে।
৬. জালিয়াতি রোধে পদক্ষেপ: এজেন্ট ও ভুয়া নথির মাধ্যমে ভর্তি প্রতিরোধে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে নতুন নিয়ম অনুসরণ করতে হবে।
নতুন নীতিতে ডেনমার্কের লক্ষ্য হলো—শিক্ষার্থীদের প্রকৃত একাডেমিক যোগ্যতার ভিত্তিতে সুযোগ দেওয়া, ভিসার অপব্যবহার রোধ এবং শিক্ষা ও শ্রমবাজারের মান বজায় রাখা। বাংলাদেশ ও নেপালের শিক্ষার্থীদের জন্য এটি বড় পরিবর্তন, যা ভবিষ্যতে ইউরোপে পড়াশোনা করতে ইচ্ছুকদের পরিকল্পনায় প্রভাব ফেলতে পারে।
৭. টিউশন ফি বৃদ্ধি: শিক্ষার্থীদের জন্য টিউশন ফি বাড়ানো হবে, যাতে ব্যয় সংবেদনশীল দেশগুলো থেকে আবেদন কম আসে।
৮. এজেন্ট ও নিয়োগ পর্যবেক্ষণ: ডেনমার্ককে সহজ রেসিডেন্সের (আবাসিক হওয়ায় সুযোগ) দেশ হিসেবে প্রচার রোধে এজেন্টদের ওপর নজরদারি বাড়ানো হবে।
৯. মেধাবী শিক্ষার্থীদের জন্য সহায়তা: দক্ষ ও একাডেমিকভাবে শক্তিশালী শিক্ষার্থীদের সহায়তা করবে ডেনমার্ক।
১০. তথ্যনির্ভর সিদ্ধান্ত গ্রহণ: আটটি ডেনিশ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ঝরে পড়া ও পাসের হার বিশ্লেষণ করেই নীতিগুলো প্রণয়ন করা হয়েছে।
তথ্য ও পরিসংখ্যান
২০২২ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে চীনের মাত্র ১ শতাংশ শিক্ষার্থী ও যুক্তরাষ্ট্রের ২ শতাংশ শিক্ষার্থীদের পরিবারের সদস্য নিয়ে ডেনমার্কে নিয়ে গেছেন। একই সময়ে এ হার নেপাল ৭৪ শতাংশ, বাংলাদেশ ৫৮ শতাংশ আর ভারত ২৩ শতাংশ।
এদিকে আরহুস বিশ্ববিদ্যালয়ের এক জরিপে দেখা গেছে, বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের এক-তৃতীয়াংশ ‘পড়াশোনামুখী নয়’ বলে বিবেচিত হয়েছে। প্রথম বর্ষে ঝরে পড়ার হার ১৩ শতাংশ, যেখানে অন্য আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে তা মাত্র ৪ শতাংশ।
বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার পাসের হার ৫৫-৬৫ শতাংশ, সেখানে অন্য দেশের শিক্ষার্থী ক্ষেত্রে এ হার ৯০ শতাংশ।
বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর প্রতিক্রিয়া
বিশ্ববিদ্যালয়গুলো জানিয়েছে, অনেক শিক্ষার্থী গ্রুপ ওয়ার্ক ও পরীক্ষার পদ্ধতির সঙ্গে অপরিচিত, যা একাডেমিক চ্যালেঞ্জ তৈরি করে। আরহুস বিশ্ববিদ্যালয় জানিয়েছে, আমরা সিদ্ধান্ত নেব কোন পদক্ষেপ সবচেয়ে কার্যকর এবং তা বাস্তবায়ন করব।