
দেশে নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠায় ‘একটা অঘটন ঘটে গিয়েছে’ উল্লেখ করে নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান বদিউল আলম মজুমদার বলেছেন, ‘আমরা ব্যর্থ হয়েছি, আমি তো বললাম...আমি অকপটে স্বীকার করছি, আমরা ব্যর্থ হয়েছি। নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে একটা অঘটন ঘটে গেছে, একটা বিপর্যয় ঘটে গেছে। তো এখন এটার জন্য আমরা সবাই দায়ী।’
আজ শনিবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারে প্রথম আলো কার্যালয়ে ‘সংসদে নারী আসন ও নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন’ শীর্ষক এক গোলটেবিল বৈঠকে বদিউল আলম মজুমদার এ কথাগুলো বলেন। এই গোলটেবিলের আয়োজন করেছে প্রথম আলো। গোলটেবিল বৈঠকটি সঞ্চালনা করেন প্রথম আলোর সহযোগী সম্পাদক সুমনা শারমীন। এতে সংসদে নারী আসন নিয়ে ধারণাপত্র তুলে ধরেন প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক নাজনীন আখতার।
আলোচনায় বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘আমার মনে হয়, ঐকমত্য কমিশন এবং অন্য কাউকে দোষারোপ করে এতে জয় আসবে না। এতে কিন্তু বিজয়ী হবেন না। এই নারীর অধিকার এখানে প্রতিষ্ঠিত হবে না। আমার মনে হয়, আপনাদের একটু ওই যে সুস্পষ্ট ধারণা থাকা দরকার যে ঐকমত্য কমিশনের ম্যান্ডেটটা কী ছিল? ঐকমত্য কমিশনের ম্যান্ডেটটা ছিল রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলাপ আলোচনা করে কতগুলো বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছানো।’
বিপর্যয়ের জন্য নারীরা যদি পুরুষদের দায়ী করেন তাহলে ‘প্রতিপক্ষ চিহ্নিত’ করতে ভুল হবে বলে মন্তব্য করেন নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান। তাঁর মতে, প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও যাঁরা নারীর অধিকারের ক্ষেত্রে কাজ করেছেন, তাঁদের প্রতিপক্ষ বানানো হলে এটি হবে ‘মিছে মিছে কাঠগড়া’য় দাঁড় করানো। এ ছাড়া ঐকমত্য কমিশন নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেক সমালোচনা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।
বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘আমার মনে হয়, আমাদের যুদ্ধক্ষেত্রে আপনাকে (নারীর) শত্রুকে চিহ্নিত করতে হবে। শত্রুকে চিহ্নিত করে আক্রমণ করতে হবে। আপনার শত্রু আপনার সামনে, কিন্তু আপনি যদি আপনার বন্দুক–কামান অন্যদিকে দাগান তাহলে কিন্তু আপনি (নারী) জয়ী হবেন না।’
সংসদে নারীদের ৫০ শতাংশের প্রতিনিধিত্ব থাকাটা তাঁদের অধিকার উল্লেখ করে নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান বলেন, ‘এখানে একটা বিপর্যয় ঘটে গেছে। তো এখন আমাদের মনে হয়, একটু নির্মোহভাবে বিশ্লেষণ করা দরকার, আমাদের একটু নিজেদের ভাবা দরকার, কী ঘটল, কেন ঘটল?’ তিনি বলেন, এ ক্ষেত্রে পুরুষতন্ত্রের জয় হয়েছে। পাশাপাশি নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে অনেক সময় নারীরাও বিরোধিতা করেছেন।
বিগত ২০০৭ সালে স্থানীয় সরকার শক্তিশালী করার সুযোগ হয়েছে উল্লেখ করে বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘সেদিন আমি বহু চেষ্টা করেছি, আমাদের বন্ধুদের, অনেক বন্ধুর কাছ থেকে সহায়তা–সমর্থন পেতে, পাইনি।’ তখনকার অধ্যাদেশে ৪০ শতাংশ নারী প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিতের বিষয়টি ছিল জানিয়ে তিনি বলেন, ‘তখন যদি ৪০ শতাংশ নারী দাঁড়িয়ে যেত আজকে হাজার হাজার নারী নেতৃত্ব সৃষ্টি হতো।’
এ ছাড়া বিদ্যমান কাঠামোয় নারীর প্রতিনিধিত্ব বাড়াতে নির্বাচনে তিনটি আসনের একটি নারীদের জন্য দেওয়া, তাঁদের সরাসরি মনোনয়ন এবং ঘূর্ণমান পদ্ধতির কথাও বলেন তিনি।
গোলটেবিল বৈঠকে অংশ নিয়েছেন নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রধান শিরীন পারভীন হক, গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধূরী, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি ফওজিয়া মোসলেম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সামিনা লুৎফা, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম, সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম, নিজেরা করির সমন্বয়কারী খুশী কবির, একশনএইড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ কবির, নারীপক্ষের সভানেত্রী গীতা দাস, গার্মেন্টস শ্রমিক সংহতির সভাপ্রধান তাসলিমা আখতার, স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশনের সদস্য ইলিরা দেওয়ান, জুলাই আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক ও শিক্ষার্থী নাজিফা জান্নাত।