সংগীত : কনা ও ইমরান

গানের দুই ফেরিওয়ালা

ইমরান ও কনা। ছবি: খালেদ সরকার
ইমরান ও কনা। ছবি: খালেদ সরকার

সাম্প্রতিক সময়ে প্লেব্যাক, মঞ্চ ও অডিও অ্যালবামে দর্শকশ্রোতাপ্রিয় কনা ও ইমরান। এক বিকেলে গানের আলপথ ধরেই এগিয়ে চলে তাঁদের সঙ্গে দীর্ঘ আলাপচারিতা।
সংগীতাঙ্গনে কনা ও ইমরানের রসায়নটা মূলত প্লেব্যাক থেকে। কনাই মনে করিয়ে দিলেন, ‘ইমরানের সঙ্গে করা আমার প্রথম গানটি ছিল একটি ছবির গান। ছবির নাম তুমি সন্ধ্যার মেঘমালা।’ ইমরানেরও তাতে সায় ‘ও হ্যাঁ হ্যাঁ’ বলে।
ইমারনের ভাষায়, ‘গানটি ছিল হাবিব ভাইয়ের কম্পোজিশনে। ওটাই আমার প্রথম প্লেব্যাক। পাশাপাশি ওটা ছিল হাবিব ভাই এবং কনা আপুর সঙ্গে প্রথম কাজ।’ কথা টেনে নিলেন কনা। ‘গানটি ছিল একটু ফাংকি টাইপের। শফিক তুহিন ভাইয়ের লেখা ওই গানের কথাটা ছিল এ রকম—“তুমি রোমিও আমি জুলিয়েট”।’
স্মৃতি হাতড়ে ইমরান বললেন, ‘সেদিন আমি পাঞ্জা​িব পরে গিয়েছিলাম। সিঙ্গার বুথে দাঁড়ানোর পর হাবিব ভাই হাসতে হাসতে বললেন, “তুমি পাঞ্জাবি পরে এসেছ কেন? এটা তো ফাংকি টাইপ গান। গাইতে গেলে ফিলই তো পাবে না।” গাইতে গিয়ে সত্যিই ঠিকমতো হচ্ছিল না। একপর্যায়ে হাবিব ভাই বললেন, “ইমরান, না গাইতে পারলে চলে আসো।’ তারপরই মাথায় জেদ চাপে। শেষ পর্যন্ত ভালোভাবেই শেষ করি।’ তবে কনার কথায় আক্ষেপ, ‘জানেন, গানটি ওই রেকর্ড পর্যন্তই। পাঁচ বছর আগে ওই ছবির গানের অডিও অ্যালবাম বের হলেও ছবিটি আর নির্মাণ হয়নি।’

দুজনের একসঙ্গে গাওয়া দ্বিতীয় গানটি ছিল মেয়েটি আবোলতাবোল ছেলেটি পাগল-পাগল ছবিতে। তৃতীয় গানটিও প্লেব্যাক। ছুঁয়ে দিলে মন ছবির ‘শূন্য থেকে আসে প্রেম’ গানটি। দুজনেই বলেন, এ গানটি শ্রোতাপ্রিয় হয়েছিল। এরপর মঞ্চে, অডিও অ্যালবাম সবখানেই তাঁরা একসঙ্গে কাজ করেছেন। তবে সবকিছু ছাপিয়ে সম্প্রতি তাঁদের দুজনের গাওয়া যে গানটি আলোচনায় এসেছে, সেটি শওকত আলী ইমনের কম্পোজিশনে বসগিরি ছবির ‘দিল দিল দিল’ গানটি।

কনা বলেন, ‘এবার ঈদ করতে গাজীপুর গেলাম। দুপুরে বের হয়েছি। বাজারের দিকে যেতেই কানে এল মুসাফির ছবিতে ইমরানের গাওয়া “তোর ওই দুহাতের আলতো ছোঁয়াতে” গানটি। ওকে ফোন দিয়ে বললাম, তোর গান বাজছে। তারপর কিছুদূর যেতেই হঠাৎ কানে এল অন্য একটা গান। কণ্ঠটা আমার। ভালো করে শুনি। আরে এটা তো “দিল দিল” গানটি। আমি তো অবাক। সাত দিনও হয়নি, এরই মধ্যেই এই পাড়াগাঁয়ে এই গান।’ ইমরান বললেন, ‘ইউটিউবে এটি এখন পর্যন্ত ২২ লাখ ছাড়িয়েছে। সেদিন মঞ্চে দর্শকের অনুরোধেও গানটি গাইতে হয়েছে।’

দুজনই এখন আমজনতার শিল্পী। তাঁদের এই হয়ে যাওয়ার পথটা তৈরি করতে নিশ্চয়ই অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে?

‘আমি আগে বলি।’ অনুমতি নিয়েই শুরু করলেন কনা। ‘গান নিয়ে আমার সংগ্রাম দীর্ঘদিনের। ছোটবেলায় বিটিভিতে ছোটদের অনুষ্ঠানে গান করেছি। যখন একটু বড় হলাম, ভাবলাম, একটা অ্যালবাম বের করলেই হয়তো মানুষ আমাকে চিনে ফেলবে। ২০০০ সালে প্রথম অ্যালবাম। কিন্তু কিছুই হলো না। তারপর ২০০৩ সালে নাফিসা, রোমানা, তিশাকে নিয়ে ব্যান্ড করলাম “এঞ্জেল ফোর”। তাতেও কিছু হলো না। মিউজিক ভিডিওর পরিকল্পনা করি। তাতে সবাই আমাকে চিনবে। আমার “ধিমতানানা” গানটি প্রথমে অ্যালবামে বের হলেও ওই চিন্তা থেকে পরে এর মিউজিক ভিডিও করি। পাশাপাশি আরও কয়েকটি গানেরও মিউজিক ভিডিও করি। বলতে দ্বিধা নেই, তারকা হওয়ার জন্যই আমি এগুলো করেছি। যদিও এটা ছিল ভুল কনসেপ্ট।’

ইমরান শুরু করেন, ‘আমি ‘চ্যানেল আই সেরাকণ্ঠ’ থেকে উঠে এসেছি ২০০৮ সালে। প্রথম অ্যালবামের জন্য চ্যানেলের কাছে ধরনাও দিই। অ্যালবাম বেরও হয়। কিন্তু ওই পর্যন্তই। নিজের জায়গাটা তবু তৈরি হয়নি। আস্তে আস্তে নিজেই কম্পোজ করা শুরু করি। ২০১২ সালে একটি মিক্সড অ্যালবামে পূজার সঙ্গে গাওয়া আমার মৌলিক গান “তুমি দূরে দূরে থেকো না” বের হয়। গানটি প্রথমে তেমন সাড়া ফেলেনি। তখন পূজাই গানটির মিউজিক ভিডিও করার উদ্যোগ নেয়। তাতে সফলতা আসে। গানটি বেশ শ্রোতাপ্রিয় হয়। এরপরই কোনো গান ভালো হলেই ধারাবাহিকভাবে মিউজিক ভিডিও করার পরিকল্পনাটাও সঙ্গে যুক্ত করি।’

যেহেতু এখন উন্মুক্ত আকাশ। রিমোর্ট যন্ত্রেই সারা বিশ্ব। তাই কোটি কোটি দর্শককে ধোঁকা দেওয়ার সুযোগ নেই। আপনাদের দুজনেরই গানের ভিডিও নিয়ে নকলের অভিযোগও শোনা গিয়েছিল।

ইমরান বলেন প্রথমে, ‘আসলে আমরা যখন একটা মিউজিক ভিডিওর পরিকল্পনা করি, তখন কাজটা ভালো হওয়ার জন্য নামী কোনো নির্মাতাকে নিয়োগ দিই। কিন্তু তিনি যদি আমাদের অজান্তে অন্য কোনো গানের অনুকরণে ভিডিওটি নির্মাণ করেন, তবে দোষটা তাঁরই। আমাদের নয়।’

কিন্তু পড়ে যাচ্ছে তো আপনাদের গায়েই। কনা বলেন, ‘কথা সত্য। আমাদের অজান্তে যেটা হয়েছে, সেটার অপবাদ আমাদের কাঁধেই এসে পড়েছে। তাই এখন আমরা অনেক সচেতন।’

ইদানীং আমাদের চলচ্চিত্রে পার্শ্ববর্তী দেশের সংগীত পরিচালক, গীতিকার এবং সংগীতশিল্পীদের গান ব্যবহারের প্রবণতা বেড়েছে। বিষয়টি কীভাবে দেখেন?

কনা বলেন, ‘যতই স্যান্ডইউচ-বার্গার খাই না কেন, দিনের শেষে আমরা কিন্তু মাছে-ভাতে বাঙালি। এক দিন-দুই দিন ওগুলো ভালো লাগতে পারে। প্রতিদিন নয়। ডাল-ভাতেই আমরা অভ্যস্ত। আমি একজন পেশাদার শিল্পী। আমিও কলকাতার সুরকারের সুরে গান করেছি। ভালো অভিজ্ঞতা হয়েছে। কিন্তু আমি দেখেছি, আমার দেশের সুরই আমাদের শ্রোতারা নিয়েছে। বাইরেরটা নয়।’

ইমরান তার প্রমাণ দেন। বলেন, ‘গত রোজার ঈদের হিট ছবি শিকা​িতে বাইরের শিল্পীর দারুণ একটা গান ছিল। কিন্তু ওই গানের চেয়ে সম্রাট ছবিতে আমার গাওয়া “রাতভর” গানটি বেশি হিট।’

দুই সংগীতযোদ্ধাই এখনো একা। মানে বিয়ে থা করেননি। বিয়েভাবনার কথা জানতে চাইলে কনা বেশ সরব। ‘আমি তো পুরাই তৈরি বিয়ের জন্য। সবকিছু ঠিকঠাক। এখন শুধু ঘণ্টা বাজার অপেক্ষায়।’ তবে ইমরানের অতটা তাড়া নেই। বলেন, ‘ঠিক এখনই ভাবছি না। ক্যারিয়ারটা আরও একটু গুছিয়ে নিই। বিয়ের ঘণ্টা বাজলে বাজবে পাঁচ বছর পর।’