ভিক্টোরিয়া চাকমা। ছবি: শিল্পীর সৌজন্যে
ভিক্টোরিয়া চাকমা। ছবি: শিল্পীর সৌজন্যে

হঠাৎ নায়িকা হয়ে গেলাম

৩০তম বুসান চলচ্চিত্র উৎসবে ‘আ উইন্ডো অন এশিয়ান সিনেমা’ বিভাগে গতকাল দেখানো হয়েছে ‘বালুর নগরীতে।’ আজ ও আগামীকাল শো রয়েছে। মেহেদী হাসানের সিনেমাটি দিয়েই বড় পর্দায় ভিক্টোরিয়া চাকমার অভিষেক হলো। সিনেমার শুটিংসহ নানা অভিজ্ঞতা নিয়ে তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন মনজুরুল আলম

প্রশ্ন

মুঠোফোনে আপনাকে পাওয়া যাচ্ছিল না...

ভিক্টোরিয়া চাকমা: নম্বরটি আপাতত বন্ধ রাখা আছে। তবে হোয়াটসঅ্যাপে নিয়মিত যুক্ত আছি।

প্রশ্ন

তাহলে আপনি কি এখন বুসান চলচ্চিত্র উৎসবে?

ভিক্টোরিয়া চাকমা: না না, আমি বুসানে যাইনি। দেশেই আছি। এমনিতেই ফোন বন্ধ করে রাখছি। কদিন আগেই তো কার্লোভি ভেরি চলচ্চিত্র উৎসব থেকে ঘুরে এলাম। সামনে তো আরও উৎসবে যেতে হবে। সব উৎসবে হয়তো অংশ নিতে পারব না।

ভিক্টোরিয়া চাকমা। ছবি: শিল্পীর সৌজন্যে
প্রশ্ন

এটা আপনার প্রথম সিনেমা। সিনেমায় যুক্ত হওয়ার গল্পটা শুনতে চাই...

ভিক্টোরিয়া চাকমা: ২০২২ সাল থেকে মডেলিং করতাম। সেখানে জয়িতা আফরিন আপুর সঙ্গে বেশি কাজ হতো। কাজের ছবিগুলো ফেসবুকে পোস্ট করা হতো। পরিচালক মেহেদী হাসান ভাই ও কাস্টিং ডিরেক্টর আমার লুক দেখে ফোন দেন। পরে জানতে পারি, তাঁরা সিনেমায় আমার মতো এমন একজনকেই খুঁজছেন। গল্প, চরিত্র আমার ভালো লাগে। হঠাৎ সিনেমার নায়িকা হয়ে গেলাম (হাসি)। আগে আমি শুধু মডেলিং করেছি। কিন্তু নাটক বা সিনেমায় কখনোই অভিনয় করা হয়নি। সেখান থেকে সাহস নিয়েই সিনেমায় নাম লিখিয়েছি। অভিনয় করতে গিয়ে খুব বেশি সমস্যা হয়নি। সবকিছু সহজই মনে হয়েছে।

প্রশ্ন

অভিনয় সহজ মনে হওয়ার বিশেষ কোনো কারণ আছে?

ভিক্টোরিয়া চাকমা: প্রথমত, এমা চরিত্রটির সঙ্গে আমার জীবনের মিল রয়েছে। সে একটু চুপচাপ থাকে, একা থাকতে পছন্দ করে। অন্তর্মুখী টাইপ। আমিও সে রকম। আবার তাকেও এই মহানগরীতে একা বেঁচে থাকতে হয়। আমাকেও রাঙামাটি থেকে ঢাকায় এসে এমার মতো জীবনসংগ্রাম চালিয়ে যেতে হয়। আমার মা-বাবা রাঙামাটিতে থাকেন। আমার জীবনযাপন হয়তো আমাকে বড় একটি সুযোগ করে দিয়েছিল চরিত্রে ঢুকতে।

ভিক্টোরিয়া চাকমা। ছবি: শিল্পীর সৌজন্যে
প্রশ্ন

সিনেমায় সব সময়ই আপনাকে দেখা যায় স্কুটি চালাতে...

ভিক্টোরিয়া চাকমা: অভিনয়ের চেয়ে আমার কাছে স্কুটি চালানো চ্যালেঞ্জিং ছিল। আগে স্কুটি চালাতে পারতাম না। স্কুটি চালানো কঠিন মনে হওয়ার কারণেই আগে সাইকেল চালানো শিখতে চেয়েছিলাম। যখন পারলাম না, তখন ভয়ে ভয়ে স্কুটি চালানো শিখেছি। প্রতিদিন ভেবেছি, যদি পড়ে যাই, কোনো ক্ষতি হয়, তাহলে আমাকে হাসপাতালের বেডে একা একা শুয়ে থাকতে হবে। সেটা আমার জন্য আরও কঠিন। যে কারণে প্রচুর পরিমাণ নিরাপত্তা নিয়ে বের হতাম। মাথায় ক্যাপ, তার ওপর হেলমেট, হাতে-পায়ে নিরাপত্তা সরঞ্জাম—সবই পরে স্কুটি হাতে নিয়েছি। আমাদের শুটিং টিম সহায়তা করেছে। শিখতে দীর্ঘ সময় লেগেছে। সিনেমার জন্য অভিনয়, সালসা ড্যান্স—সবই শিখতে হয়েছে।

কার্লোভি ভেরি চলচ্চিত্র উৎসব থেকে সিনেমাটি ‘গ্রাঁ প্রি’ পুরস্কার জিতে
প্রশ্ন

অভিনয়ে আসার ইচ্ছা ছিল?

ভিক্টোরিয়া চাকমা: আমি একটি চাকরি করতাম। সেখানে সপ্তাহে দুই দিন ছুটি ছিল। এই সময়টা নিজের পছন্দমতো কাটাতে ভালো লাগত। যে কারণে মডেলিং করতাম। কিন্তু সিনেমা-নাটকে অভিনয় করার জন্যই এগুলো করেছি, তেমন নয়। অভিনেত্রী হব, জীবনে এমন কোনো চিন্তাই ছিল না। ভালো লাগা থেকেই আমি সব করেছি।

প্রশ্ন

অভিনয়কে এখন পেশা হিসেবে ভাবতে চান?

ভিক্টোরিয়া চাকমা: আমাদের সিনেমাটি কার্লোভি ভেরি চলচ্চিত্র উৎসবে ‘গ্রাঁ প্রি’ পেল। সিনেমাটি আগামী এক বছর বিশ্বের বিভিন্ন চলচ্চিত্র উৎসব ঘুরবে। এখন দর্শকের কাছ থেকে ভালোবাসা পাচ্ছি। এটা আমাকে অভিনয়ের প্রতি দায়িত্বশীল করছে। আলাদা করে অভিনয়কে পেশা হিসেবে নিতে চিন্তাও করতে পারছি। আমি তো আদিবাসী সম্প্রদায়ের। অভিনয়ে এই কমিউনিটির হয়ে প্রতিনিধিত্ব করতে পারলে ভালো লাগবে।

প্রশ্ন

সিনেমাটির পুরস্কার পাওয়ার ঘটনাও তো নাটকীয়...

ভিক্টোরিয়া চাকমা: আমরা ধরেই নিয়েছিলাম, সিনেমাটি পুরস্কার পাবে না। উৎসব থেকেও আমরা আমাদের মতো করে বের হয়ে ঘুরতে থাকি। কেউ কেউ চেক প্রজাতন্ত্র ছাড়ার পরিকল্পনাও করছিলেন। এমন সময় আমাদের আয়োজকেরা ব্যাকে আসতে বলে। তখন ভাবি, কোনো একটা অ্যাওয়ার্ড হয়তো পাব। কিন্তু ‘গ্রাঁ প্রি’ পাব ভাবিনি। আমার জন্য এটা অনেক বড় সম্মান। দর্শক, সমালোচকদের আমার অভিনয় এতটা ভালো লাগবে, এটা কল্পনাতীত ছিল।

এমা চরিত্রে অভিনয় করেছেন ভিক্টোরিয়া চাকমা
প্রশ্ন

উৎসবে স্থানীয় দর্শকদের সঙ্গে কথা হয়েছিল?

ভিক্টোরিয়া চাকমা: প্রিমিয়ার শেষে দর্শকদের ভালোবাসা আমাকে মুগ্ধ করেছে। এটাও অভিনেত্রী হিসেবে দারুণ অভিজ্ঞতা। উৎসবে প্রিমিয়ারের পর সংবাদ সম্মেলন থাকে, ডিনার পার্টিসহ নানা আয়োজনে অংশ নিতে হয়। যেখানেই গেছি, দর্শক সিনেমাটি নিয়ে কথা বলেছেন। কেউ বলেছেন পোস্টার, দেশ দেখে সিনেমাটি দেখেছেন। আমার অভিনয় তাঁদের অনেক ভালো লেগেছে। জীবনে মুখের ওপর এমন প্রশংসা আগে শুনিনি। এগুলো শুনে কী বলব বুঝতেও পারছিলাম না। অন্য রকম একটা রোমাঞ্চ কাজ করছিল।

প্রশ্ন

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?

ভিক্টোরিয়া চাকমা: সামনে কী হবে, জানি না। কতটুকু কাজের সুযোগ পাব, কতটুকু কাজ আমি করতে পারব, সেটাও জানি না। আমি যেহেতু অন্য একটি কমিউনিটির, আমার লুকটাও অন্য রকম; এটাও আমার জন্য চিন্তার বিষয়। তবে আমি নিজের জায়গা থেকে ভালো কাজের সঙ্গে থাকতে চাই।

অনুশীলনের ফাঁকে ভিক্টোরিয়া চাকমা