Thank you for trying Sticky AMP!!

ইরফান খানের আত্মসমর্পণ?

ইরফান খান

বলিউডের দাপুটে অভিনেতা ইরফান খান অসুস্থ। বিরল এক ক্যানসারে আক্রান্ত তিনি। ইংল্যান্ডে তাঁর চিকিৎসা চলছে। নিজের অসুখের কথা তিনি প্রথম জানিয়েছিলেন টুইটারে। তখন বলেছিলেন, সময় হলে তাঁর রোগ আর এই রোগের সঙ্গে নিজের লড়াইয়ের গল্প শোনাবেন। সম্প্রতি ভারতের টাইমস অব ইন্ডিয়াকে এক দীর্ঘ চিঠি লিখেছেন ইরফান। সেখানে উঠে এসেছে তাঁর অসুখ আর এই সময়ের অনেক উপলব্ধির কথা।

ইরফান লিখেছেন, ‘বেশ কিছুদিন হলো জানতে পেরেছি, আমার হাই-গ্রেড নিউরোএন্ডোক্রাইন ক্যানসার হয়েছে। এটি ছিল আমার শব্দভান্ডারে একদম নতুন একটি শব্দ। রোগটি এতই বিরল যে এর নির্দিষ্ট কোনো চিকিৎসা নেই। কাজেই এক অনিশ্চিত পরিণতির খেলার মধ্য দিয়ে আমাকে এগিয়ে যেতে হচ্ছে। অথচ এর আগে কিন্তু আমি অন্য এক দুনিয়াতে বুঁদ হয়ে ছিলাম। অনেক স্বপ্ন, পরিকল্পনা আর উচ্চাকাঙ্ক্ষার ডানায় ভর করে ছিলাম। যাত্রী হয়েছিলাম দ্রুতগতির এক ট্রেনের। কিন্তু হঠাৎ আমার সেই যাত্রার ছন্দপতন হলো। মনে হলো যেন ট্রেনের টিকিট চেকার এসে আমাকে জানিয়ে দিয়ে গেছেন, “তোমার সফর এখানেই শেষ। এখন তোমাকে নামতে হবে।” আমি অবাক। সেই টিকিট চেকারের সঙ্গে তর্ক করে চলেছি। তাঁকে বারবার বলছি, এটি আমার গন্তব্য নয়। তবুও তিনি বলেই যাচ্ছেন, এখানেই নাকি আমাকে নামতে হবে। জীবনের চলার পথে হয়তো এমনই ঘটে।’

ইরফান খান

ইরফান আরও লিখেছেন, ‘এই বিশাল পৃথিবীতে মানুষ শক্তিহীন প্রাণী ছাড়া আর কিছুই নয়। তবু আমরা এই জীবনকে নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যস্ত হয়ে পড়ি। নিজের অসুখের কথা জানার পর হাজারো অনিশ্চয়তার মধ্যে ছেলেকে বারবার বুঝিয়েছি। ওকে বলেছি, ভয় আর অনিশ্চয়তা যেন আমাকে থামিয়ে দিতে না পারে। কিন্তু এর মধ্যে আচমকাই ভয়াবহ যন্ত্রণা আমাকে গ্রাস করেছে। তখন কোনো প্রেরণা, কোনো সান্ত্বনা আর কাজ করেনি। ওই সময় আমার সেই যন্ত্রণা সবকিছুর থেকে বড় হয়ে ওঠে। জানেন, যে হাসপাতালে আমার চিকিৎসা চলছিল, সেটি ছিল ইংল্যান্ডের লর্ডস স্টেডিয়ামের ঠিক বিপরীতে। আমার স্বপ্নের জায়গা। একদিন এত যন্ত্রণার মাঝেও একবার কেবিনের জানালা দিয়ে বাইরে তাকাই। তখন অন্য রকম এক উপলব্ধি কাজ করেছে।’

ইরফান খান

হাসপাতালে নিজের অনুভূতির গল্প বললেন এভাবে, ‘হাসপাতালে আমার কেবিনের ঠিক ওপরে একটি কোমা ওয়ার্ডও ছিল। একদিন আমার কেবিনের বেলকনিতে দাঁড়িয়ে আছি। তখন অদ্ভুত এক অনুভূতি আমাকে নাড়া দিয়ে যায়। বুঝতে পেরেছি, জীবন আর মৃত্যুর মাঝে শুধু এক রাস্তার ফারাক। এখানে একটি সড়ক চলে গেছে, যার এক পাশে একটি হাসপাতাল আর অন্য পাশে ক্রিকেট স্টেডিয়াম। অনিশ্চয়তাই আসলে জীবনের সবচেয়ে নিশ্চিত ব্যাপার। তখন উপলব্ধি করেছি, জীবনের খেলা আমাকে আরও ভালো খেলতে হবে। এ ছাড়া আমার আর কিছু করার নেই।’

ইরফান খান

নিজের উপলব্ধির কথা বলতে গিয়ে লিখেছেন, ‘আমার মনে হলো, জানি না কী হবে? তবু আমি আত্মসমর্পণ করছি। এরপরই আবার মনে হলো জীবন আর মৃত্যুর মাঝে শুধু এক রাস্তার ফারাক। যেন প্রথম মুক্তির স্বাদ পেলাম। যেন প্রথম জীবনকে প্রকৃত অর্থেই চিনতে পেরেছি। মনে মনে ঠিক করেছি, না, হেরে যাব না। যে করে হোক, লড়াইটা চালিয়ে যেতেই হবে।’

স্ত্রী সুতপা সিকদারের সঙ্গে ইরফান খান

সবশেষে লিখেছেন, ‘মানুষ আমার জন্য অনেক প্রার্থনা করছেন, তাঁরা আমাকে শুভকামনা জানাচ্ছেন...তাঁদের অনেককেই আমি চিনি। যদিও বেশির ভাগ শুভাকাঙ্ক্ষী আমার অচেনা। তাঁদের সবার প্রার্থনা আমাকে এই লড়াইয়ের অনুপ্রেরণা আর শক্তি জোগাচ্ছে। আর আমি ভেসে চলেছি জীবন জোয়ারে।’