জয়া ভট্টাচার্য। ইনস্টাগ্রাম থেকে
জয়া ভট্টাচার্য। ইনস্টাগ্রাম থেকে

দুঃস্বপ্নের শৈশব থেকে আপত্তিকর প্রস্তাব, পর্দার আড়ালে জয়ার কঠিন জীবন

টেলিভিশনের পর্দায় তিনি ছিলেন ব্যাপক আলোচিত, কিন্তু বাস্তব জীবনের গল্প আরও কঠিন। ‘কিউঁকি সাস ভি কভি বহু থি’ সিরিয়ালে ‘পায়েল’ চরিত্রে অভিনয় করে ঘরে ঘরে পরিচিতি পেলেও জয়া ভট্টাচার্যের নিজের জীবনে ছিল যন্ত্রণার দীর্ঘ ছায়া—নির্যাতন, অবহেলা আর অবিরাম সংগ্রাম।

শুরুর গল্প
১৯৭৮ সালে লক্ষ্ণৌয়ের এক বাঙালি পরিবারে জন্ম জয়ার। ছোটবেলায় পাড়ার লোকজন তাঁকে আদর করে ডাকত ‘বুলবুল’। কিন্তু সেই ডাকে উষ্ণতার চেয়ে বেদনাই বেশি ছিল। নিজের শৈশবের কথা বলতে গিয়ে তিনি এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছিলেন—মা-বাবার অমিল, অপূর্ণতা, ক্রোধের আগুন সবই এসে পড়েছিল তাঁর ওপর। চপেটাঘাত, জুতো—কী দিয়ে যে মার খেয়েছেন, তার হিসাব নেই। এই নির্যাতন তাঁকে জেদি করেছে, আবার ভেতরটা ক্ষতবিক্ষতও করেছে।

জয়ার কথায়, মা তাঁর প্রতি কখনো আস্থাশীল ছিলেন না। অন্যের কথা সহজেই বিশ্বাস করতেন, এমনকি নিজের মেয়েকেও অপমান করতেন সামনাসামনি। তৃতীয় শ্রেণি থেকে কলেজপড়ুয়া হওয়া পর্যন্ত তাঁদের পরিবার একটি ছোট ঘরে কোনোরকমে টিকে ছিল। তাঁর বাবা ছিলেন আত্মসম্মানী, সৎ মানুষ; কিন্তু তিনিও নানা অপমানে আঘাত পেয়েছেন পুরো জীবনটা।

জয়া ভট্টাচার্য। ইনস্টাগ্রাম থেকে

শৈশব-কৈশোরে বন্ধুবান্ধব প্রায় ছিলই না; কারণ, মা জয়াকে কারও বাড়িতে যেতে দিতেন না। এদিকে নৃত্য ও সংগীতে ঝোঁক থাকা সত্ত্বেও তাঁকে জোর করে অভিনয়ে ঠেলে দেওয়া হয়। একটি টেলিফিল্মে প্রথম অভিনয়ের সুযোগ আসতেই বাবা তাঁকে ভোরবেলা টেনে তুলে শুটিং স্পটে নিয়ে গিয়েছিলেন—যদিও তিনি সে কাজ করতে চাননি।

আপত্তিকর প্রস্তাব
এই পথে চলতে গিয়েই জয়া অভিজ্ঞতা পান শোবিজের অন্ধকার দিকের—অশোভন প্রস্তাব, কাস্টিং কাউচ, হুমকি, ভীতি। ১৭-১৮ বছর বয়সে এক পরিচালক ও তাঁর বন্ধুর সঙ্গে যুক্ত একটি ভয়ংকর ঘটনার কথাও বলেন তিনি; এমনকি একসময় তাঁকে মুম্বাই নিয়ে যেতে চেয়েছিল এক মাফিয়া-সম্পৃক্ত ব্যক্তি।

জয়া ভট্টাচার্য। ইনস্টাগ্রাম থেকে

মায়ের সঙ্গে সম্পর্ক এমন জায়গায় গিয়েছিল যে নবম শ্রেণিতে পড়ার সময়, মেয়ের বিয়ের জন্য ‘পণের টাকা কোথায় পাবে’—এই তুচ্ছ অপমান থেকে বাঁচতে তিনি ঘর ছাড়েন। সহপাঠীকে নিয়ে পালিয়ে যান হরিদ্বার; সপ্তাহভর আশ্রমে লুকিয়ে থাকেন ভয়ে। পরে মায়ের সঙ্গে সম্পর্ক আর কখনো স্বাভাবিক হয়নি। হাসপাতালে ভর্তি থাকলেও মা তাঁকে দোষারোপই করেছেন—‘তুই আমাকে হাসপাতালে ঢুকিয়ে আমার শরীর খারাপ করে দিয়েছিস।’ অথচ জয়া সব সঞ্চয় খরচ করেছিলেন মায়ের চিকিৎসায়।

জীবনের বাঁকবদল
জয়ার জীবনের মোড় ঘুরে যায় ২০০০ সালে, যখন তাঁকে ‘কিউঁকি সাস ভি কভি বহু থি’-তে পায়েলের চরিত্রে নেওয়া হয়। এক মাসের জন্য আসা চরিত্রটি চলতে থাকে প্রায় সাড়ে সাত বছর, তা–ও কোনো চুক্তি ছাড়াই! ছিলেন সবচেয়ে কম বেতনের অভিনেত্রীদের একজন। সম্মান পাননি, স্বীকৃতি পাননি। কিন্তু নেতিবাচক চরিত্রে অভিনয় করে দর্শকের ‘ঘৃণা’ পেয়েছেন প্রচুর, যা তাঁর সাফল্যেরই প্রমাণ।
একবার স্মৃতি ইরানির সঙ্গে রাস্তার ধারের দোকানে খাওয়ার সময় অন্তঃসত্ত্বা নারী জয়াকে ধাক্কা দিয়ে বলেন—‘আপনার থেকে দূরে থাকতে হবে। না হলে গর্ভস্থ সন্তানের ক্ষতি হবে!’ এতটাই প্রভাব ছিল তাঁর অনস্ক্রিন চরিত্রের।
‘কিউঁকি’র পর জয়া ‘বানু মোঁ তেরি দুলহন’, ‘কসম সে’, ‘করম আপনা আপনা’-সহ বহু জনপ্রিয় সিরিয়ালে কাজ করেছেন। সাম্প্রতিক সময়ে তাঁকে আবারও আলোচনার কেন্দ্রে নিয়ে এসেছে ‘দিল্লি ক্রাইম সিজন ৩’-এ তাঁর অভিনয়।

ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস অবলম্বনে