বিজয়ের সিনেমার সংলাপ দর্শকদের মুখে মুখে থাকে। তাঁর স্টাইল তামিলের তরুণদের মধে৵ প্রভাব ফেলে। বক্স অফিসে তিনি থাকেন এগিয়ে। মানবিকভাবে তিনি সাধারণ মানুষের পাশে থাকেন। নানা কারণে দর্শকদের কাছে তুমুল আলোচিত নাম থালাপতি বিজয়।
সেই পর্দার অভিনেতা গত বছর নাম লিখিয়েছেন রাজনীতিতে। রাজনীতির অংশ হিসেবে গতকাল তামিলনাড়ুর কারুর জেলায় রাজনৈতিক সমাবেশের আয়োজন করেন। সেই সমাবেশ নিয়ে কদিন ধরে ভক্ত ও সাধারণ দর্শকদের মধে৵ তুমুল উচ্ছ্বাস দেখা যায়। তবে সেই উচ্ছ্বাস মুহূর্তেই গতকাল যেন শোকে মিলিয়ে যায়।
সমাবেশে আসা বিপুলসংখ্যক মানুষ পর্দার তারকা থালাপতি বিজয়কে একনজর দেখার জন্য মঞ্চের ব্যারিকেডের দিকে একসঙ্গে এগিয়ে যেতে থাকেন। ওই সময় দুর্ঘটনার সূত্রপাত হয়। এনডিটিভি সূত্রে জানা যায়, লোকজন হুড়োহুড়ি করেন সামনে যাওয়ার জন্য। এ সময় অনেকেই অচেতন হয়ে বসে পড়েন। তখনই মূলত পদদলিত হয়ে আহত হন অনেকে। এমন অবস্থায় ভিড় ক্রমে বাড়তে থাকে। প্রচণ্ড গরম আর ভিড়ে অনেকের দম বন্ধ হয়ে আসতে শুরু করে। পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়। পরে জানা যায়, এখন পর্যন্ত থালাপতি বিজয়ের এই জনসভায় অংশ নিয়ে ৩৯ জন পদদলিত হয়ে মারা গেছেন।
ভারতের বলিউডসহ বিশ্ব অঙ্গনেও এখন এটি আলোচিত ঘটনা। ভারতের রাজনৈতিক ইতিহাসে এমন ঘটনা খুবই কম। এ ঘটনা সব ছাপিয়ে প্রমাণ করে থালাপতি বিজয়ের জনপ্রিয়তাকে। কেন তিনি এতটা জনপ্রিয়? কেন তাঁকে দেখতে বহু মানুষ সমাবেশে এসেছিলেন। এনডিটিভি, আইএমডিবি ও সিনেমা এক্সপ্রেস অবলম্বনে তুলে ধরা হলো।
ক্যারিশম্যাটিক উপস্থিতি
বিজয় সব সময়ই ভিন্নভাবে দর্শকদের সামনে আসেন। তিনি বহু সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, পর্দায় উপস্থিতি নিয়ে তিনি সব সময়ই আলাদা করে ভাবেন। এমনকি একটি সিনেমায় নতুনত্ব আনতে গল্প চরিত্র, নাচ, অ্যাকশন, রোমান্স বা আবেগঘন দৃশ্য কেমন হবে সেটিও আলাদা পরিকল্পনা করেন। যে কারণে ক্যারিশমাটিক উপস্থিতি দিয়ে তিনি দর্শকের মন টানতে পারেন।
গল্পে সামাজিক বার্তা
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিজয়ের সিনেমায় একের পর এক উঠে এসেছে দেশের রাজনীতির অনিয়মের গল্প। যে গল্পে সাধারণ মানুষের হয়ে কথা বলেছেন, এমন চরিত্রে দেখা গেছে বিজয়কে। সিনেমায় সমাজব্যবস্থার অনিয়ম, দুর্নীতি বা সাধারণ মানুষের সমস্যা তুলে ধরার কারণে তাঁকে আলাদা করে দর্শক পছন্দ করেন। ভারতের অনেক সমালোচক মনে করেন ‘মার্শাল’, ‘সরকার’, ‘লিও’সহ বহু সিনেমায় শুধু অভিনেতা নয়, সামাজিকভাবে সচেতন একজন শিল্পী হিসেবে তাঁর ইমেজ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
সব শ্রেণির কাছে গ্রহণযোগ্যতা
বিজয়ের সিনেমায় যেমন অ্যাকশন ও ডায়ালগ, নাচ–গানে ভরপুর থাকে, তেমনি থাকে গল্পের আবেগ আর বার্তা। ফলে গ্রামীণ দর্শক থেকে শুরু করে শহুরে শিক্ষিত শ্রেণি—সবাই তাঁকে পছন্দ করে। এ ছাড়া ব্যক্তিগত জীবনে তিনি সাধারণ জীবনযাপন করেন। একাধিক দাতব্য কাজের সঙ্গে যুক্ত। রাজনৈতিক কোনো বক্তব্য না দিয়েও তিনি মানুষের পাশে দাঁড়ান। ছুটে যান মানুষকে সেবা করতে। এ নিয়ে তাঁর আলাদা টিমও রয়েছে। যে কারণে অনেকে মনে করেন, তিনি বাস্তব জীবনের নায়ক।
পরিবারবান্ধব ইমেজ
বিজয়ের সিনেমা আলাদাভাবে গ্রহণযোগ্যতা পায় পরিবারের আবেগ ও অনুভূতির কথা বলায়। বেশির ভাগ দক্ষিণি দর্শক মনে করেন, বিজয়ের সিনেমাগুলো সাধারণত সব বয়সের মানুষ দেখতে পারেন। তার গান, সংলাপ বা দৃশ্যে অশ্লীলতা থাকে না—যা পরিবারকেন্দ্রিক দর্শকের কাছেও তিনি বিশেষভাবে জনপ্রিয়।
ধারাবাহিক বক্স অফিস হিট
বিজয়ের নাম মানেই যেন শত শত কোটি টাকার বিনিয়োগ। এর কারণ সাম্প্রতিক সময়ে তাঁর প্রতিটি সিনেমাই বলা যায় ব্যবসা সফল। ভারতের বলিউডসহ অন্যান্য ইন্ডাস্ট্রির তারকাদের থেকেও তার কিছু সিনেমার আয় এগিয়ে। এটা যেমন প্রযোজকদের কাছে তাঁকে করেছে আস্থার নাম। তেমনি একই সঙ্গে দর্শকদের কাছেও তাঁর সিনেমা নিয়ে আলাদা একটি আস্থার জায়গা তৈরি হয়েছে। যে কারণে প্রতিটা সিনেমা নিয়েই আলাদা করে ভাবেন এই দক্ষিণি তারকা। তাঁর সর্বাধিক আয় করা সিনেমা ‘লিও’। এটি প্রায় ৭০০ কোটি রুপি আয় করে। তামিলের সবচেয়ে বেশি আয় করা সিনেমার মধে৵ এটি একটি।