কলেজজীবনে মেধাবী ও কৃতী ছাত্রী ছিলেন কৃতি শ্যানন। ইলেকট্রনিকস ও কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে তাঁর স্নাতক ডিগ্রি আছে। ১২ থেকে ১৪ অক্টোবর বার্লিনে অনুষ্ঠিত বিশ্ব স্বাস্থ্য সম্মেলনেও রাখলেন মেধার সুস্পষ্ট ছাপ। সম্মেলনের শেষ দিনের শেষ কি–নোট অধিবেশনে তিনি ছিলেন বিশেষ বক্তা। নারীস্বাস্থ্য নিয়ে তাঁর বক্তব্য, বিশ্লেষণ ছিল পেশাদার গবেষক বা স্বাস্থ্যচিন্তকের মতো। বলে না দিলে বোঝা মুশকিল ছিল, তিনি এই সময়ের বলিউডের অন্যতম জনপ্রিয় চিত্রনায়িকা।
ভারতে লিঙ্গসমতা বিষয়ে প্রচারের জন্য কৃতি শ্যাননকে শুভেচ্ছাদূত করেছে জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিল (ইউএনএফপিএ)। এ সংস্থার প্রতিনিধি হিসেবেই বার্লিন স্বাস্থ্য সম্মেলনে এসেছিলেন এই বলিউড তারকা। ‘ভারতীয় চলচ্চিত্রশিল্পে একজন অভিনেত্রী ও প্রযোজক হিসেবে আমি গল্প বলার মধ্য দিয়ে আমার কর্মজীবন তৈরি করেছি। এমন সব গল্প, যা মানুষকে হাসাতে, কাঁদাতে এবং কখনো কখনো পৃথিবীকে ভিন্নভাবে দেখতে সাহায্য করে,’ সম্মেলনের কেন্দ্রীয় মঞ্চে নারীস্বাস্থ্যবিষয়ক অধিবেশনে এভাবেই তাঁর বক্তব্য শুরু করেন কৃতি শ্যানন।
ভারতের মহারাষ্ট্রে কাজ করার অভিজ্ঞতা তুলে ধরে কৃতি বলেন, ১১, ১২ বা ১৩ বছর বয়সে দুই বা তিন গুণ বেশি বয়সী পুরুষের সঙ্গে মেয়েদের বিয়ে হচ্ছে। তাদের অনেকে ১৫ বছর বয়সে মা হচ্ছে। তারা বৈষম্য, নির্যাতন ও জীবন বিপন্নকারী স্বাস্থ্যঝুঁকির মধ্য দিয়ে যায়। তাদের শৈশব নেই। কৃতি শ্যাননের মনে এ নিয়ে ক্ষোভ আছে। ক্ষোভ এই কারণে যে এসব মেয়ের শরীর ও তাদের ভবিষ্যৎ ইতিমধ্যে অন্য কারও দ্বারা নিয়ন্ত্রিত, নির্ধারিত।
এই অভিনেত্রী বলেন, আলোচনার টেবিলে নারীকে না রেখেই নেওয়া হয় নারীর স্বাস্থ্যবিষয়ক সিদ্ধান্ত। ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে নারীর প্রতিনিধিত্ব থাকে না। ওষুধের পরীক্ষা-নিরীক্ষা হয় পুরুষের শরীরে, ব্যবস্থাপত্রে নারীর জন্য দেওয়া হয় সেই ওষুধ। আরও কিছু ব্যতিক্রমী পরিসংখ্যান উদ্ধৃত করে তিনি বলেন, এগুলো ছোট ত্রুটি নয়, এগুলো পদ্ধতিগত ব্যর্থতা। নারীরা নিষ্ক্রিয় সুবিধাভোগী নন, তাঁরা সহস্রষ্টা।
কৃতি শ্যানন বলেন, নারীস্বাস্থ্যে ১ ডলার বিনিয়োগে ফেরত আসে ৯ ডলার। এটি পরিসংখ্যান নয়, এটি একটি অর্থনৈতিক বিপ্লব, যা ঘটার অপেক্ষায় আছে। সুস্থ নারী মানে সুস্থ সন্তান, সুস্থ পরিবার, শক্তিশালী সম্প্রদায়। তিনি আরও বলেন, ‘আমরা অসাধারণ উদ্ভাবনের যুগে বাস করছি: ডিজিটাল স্বাস্থ্য, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও নতুন অর্থায়ন মডেল। উদ্ভাবন তখনই রূপান্তরকামী হয়, যখন তা অন্তর্ভুক্তিমূলক হয়। এই বিষয়গুলো ঐচ্ছিক নয়; বরং অপরিহার্য।’
কৃতি যখন থামেন, তুমুল করতালিতে ফেটে পড়ে স্বাস্থ্য সম্মেলনের পুরো কেন্দ্রীয় মঞ্চ।