
সিনেমা মুক্তি পেতে না পেতেই চলে আসে রিভিউ। গণমাধ্যম, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সিনেমা নিয়ে প্রশংসার ঝড়। কিন্তু এসব রিভিউ কতটা সত্যের প্রতিফলন? কাতারভিত্তিক গণমাধ্যম আল–জাজিরার অনুসন্ধানে উঠে এসেছে বলিউডের গোপন সত্য। ভাষান্তর করেছেন লতিফুল হক
গত বছরের অক্টোবরে ধর্মা প্রোডাকশনস যখন তাদের নতুন সিনেমা ‘জিগরা’ মুক্তির প্রস্তুতি নিচ্ছিল, তারা কিছুটা নার্ভাসও ছিল। ধর্মা ভারতের ৪৫ বছরের পুরোনো প্রযোজনা সংস্থা, যদিও করণ জোহরের সংস্থাটি এখন টিকে থাকার লড়াই করছে। ২০১৯ সাল থেকে সংস্থাটির সিনেমাই সেভাবে ভালো করতে পারেনি। গত বছর ধর্মার মুক্তি পাওয়া চার সিনেমার একটি বলার মতো ব্যবসা করেছে।
ধর্মার নিট মুনাফা উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে। ২০২৩ সালে ১ দশমিক ২ মিলিয়ন ডলার মুনাফা পরের বছর কমে ৬৮ হাজার ডলারে নেমে এসেছে। সংস্থাটির অনেক ম্যানেজার ও নির্মাতার কয়েক মাসের বেতন বকেয়া। এমন পরিস্থিতিতে গত বছর করণ জোহর ধর্মা প্রোডাকশনসের ৫০ শতাংশ শেয়ার বিক্রি করে দেন।
‘জিগরা’–রহস্য
এবার আসা যাক ‘জিগরা’ প্রসঙ্গে। থাইল্যান্ডের প্রেক্ষাপটে নির্মিত থ্রিলার সিনেমা ‘জিগরা’। ৮০০ মিলিয়ন রুপি বাজেটে নির্মিত সিনেমাটির প্রধান চরিত্রে ছিলেন আলিয়া ভাট, বলিউডের প্রথম সারির অভিনেত্রীদের একজন। আলিয়া সিনেমাটির সহপ্রযোজকও বটে। ধর্মা প্রোডাকশনস এমন একটা আবহ তৈরি করে যেন ‘জিগরা’ হিট হতে যাচ্ছে। সিনেমাটি মুক্তির কয়েক সপ্তাহ আগে এর পোস্টার ও ট্রেলার মুক্তি পায়। প্রযোজনা সংস্থার সোশ্যাল মিডিয়া হ্যান্ডলে দাবি করা হয়, ২৪ ঘণ্টায় সিনেমাটির ট্রেলারের ভিউ ৪ কোটি ছাড়িয়েছে। একই সঙ্গে ট্রেলার দেখে বিভিন্ন দর্শকের রোমাঞ্চকর মন্তব্যও ধর্মা প্রোডাকশনসের সোশাল মিডিয়া হ্যান্ডলে প্রকাশ করা হয়।
তবে এ মন্তব্যগুলো আসলে ছিল কনটেন্ট ক্রিয়েটর বা সিনেমা –সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের।
২০২৪ সালের ৭ অক্টোবর সিনেমাটি মুক্তির ঠিক চার দিন আগে করণ জোহর এক বিবৃতিতে জানান, প্রেক্ষাগৃহে মুক্তির আগে সিনেমাটির কোনো বিশেষ প্রদর্শনী হবে না। সাধারণত হলে মুক্তির এক বা দুই দিন আগে সমালোচকদের জন্য বিশেষ প্রদর্শনীর আয়োজন করে থাকে প্রযোজনা সংস্থাগুলো।
করণের এ সিদ্ধান্ত ছিল ইউটিউবার, ভ্লগার, ইনফ্লুয়েন্সারদের জন্য বড় ধাক্কা। কারণ, বিশেষ প্রদর্শনী বন্ধ করে করণ কার্যত বার্তা দিয়েছেন, ইতিবাচক রিভিউর জন্য তিনি আর খরচা করতে রাজি নন।
‘৭০ থেকে ৮০ শতাংশ রিভিউ যে আসলে পেইড রিভিউ, এটা সিনেমা–দুনিয়ায় ওপেন সিক্রেট,’ আল–জাজিরাকে বলেন প্রযোজনা সংস্থা যশ রাজ ফিল্মসের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘অন্য অনেক ব্যবসার মতো সিনেমাতেও পেইড রিভিউ হয়।’
সিনেমার প্রযোজক ও অভিনয়শিল্পীরা ইতিবাচক রিভিউর জন্য খরচ করেন। তাঁরা আশা করেন, পেইড রিভিউ সিনেমাটি নিয়ে একধরনের শোরগোল তৈরি করবে, মুখে মুখে ছবির সুখ্যাতি ছড়িয়ে পড়বে; যা মুক্তির পর প্রথম সপ্তাহেই সিনেমার একটা ভালো শুরু এনে দেবে।
এ প্রতিবেদন তৈরির জন্য আল–জাজিরা ২০ জনের বেশি পেশাদার চলচ্চিত্র সমালোচক, জনসংযোগ কর্মকর্তা ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ইনফ্লুয়েন্সারদের সঙ্গে কথা বলে। ভালো সমালোচনা লেখার জন্য খরচ করেনি, এমন বলিউড সিনেমার নাম তাঁরা কেউ সহজে মনে করতে পারেননি।
সবাই একমত, পেইড রিভিউ ডাহা ফ্লপ সিনেমাকে হিট করতে পারে না, কিন্তু ব্যবসায় গতি আনতে অবদান রাখে তো বটেই। রিভিউ ভাইরাল হয়ে যাওয়ার পর মুক্তির প্রথম সপ্তাহে সিনেমার ব্যবসায় ১০ থেকে ১৫ শতাংশ ইতিবাচক প্রভাব পড়ে।
সিনেমার প্রযোজক ও অভিনয়শিল্পীরা ইতিবাচক রিভিউর জন্য খরচ করেন। তাঁরা আশা করেন, পেইড রিভিউ সিনেমাটি নিয়ে একধরনের শোরগোল তৈরি করবে, মুখে মুখে ছবির সুখ্যাতি ছড়িয়ে পড়বে; যা মুক্তির পর প্রথম সপ্তাহেই সিনেমার একটা ভালো শুরু এনে দেবে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে যশ রাজ ফিল্মসের ওই জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা জানান, অন্য সবকিছুর তো পেইড রিভিউরও মূল্য নির্ধারিত হয়। তিনি জানান, বলিউডে সম্ভবত একটি প্রযোজনা সংস্থাই আছে, যারা প্রেক্ষাগৃহে মুক্তির আগে সিনেমার বিশেষ প্রদর্শনী করে না, ইতিবাচক রিভিউর জন্য খরচও করে না।
পেইড রিভিউ নিয়ে এই দীর্ঘ প্রতিবেদনে আল–জাজিরা কয়েকটি পেইড রিভিউর খরচের হিসাবও প্রকাশ করেছে। যেখানে দেখা যায়, পেইড রিভিউর খরচের হিসাব জনসংযোগ অফিস থেকে নির্মাতা ও প্রযোজকদের কাছে পাঠানো হয়েছে। এ তালিকায় ভারতের প্রথম সারির সংবাদমাধ্যম যেমন আছে, তেমনি আছেন বাণিজ্য বিশ্লেষক, ইনফ্লুয়েন্সার, কনটেন্ট ক্রিয়েটর, সমালোচকেরাও। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ইতিবাচক রিভিউ ও সোশ্যাল মিডিয়া হ্যান্ডলে পোস্ট করার জন্য তাঁদের বিশেষ প্যাকেজ দেওয়া হয়েছে।
ইতিবাচক রিভিউ নিয়ে এ চুক্তির মধ্যে আছে সিনেমা মুক্তির পর হল থেকে লাইভ টুইট করা, সর্বোচ্চ রেটিং দেওয়া ইত্যাদি। অনুসন্ধানে ইতিবাচক রিভিউর জন্য তিন থেকে ছয় মাসের প্যাকেজের বিষয়টিও উঠে এসেছে। এই প্যাকেজে সিনেমার পোস্টার, টিজার, ট্রেলার মুক্তি থেকে শুরু করে সব বিষয়ই অন্তর্ভুক্ত থাকে।
ইতিবাচক রিভিউর জন্য প্রতিষ্ঠিত গণমাধ্যম, বিশ্লেষকদের সঙ্গে চুক্তির অঙ্ক ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানভেদে ৫০ লাখ থেকে ৫ কোটি রুপি পর্যন্ত হয়ে থাকে।
‘এটা চরম অন্যায়’
ইতিবাচক সমালোচনার জন্য প্রযোজনা সংস্থাগুলো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের রিভিউয়ার, ইনফ্লুয়েন্সারের পিছে পড়ে থাকে। তাঁদের মুম্বাইয়ে নিয়ে আসে, হোটেলে থাকার ব্যবস্থা করে, আইফোন উপহারের সঙ্গে নগদ অর্থও দেয়। একজন নির্মাতা এ প্রসঙ্গে আল–জাজিরাকে বলেন, ‘এখন এমন একটা অবস্থা তৈরি হয়েছে যে মনে হয়, কয়েকজনকে টাকা দিলেই আপনার সিনেমা ব্যবসা করতে শুরু করবে। এটা চরম অন্যায়।’
ইতিবাচক রিভিউর পেছনে খরচ করে ধর্মা প্রোডাকশনসের আর্থিক অবস্থা ক্রমে খারাপ হয়েছে। এর পর থেকেই সংস্থাটি এ খাতে খরচ বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়, আল–জাজিরাকে বলেন প্রযোজনা সংস্থাটির এক কর্মী।
গত বছরের ১১ অক্টোবর ‘জিগরা’ প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায় এবং বেশির ভাগই নেতিবাচক সমালোচনা হয় সিনেমাটি নিয়ে, অনেকে ট্রল করেন। জানা যায়, ইনফ্লুয়েন্সারদের টাকা দেওয়া বন্ধ করে দিলেও প্রতিষ্ঠিত গণমাধ্যমের সঙ্গে ইতিবাচক রিভিউ দেওয়ার চুক্তি বহাল রেখেছিল ধর্মা। প্রযোজনা সংস্থাটির সোশ্যাল মিডিয়া হ্যান্ডলে ‘জিগরা’র এমন সব পোস্টার প্রকাশ করা হচ্ছিল, যেখানে সমালোচকেরা ছবিটিকে বেশি রেটিং দিয়েছেন। পরে করণ জোহর স্বীকার করেন, এই পোস্টারগুলো আসলে মুক্তির আগেই তৈরি করা।
ক্রিক ক্রেজি জনস একটি ক্রিকেট ইনফ্লুয়েন্সার হ্যান্ডল। এক্সে এর অনুসারী ছয় লাখের বেশি। ক্রিক ক্রেজি জনস প্রতি টুইটের জন্য ৩০ হাজার রুপি নেয়। এটি পরিচালনা করেন এক দক্ষিণি ভারতীয় তরুণ। ১১ অক্টোবর এই অ্যাকাউন্ট থেকে পোস্ট করা হয়, ‘“জিগরা” একটি গেম চেঞ্জার। আলিয়া ভাট দুর্দান্ত...এটা আবেগের ওঠানামা মিলিয়ে এমন এক সিনেমা, যা অবশ্যই দেখতে হবে।’
এই প্রযোজনা সংস্থাগুলো যথেষ্ট পরিণত, কিন্তু তারা তথকথিত এমন সমালোচকদের পাত্তা দেয়, যাদের না আছে যোগ্যতা, না আছে অভিজ্ঞতারাজ বানসাল
এখানেই শেষ নয়, ‘জিগরা’র প্রযোজকেরা নিজেরাই প্রেক্ষাগৃহে টিকিট কেটেছেন। এটা বোঝাতে যে সিনেমাটি হলে ভালো চলছে। বলিউডের প্রভাবশালী পরিবেশক রাজ বানসাল আল–জাজিরাকে বলেন, ‘সিনেমার ব্যবসা এত ছোট যে এটা আসলে সেভাবে প্রভাব বিস্তার করতে পারে না।’ বাস্তবে সেটাই হয়, ‘জিগারা’ বক্স অফিসে ফ্লপ করে; বাজেটের মাত্র এক–তৃতীয়াংশ ফেরত পায়।
‘এটা আসলে কর্মফল,’ পুরো বিষয়টিকে এভাবেই ব্যাখ্যা করেন বলিউডের বাণিজ্য বিশ্লেষক গিরিশ জোহর। তিনি আল–জাজিরাকে বলেন, ‘এই প্রযোজনা সংস্থাগুলো যথেষ্ট পরিণত, কিন্তু তারা তথকথিত এমন সমালোচকদের পাত্তা দেয়, যাদের না আছে যোগ্যতা, না আছে অভিজ্ঞতা।’
এ বিষয়ে সবিস্তার জানতে চেয়ে আল–জাজিরার পক্ষ থেকে করণ জোহরের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তাঁর সাড়া পাওয়া যায়নি।
বলিউডের সংগ্রাম
বলিউড ছয় কি সাত বছর ধরেই সংগ্রাম করে আসছে। বেশির ভাগ বড় বাজেটের সিনেমাই ফ্লপ হয়েছে। এই সময়ে ব্যবসাসফল বেশির ভাগ সিনেমাই এসেছে দক্ষিণ ভারতের ইন্ডাস্ট্রি থেকে। কিন্তু হিন্দি সিনেমা ইন্ডাস্ট্রি ভালো সিনেমা বানানোর চেষ্টা না করে তারা পেইড রিভিউ দিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি করেছে।
যশ রাজ ফিল্মসের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, ‘অনেকেই এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে, কিন্তু এতে সিনেমার ভাগ্য বদলায়নি।’ তিনি আরও বলেন, যশ রাজ ফিল্মস কখনো ইতিবাচক রিভিউর জন্য অর্থ খরচ করে না।
গত বছর ‘জিগরা’ মুক্তির দুই সপ্তাহ পরই করণ জোহর ধর্মা প্রোডাকশনসের ৫০ শতাংশ শেয়ার বিক্রি করে দেন আদর পুনাওয়ালার কাছে।
বলিউড ও সিনেমা ব্যবসার বিবর্তন
ভারত পৃথিবীর সবেচেয়ে পুরোনো সিনেমা ইন্ডাস্ট্রির একটি। ভারতেই পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি সিনেমা নির্মিত হয়। ২০ ভাষায় দেশটি থেকে প্রতিবছর ১ হাজার ৭০০ থেকে ১ হাজার ৮০০ সিনেমা নির্মিত হয়, যা ২০০ বিলিয়ন রুপি ব্যবসা করে। তবে এর মধ্যে মাত্র ১০ শতাংশ আসে বলিউড থেকে।
বলিউড সিনেমা ইন্ডাস্ট্রি মুম্বাইভিত্তিক। ১৯৬০, ১৯৭০, এমনকি ১৯৮০-এর দশকেও বলিউড সিনেমার দাপট ছিল। একক হলগুলোতে পুরো মাসে সিনেমা চলত। তখন কোন সিনেমা ২৫ সপ্তাহ, কোনটি ৫০ সপ্তাহ চলত, এভাবেই সাফল্য মাপা হতো। কিন্তু এখন স্বল্প বেতন পাওয়া সাংবাদিককের একটি করে খাম ধরিয়ে দেওয়া হয় সিনেমার একটু ভালো প্রচার দেওয়ার আশায়। ২০০০ সালের শুরুর দিকেই এ বদল শুরু হয়েছে।
২০০১ সালে ভারত সরকার চলচ্চিত্রকে শিল্প হিসেবে ঘোষণা করে। এর দুই বছর পর বিশ্বের অন্যতম প্রচারিত ইংরেজি সংবাদপত্র টাইমস অব ইন্ডিয়া চালু করে মিডিয়া ডটনেট, যেখানে সিনেমা, তারকা, ফ্যাশন, জীবনযাপন নিয়ে খবর পড়া যেত। অবশ্যই সেটা নির্দিষ্ট অর্থের বিনিময়ে। টাকা দিয়ে খবর পড়ার এই মডেল এমন এক সময় চালু হয়, যখন একক হল ভেঙে ধীরে ধীরে মাল্টিপ্লেক্স বাড়ছে, সিনেমার মুনাফা কমছে। ধীরে ধীরে অন্য সংবাদপত্রগুলোও মিডিয়া ডটনেটের মডেল অনুসরণ করে।
‘এই মডেল সুসংগঠিত হয়ে ওঠে। বেশ কিছু সংবাদপত্র, ম্যাগাজিন এবং তাদের ডিজিটাল সংস্করণ এই পদ্ধতি চালু করে। ফলে আপনি অর্থ খরচ না করলে সিনেমা মুক্তির ১০ থেকে ২০ দিন আগে সেটা নিয়ে কোনো তথ্যই পেতেন না,’ নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক প্রকাশক এমনটা বলেন।
এই সময়ে বিনোদন বা সিনেমার খবর পেতে তখন গ্রাহকদের যা খরচ করতে হতো, সেটা তাদের বিজ্ঞাপন হারের ২০ থেকে ৫০ শতাংশ বেশি।
গত বছরে বলিউড থেকে ১৭০-১৮০টি সিনেমা মুক্তি পায়। বেশির ভাগই ছবি নিয়ে মুক্তির আগে থেকেই শোরগোল পড়ে যায়, রিভিউয়েও প্রশংসা ঝরে পড়ে। কিন্তু বছর শেষে দেখা যায়, কেবল চারটি হরর সিনেমাই ব্যবসা করেছে।
চলচ্চিত্র পরিবেশক সঞ্জয় মেহতা আল–জাজিরাকে বলেন, ‘যদি “স্ত্রী ২”, “মুনজ্যা”, “শয়তান” ও “ভুলভুলাইয়া ৩” হিট না হতো, ২০২৪ সাল হতো বলিউডের শোকের বছর।’
বলিউড সিনেমার আয়ের ৬০ শতাংশই আসছে ভারতের প্রেক্ষাগৃহে টিকিট বিক্রির আয় থেকে। বেশির ভাগ সিনেমার ভাগ্য সাধারণত মুক্তির প্রথম সপ্তাহেই নির্ধারিত হয়ে যায়। বক্স অফিসের ফল দেখে আন্দাজ করা হয়, শেষ পর্যন্ত ছবিটি খরচ তুলে আনতে পারবে কি না।
বলিউড সিনেমার দুরবস্থা দেখে নেটফ্লিক্স, অ্যামাজন, ডিজনিসহ অন্য স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্মগুলো নিজেদের নিয়ম বদলে ফেলেছে। আগে তারা সিনেমা কিনত জনপ্রিয় তারকা বা বড় নির্মাতা দেখে। গত বছর থেকে তারা সিনেমার মূল্য নির্ধারণ করছে বক্স অফিসের আয় দেখে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন জ্যেষ্ঠ চলচ্চিত্র সমালোচক আল–জাজিরাকে বলেন, ‘এখন স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্মগুলো সিনেমা হলে মুক্তি পাওয়ার পর ডিজিটাল স্বত্ব কেনে। ফলে ছবি যখন বক্স অফিসে ডাহা ফ্লপ করে, প্ল্যাটফর্মগুলোও দর কমিয়ে দেয়।’
ভারতের সিনেমা–বাণিজ্যের সুপরিচিত বিশ্লেষক কমল নাহাতা। তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্টের জন্য ৬০ হাজার থেকে ৭০ হাজার রুপি নিয়ে থাকেন। তিনি আল–জাজিরাকে বলেন, ‘সিনেমার প্রচারসহ এটা আসলে ১৪ থেকে ১৫টি পোস্ট দেওয়ার একটা চুক্তি, পোস্টের ওপর নির্ভর করে পারিশ্রমিকের বেশ-কম হয়।’
কমল দাবি করেন, তিনি কেবল অর্থের বিনিময়ে সিনেমার প্রচার করেন, তাঁর করা রিভিউ পক্ষপাতহীন। তিনি বলেন, ‘আপনি বিজ্ঞাপনের জন্য ৫০ লাখ রুপি ব্যয় করতে পারেন, কিন্তু সিনেমাটি যদি ভালো না হয়, আমার রিভিউতে সেটাই লিখব। এ আমার পাঠকের কাছে দায়বদ্ধতা।’ তিনি আরও জানান, ‘জিগরা’ সিনেমার প্রচারের জন্য তিনিও অর্থ নিয়েছিলেন, কিন্তু নিজের রিভিউয়ে ঠিকই সিনেমাটিকে ‘হতাশাজনক ও একঘেয়ে’ বলেছেন।
তবে অর্থের বিনিময়ে ইতিবাচক রিভিউ যে দেওয়া হয়, সেটা কমলও জানেন। তিনি বলেন, ‘অনেক জনসংযোগ সংস্থা তাদের তথাকথিত বিশ্লেষক ও সমালোচকদের দিয়ে সিনেমাটিকে ৫-এর মধ্যে ৪ বা ৪.৫ স্টার দেয়। এটা বিরক্তিকর।’
অর্থের বিনিময়ে ইতিবাচক রিউউ দেওয়া বিষয়ে মন্তব্য জানতে আল–জাজিরার পক্ষ থেকে ৩১টি গণমাধ্যম, সমালোচক, বাণিজ্য বিশ্লেষক, ইনফ্লুয়েন্সারকে প্রশ্ন পাঠানো হয়। যার মধ্যে কেবল একটি প্রতিষ্ঠানের প্রতিক্রিয়া পাওয়া গেছে।
সিনেমাটি মুক্তির প্রায় এক মাস আগে অজয় দেবগন একটি অডিও ক্লিপ প্রকাশ করেন, যেখানে কমল আর খান ও করণ জোহরের কথোপকথন ছিল। সেই অডিও ক্লিপে অজয়ের সিনেমার সমালোচনা করার জন্য করণ জোহরের কাছ থেকে ২৫ লাখ রুপি পাওয়ার কথা বলতে শোনা যায় কমলকে।
ভারতের বাণিজ্যবিষয়ক অন্যতম সংবাদপত্র দ্য ইকোনমিক টাইমস তাদের মন্তব্যে বলেছে, তারা কোনো পেইড রিভিউ প্রচার করে না। এমনকি সিনেমা–সংক্রান্ত খবর, সাক্ষাৎকার ছাপার জন্য তারা তারকা বা তাঁদের এজেন্সি থেকে কোনো অর্থও নেয় না।
‘দানব’ আরও বড় হচ্ছে
‘সালমান খান বলেছিলেন, তাঁর সিনেমা “টাইগার ৩” আমার কারণে ফ্লপ হয়েছে। আমার যদি মৃত্যু হয়, ধরে নেবেন, একটা খুন।’ ২০২৩ সালের ২৫ ডিসেম্বর মুম্বাই বিমানবন্দরে পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হওয়র পর টুইট করেছিলেন ভারতের সিনেমা–বাণিজ্যের বিশ্লেষক ও সমালোচক কমল আর খান। কমল গ্রেপ্তার হয়েছিলেন মানহানি মামলায়। সেবারই প্রথম নয়, আগেও একই অভিযোগে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন তিনি।
কমলের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ১১ কোটির বেশি অনুসারী, তিনি প্রায়ই বলিউড তারকাদের চাঁছাছোলা ভাষায় আক্রমণ করে থাকেন।
২০১৬ সালের অক্টোবরে দেওয়ালি উপলক্ষে মুক্তি পায় বড় বাজেটের দুই হিন্দি সিনেমা। এর মধ্যে একটি করণ জোহর প্রযোজিত ও পরিচালিত ‘অ্যায় দিল হ্যায় মুশকিল’, আরেকটি অজয় দেবগন পরিচালিত ও প্রযোজিত ‘শিভায়’।
সিনেমাটি মুক্তির প্রায় এক মাস আগে অজয় দেবগন একটি অডিও ক্লিপ প্রকাশ করেন, যেখানে কমল আর খান ও করণ জোহরের কথোপকথন ছিল। সেই অডিও ক্লিপে অজয়ের সিনেমার সমালোচনা করার জন্য করণ জোহরের কাছ থেকে ২৫ লাখ রুপি পাওয়ার কথা বলতে শোনা যায় কমলকে। ‘কমল আর খান আসলে নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছেন; কারণ, হিন্দি সিনেমা ইন্ডাস্ট্রি তাঁকে সেই সুযোগ করে দিয়েছে। অমিভাভ বচ্চনসহ অনেক বড় তারকাও তাঁর রিভিউ শেয়ার করেছেন,’ এক জ্যেষ্ঠ চলচ্চিত্র সমালোচক আল–জাজিরাকে বলেন।
চলচ্চিত্র–বাণিজ্যের বিশ্লেষক ও সমালোচক হিসেবে কমল আর খানের এই ‘তারকাখ্যাতি’ একটা বাজে উদাহরণ তৈরি করেছে। তাঁকে দেখে অনেক ইউটিউবার ও ইনফ্লুয়েন্সার উদ্বুদ্ধ হয়েছেন বলে মনে করেন অনেকে।
গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে বলিউডের ‘বি’ গ্রেড থ্রিলার সিনেমার নায়ক বিদ্যুৎ জামাওয়াল কথা বলেছিলেন সুমিত ক্যাডেলকে নিয়ে। নিজের সিনেমা ‘ক্র্যাক’-এর প্রচারে ৪৪ বছর বয়সী এই তারকা সুমিতের উদ্দেশে বলেন, ‘ঘুষ চাওয়া একটা অপরাধ, ঘুষ দেওয়াও অপরাধ। আমি দিইনি, সেটাই কি আমার অপরাধ? যখন আপনি একজনের প্রশংসা করেন, তখন আমরা বুঝি আসলে অপরাধী কে?’ পরে তিনি বিষয়টি নিয়ে সুমিতকে ট্যাগ করে টুইটও করেন। যদিও সুমিত ছবির প্রচারের জন্য বিদ্যুতের কাছে টাকা চাওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেন।
গত বছরের জুলাইয়ে মুক্তি পায় ছয় বিলিয়ন রুপি বাজেটের সায়েন্স ফিকশন সিনেমা ‘কল্কি ২৮৯৮এডি’। এ ছবিতে অভিনয় করেন অমিতাভ বচ্চন, কমল হাসান, প্রভাস, দীপিকা পাড়ুকোনের মতো তারকারা। তখন সিনেমার নির্মাতাদের পক্ষ থেকে সুমিত ও বাণিজ্য বিশ্লেষক রোহিত জওয়াকে আইনি নোটিশ দেওয়া হয়। সিনেমার নির্মাতারা বক্স অফিস আয়ের অঙ্ক বাড়িয়ে বলছিলেন, এই দুজনই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এমন মন্তব্যের পরই তাঁদের বিরুদ্ধে আইনি নোটিশ দেওয়া হয়।
‘বাস্তবতা হলো, সিনেমা ইন্ডাস্ট্রি নিজেই দানব তৈরি করেছে। এসব ইনফ্লুয়েন্সার তাদেরই তৈরি, তারা এমন মানুষজন তৈরি করেছে, যাদের যখন–তখন কিনে ফেলা যায়,’ নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন বলিউডের একজন সুপরিচিত নির্মাতা।
কমল আর খান, সুমিত ক্যাডেল ও রোহিত জওয়ার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ নিয়ে তাঁদের মন্তব্য চাওয়া হলে তাঁরা কথা বলেননি।
পেইড রিভিউ কীভাবে হয়
প্রভাত চৌধুরী বলিউডের অন্যতম সফল মার্কেটিং পরিকল্পনাকারী। ৪৫ বছর বয়সী প্রভাত কাজ করেন স্পাইস পিআরে, জনসংযোগ সংস্থাটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা তিনি। প্রভাত তাঁর সংস্থার মাধ্যমে প্রথম সারির বলিউড তারকাদের সঙ্গে কাজ করেন। প্রচারকৌশল, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্টসহ নানা বিষয়ে কৌশলগত পরিকল্পনা করেন তিনি। এ ছাড়া পেইড রিভিউর ব্যবস্থাও করে দেন তিনি।
‘স্পাইসের কর্মচারীরা বিভিন্ন জায়গায় ই–মেইল দিয়ে জানতে চান, কারা কারা রিভিউয়ে আগ্রহী,’ আল–জাজিরাকে বলেন বলিউডের প্রথম সারির এক নির্মাতা।
স্পাইস পিআরের সঙ্গে নিয়মিত কাজ করেন, এমন এক জনসংযোগ এজেন্ট নাম প্রকাশ না করার শর্তে আল–জাজিরাকে বলেন, ‘সংস্থাটি সাংবাদিকদের ফোন করে জানতে চায়, তাঁদের সিনেমাটি পছন্দ হয়েছে কি না। উত্তর যদি “ভালো” হয়, তবে তারা সিনেমার প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান অথবা অভিনয়শিল্পীর কাছ থেকে ইতিবাচক রিভিউর কথা বলে টাকা নেয়। অনেক সময় সে টাকা হয়তো সমালোচক পর্যন্ত পৌঁছায়ই না।’
গত বছরের আগস্টে একটি ঘটনা ঘটে। তখন তরুণ এক বলিউড অভিনেত্রীর স্পাই থ্রিলার সিনেমা মুক্তি পাবে, যার শেষ কয়েকটি সিনেমা সেভাবে ব্যবসা করতে পারেনি। সেই সময়ে ছবিটি মুক্তির আগে প্রভাত চৌধুরী ওই অভিনেত্রীকে ফোন করে ১১ লাখ রুপি চান ইতিবাচক রিভিউ দেওয়ার জন্য। সংস্থাটির ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র আল–জাজিরাকে এ তথ্য জানিয়েছে।
সূত্রটি আরও জানায়, ওই অভিনেত্রী তখন যেসব সমালোচককে টাকা দেওয়া হবে, তাঁদের নাম জানতে চান। কিন্তু প্রভাত চৌধুরী জানিয়ে দেন, সমালোচকদের নাম জানানো যাবে না। নাম জানালে তাঁদের সঙ্গে সম্পর্ক নষ্ট হবে। পরে ওই অভিনেত্রী অবশ্য আর টাকা দেননি। এ বিষয়ে জানতে আল–জাজিরা প্রভাত চৌধুরীর সঙ্গে যোগাযোগ করে, তবে তিনি সাড়া দেননি।
বলিউডে কীভাবে পয়সা খরচ করে ইতিবাচক রিভিউ দেওয়া হয়, এটা নিয়ে সম্প্রতি স্মিতা প্রকাশের সঙ্গে এএনআই পডকাস্টে কথা বলেছেন তাপসী পান্নু। সাম্প্রতিক সময়ে আরেক তরুণ অভিনেত্রী শাহরুখ খানের বিরুদ্ধে অভিযোগের আঙুল তোলেন। তাঁর ভাষ্যে, পেইড রিভিউ করার জন্য স্বয়ং শাহরুখ খানই নাকি উৎসাহিত করেছিলেন। শাহরুখ নাকি ওই অভিনেত্রীকে বলেছিলেন, ‘পজিটিভ স্টোরির জন্য খরচকে প্রচারণার খরচ হিসেবে দেখো।’ এ বিষয়ে শাহরুখের মন্তব্য জানার চেষ্টা করেছে আল–জাজিরা, তবে তিনি সাড়া দেননি।
‘বিকল্প বাস্তবতা’
অর্থের বিনিময়ে সিনেমা বা তারকারদের সম্পর্কে স্তুতিবাক্য লেখার চল যে কেবল বলিউডেই আছে, তা নয়, সারা দুনিয়াতেই এ চর্চা চলে।
২০০৫ সালে সনি পিকচার্স যুক্তরাষ্ট্রের থিয়েটার দর্শকদের ক্ষতিপূরণ হিসেবে ১ দশমিক ৫ মিলিয়ন ডলার দেয়। সনির সহযোগী প্রতিষ্ঠান কলম্বিয়া পিকচার্সের বিপণন কর্মকর্তারা রিজফিল্ড প্রেসের ডেভিড ম্যানিং নামের একজন কাল্পনিক পর্যালোচক তৈরি করেছিলেন, যিনি ধারাবাহিকভাবে তাদের চলচ্চিত্রের ইতিবাচক রিভিউ লিখতেন। বিষয়টি প্রকাশ্যে আসার পর ক্ষতিপূরণ দিতে বাধ্য হয় সনি।
২০২২ সালে গোল্ডেন গ্লোব পুরস্কার একাধিক কারণে বাতিল করা হয়েছিল, যার মধ্যে অন্যতম কারণ ছিল কনফ্লিক্ট অব ইন্টারেস্টের (স্বার্থের সংঘাত) বিষয়টি সামনে আসা। সে বছর নেটফ্লিক্সের সিরিজ ‘এমিলি ইন প্যারিস’ পুরস্কারের জন্য মনোনয়ন পেয়েছিল। পরে জানা যায়, সিরিজটির প্রযোজক প্যারামাউন্ট নেটওয়ার্ক ২০১৯ সালে গোল্ডেন গ্লোবের কয়েকজন সদস্যকে নিজেদের খরচে ছুটি কাটাতে প্যারিসে পাঠিয়েছিল।
বলিউড এখনো ডেভিড ম্যানিং তৈরি করেনি বটে, তবে ইতিবাচক রিভিউ নিয়ে অনেক অস্বস্তিকর ঘটনা প্রকাশ্যে এসেছে। ২০২৩ সালের গ্রীষ্মে ভারতীয় প্রয়োজনা সংস্থা টি-সিরিজ ‘আদিপুরুষ’ সিনেমাটি মুক্তি দেয়। টি-সিরিজ ১০০ বিলিয়ন রুপির চলচ্চিত্র ও সংগীত প্রযোজনা সংস্থা। হিন্দু পৌরাণিক মহাকাব্য রামায়ণের আধারে নির্মিত সিনেমা ‘আদিপুরুষ’।
মুক্তির পর সিনেমাটির সংলাপ, গ্রাফিকসের কড়া সমালোচনা করেছিলেন অনেক সমালোচক। তবে কোনো গণমাধ্যম আবার রিভিউ করতে গিয়ে সিনেমাটিকে ৫-এ ৪ রেটিং পর্যন্ত দিয়েছেন! তবে এসব রিভিউ আসলে পেইড রিভিউ কি না, সেটা বলা শক্ত। তবে সমালোচকেরা প্রযোজনা সংস্থা থেকে প্রচুর অর্থ পেয়েছেন সে সময়, এমন গুঞ্জন চাউর হয়েছিল। কারণ, মুক্তির পর যেসব এক্স অ্যাকাউন্ট থেকে সিনেমাটির কড়া সমালোচনা করা হয়েছিল, পরে সেগুলো মুছে দেওয়া হয়।
‘সবই বিকল্প বাস্তবতা, ডিস্টোপিয়ান,’ বলিউড সিনেমার হালহকিকত নিয়ে এভাবেই মন্তব্য করেন সুপরিচিত নির্মাতা হংসল মেহতা। তিনি আল–জাজিরাকে বলেন, ‘পিআর অর্থ পাবলিক রিলেশনস, তবে তারা এখন আসলে পেইড রিলেশন করছে। আপনি জানেন না কোনটা ভালো, কোনটা মন্দ, কোনটা ঠিক, কোনটা ভুল। সিনেমা টিকে থাকতে ব্যর্থ হচ্ছে; কারণ, এই শিল্পে কিছুই আর মৌলিক নেই।’
২০২৩ সালে ‘আদিপুরুষ’ যে ডাহা ফ্লপ হয়েছিল, সে কথা বলাই বাহুল্য। তবে সিনেমাটির পেইড রিভিউর জন্য খরচ করার কথা অস্বীকার করেন টি-সিরিজের এক কর্মকর্তা।
‘তারা (বলিউডের প্রযোজক ও অভিনয়শিল্পী) বক্স অফিসের আয়ের সাজানো অঙ্ক দেখান, ভুয়া রিভিউ প্রচার করেন। বলিউড নিজেই নিজের কবর খুঁড়ছে। তারা নিজেদের কবরে দাঁড়িয়ে এটা করছে, থামার কোনো লক্ষণ নেই,’ বলেন চলচ্চিত্র পরিবেশক রাজ বানসাল।
তবে কোথাও কোথাও প্রযোজকেরা এই পদ্ধতির বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছেন। গত বছর দক্ষিণ ভারতের তামিলনাড়ুর প্রযোজকদের সংগঠন আদালতে এই মর্মে আরজি জানায় যে সিনেমা মুক্তির তিন দিন পর্যন্ত যেন রিভিউর ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়।
তাদের দাবি ছিল, কমল হাসানের ‘ইন্ডিয়ান ২’, সুরিয়ার ‘কাঙ্গুভা’ ও রজনীকান্তের ‘ভেট্টাইয়ান’-এর ব্যবসায় নেতিবাচক রিভিউর প্রভাব পড়েছে। তিনটি ছবির বাজেট ছিল ১১০ মিলিয়ন ডলার, সেভাবে ব্যবসা না করায় তিন ছবির প্রযোজকেরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।
তবে আদালত প্রযোজকদের আবেদন খারিজ করে দিয়েছিলেন। আদালত বরং সরকার ও ইউটিউবকে সিনেমা রিভিউ নিয়ে উদ্যোগ নেওয়ার আদেশ দিয়েছিলেন।
বলিউডের অনেকেই মনে করেন, ‘জিগরা’ দিয়ে সম্ভবত করণ জোহর পেইড রিভিউ বন্ধের জন্য প্রথম পদক্ষেপ নিয়েছেন। তবে ধর্মা প্রোডাকশনস এই নীতিতে কতটা অটল থাকতে পারবে, সেটা নিয়েও সন্দেহ প্রকাশ করেছেন তাঁরা। সমালোচকেরা মনে করেন, ধর্মা প্রোডাকশনস যদি আগ্রহী ভূমিকা নেয়, তাহলে পেইড রিভিউ বন্ধ করা কঠিন হবে না।