অভিনেতা–নৃত্যশিল্পী–জাভেদ জাফরি
অভিনেতা–নৃত্যশিল্পী–জাভেদ জাফরি

৬৩–তে এসেও তরুণ! জাভেদ জাফরির বয়স–ভাঙা ফিট থাকার রহস্য

৬০ পেরোলে শরীর–স্বাস্থ্যের অতিরিক্ত যত্ন প্রয়োজন—এ কথা অনেকে বলেন। পেশির জন্য প্রোটিন, হাড়ের জন্য ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি, হৃদ্‌যন্ত্র ও মস্তিষ্কের জন্য ওমেগা থ্রি আর হজম ও কোষ–স্বাস্থ্যের জন্য ফাইবার, ভিটামিন বি–১২ ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট—সবই জরুরি। কিন্তু এই হিসাবের বাইরে গিয়ে যাঁর নামে আজও ‘অবিশ্বাস্যভাবে ফিট’ অভিধা জুড়ে যায়, তিনি বলিউড অভিনেতা–নৃত্যশিল্পী–কমেডিয়ান জাভেদ জাফরি। আজ তাঁর ৬৩তম জন্মদিন। উপলক্ষটা তাই একেবারেই আলাদা।

বয়স নয়, অভ্যাসই আসল
কার্লি টেলসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জাভেদ জাফরি খোলাখুলি বলেছেন—নিয়মিত ব্যায়াম, ঘরোয়া খাবার আর স্বল্প–প্রক্রিয়াজাত খাদ্যই তাঁর ‘এজ–রিভার্সিং’ রুটিনের মূলে। দিন শুরু করেন এক লিটার গরম পানি দিয়ে। এরপর ফল—পেঁপে, আপেল, অ্যাভোকাডো, কলা। প্রাতঃরাশে থাকে চারটি ডিম, সঙ্গে বাদাম–আখরোট, ব্লুবেরি, কখনো রাগির রুটি। দুপুরে সালাদ, রাতে সাধারণ ঘরোয়া খাবার। ধূমপান–মদ একেবারেই নয়। আর নাচ—যেটা তাঁর জীবনেরই অংশ।

পুষ্টিবিদের চোখে এই ডায়েট
পুষ্টিবিদ সঞ্জনা মালহোত্রা ও এডউইনা রাজের বিশ্লেষণে জানা যায়, প্রতিদিন চারটি ডিমের সঙ্গে বাদাম–আখরোট মিলিয়ে জাভেদ পাচ্ছেন পর্যাপ্ত প্রোটিন, স্বাস্থ্যকর ফ্যাট ও ভিটামিন বি–১২, যা বয়সের সঙ্গে পেশিশক্তি ধরে রাখতে গুরুত্বপূর্ণ। বিভিন্ন ফল দিচ্ছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ভিটামিন সি, যা ত্বক, রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থা ও কোষ মেরামতে সহায়ক। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, ডিমের সংখ্যার চেয়ে বড় বিষয় পুরো জীবনযাপন—যেহেতু জাভেদ নিয়মিত শরীরচর্চা করেন এবং ধূমপান–মদ্যপান নেই, তাই এই ডায়েট তাঁর ক্ষেত্রে সমস্যার নয়।

অভিনেতা–নৃত্যশিল্পী–জাভেদ জাফরি

বাবার ছায়া নয়, নিজস্ব আলো
বিখ্যাত অভিনেতা জগদীপের পুত্র হওয়া সত্ত্বেও বাবার নাম ভাঙিয়ে চলেননি জাভেদ। মা ছিলেন বেগম জাফরি, ভাই নাভেদ জাফরি—যাঁর সঙ্গে ‘বুগি উগি’ শো–তে বিচারকের ভূমিকায় জাভেদ টেলিভিশনের ইতিহাসে আলাদা ছাপ রেখেছেন। ছোটবেলায় বাবার সঙ্গে সম্পর্ক খুব একটা মধুর ছিল না। সময়ের সঙ্গে সেই দূরত্বে সেতু তৈরি হয়েছে, গড়ে উঠেছে সুসম্পর্ক।

কমেডি, অভিনয় আর নাচ—এক শরীরে বহু প্রতিভা
তুখোড় কমিক টাইমিং, কিন্তু অভিনয়েও সমান দক্ষ। প্রধান চরিত্র খুব একটা না পেলেও ছোট ছোট চরিত্রে নিজের আলাদা জায়গা বানিয়ে নিয়েছেন জাভেদ। টেলিভিশন, সিনেমা, ওয়েব সিরিজ—সব ফরম্যাটেই সাবলীল। নৃত্যশিল্পী হিসেবেও তিনি অনন্য। ইন্ডাস্ট্রি তাঁকে চেনে ‘মাল্টি–ট্যালেন্টেড’ তারকা হিসেবেই।
১৯৮৫ সালে অনিল কাপুর অভিনীত ‘মেরি জং’ ছবির মধ্য দিয়ে বলিউডে তাঁর যাত্রা। সেখানেই নাচে তাঁর পারদর্শিতা চোখে পড়ে। এরপর ‘জ জন্তরম ম মন্তরম’, ‘ম্যায় প্রেম কি দিয়ানি হুঁ’, ‘সলাম নামস্তে’, ‘থ্রি ইডিয়টস’, ‘ধমাল’—একাধিক জনপ্রিয় ছবিতে তিনি নিজের মতো করে দাগ কেটেছেন।

জাভেদ নিয়মিত শরীরচর্চা করেন

১৯৯৬ সালে ভাই নাভেদ ও রবি বহেলের সঙ্গে শুরু করেন নাচের রিয়েলিটি শো ‘বুগি উগি’—যা সে সময় টেলিভিশনের অন্যতম জনপ্রিয় অনুষ্ঠান হয়ে ওঠে। অভিনয়ের বাইরে কণ্ঠশিল্পী হিসেবেও তাঁর সুনাম আছে—হিন্দি ডাবিংয়ে ‘মিকি মাউস’ থেকে শুরু করে ‘ডন কারনেজ’, এমনকি ‘সপনে’ ছবিতে প্রভু দেবার কণ্ঠও ছিলেন জাভেদ।

কাজই জীবন
৩৫০টির বেশি ছবিতে কাজ করেছেন জাভেদ। রাজনীতিতেও নাম লিখিয়েছিলেন—২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে আম আদমি পার্টির প্রার্থী হিসেবে। তবে প্রচারের আলো থেকে পরিবারকে দূরেই রাখতে চান। স্ত্রী হবিবা, তিন সন্তান—ছেলে মিজান বলিউডে পা রেখেছেন। ঢাকঢোল পিটিয়ে না বললেও সমাজসেবামূলক কাজের সঙ্গেও যুক্ত জাভেদ। অবসরে বিশ্বাস নেই তাঁর। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত কাজ করে যেতে চান।

অভিনেতা–নৃত্যশিল্পী–জাভেদ জাফরি

৬৩–তে দাঁড়িয়েও যিনি প্রমাণ করছেন—বয়স কেবল সংখ্যা, আসল পরিচয়টা গড়ে ওঠে অভ্যাসে, শৃঙ্খলায় আর কাজের প্রতি ভালোবাসায়—আজকের দিনে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকে তাঁকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।