Thank you for trying Sticky AMP!!

সোহেল রানার ফুসফুস ৭২ ভাগ সংক্রমিত, ৬ মাস পর্যবেক্ষণে

হাসপাতালের করোনা রোগীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় পুরোপুরি সুস্থ না হওয়া সত্ত্বেও চিকিৎসকের পরামর্শে বাসায় ফিরেছেন চলচ্চিত্রের বরেণ্য অভিনয়শিল্পী সোহেল রানা। সর্বশেষ সিটিস্ক্যান রিপোর্ট অনুযায়ী করোনার কারণে তাঁর ফুসফুসের ৭২ ভাগ সংক্রমিত। তাঁকে আগামী ছয় মাস পর্যবেক্ষণে রাখতে বলা হয়েছে বলে জানালেন চিকিৎসক স্ত্রী জিনাত বেগম। আজ শনিবার দুপুরে জিনাত বেগমের নম্বরে ফোন করা হলে সোহেল রানার সর্বশেষ অবস্থার বর্ণনা এভাবেই দিলেন তিনি।

হাসপাতালের করোনা রোগীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় পুরোপুরি সুস্থ না হওয়া সত্ত্বেও চিকিৎসকের পরামর্শে বাসায় ফিরেছেন চলচ্চিত্রের বরেণ্য অভিনয়শিল্পী সোহেল রানা

জিনাত বেগম বলেন, ‘ওনার বয়স হয়েছে। এদিকে করোনা সংক্রমণের পর রোগ প্রতিরোধক্ষমতা একদম নাই। ডাক্তার বলছেন, আপনারা এই পেশেন্ট আর আমাদের হাসপাতালে রাইখেন না। কারণ, তাঁর একদমই ইমিউন সিস্টেম নাই। হাসপাতালে আমরা যে তাঁকে দেখতে আসছি, আয়া-ওয়ার্ড বয় থেকে শুরু করে সবার মধ্যেই কিন্তু নানা ধরনের ব্যাকটেরিয়া আছে। দেখা যাবে আমরাই আবার তাঁর মধ্যে এটা ছড়াইয়ে দেব। তিনি যাও একটু কোভিড থেকে উঠেছেন, মোটামুটি অক্সিজেন ৯১-৯২-৯৩–এর মধ্যে থাকছে, আস্তে আস্তে বাড়ছে, কিন্তু এই অবস্থায় যদি তাঁকে হাসপাতালেই রাখা হয়, তিনি কোভিডে নয়, অন্য কোনো রোগে ভুগবেন। নিউমোনিয়াও হতে পারে। তাঁর তো ইমিউন সিস্টেম একদমই নাই।’

বাসায় নিয়ে যাওয়া হলে কৃত্রিম উপায়ে অক্সিজেন দিতে হচ্ছে সোহেল রানাকে

বাসায় নিয়ে যাওয়া হলে কৃত্রিম উপায়ে অক্সিজেন দিতে হচ্ছে সোহেল রানাকে। স্ত্রী জিনাত বেগম বললেন, ‘আমরা অক্সিজেন দেওয়ার মেশিন বাসায় নিয়ে এসেছি। এই ধরনের রোগীর জন্য প্রাথমিকভাবে যা যা লাগে, সবই নিয়ে এসেছি। ডাক্তারই আমাকে বললেন, আপনি যেহেতু ডাক্তার, আপনাকে অনেক কিছু খেয়াল রাখতে হবে। ইনসুলিনে ব্লাড সুগার হাইপো হয়ে যেতে পারে, এটাও মাথায় রাখতে হবে। রোগীর অবস্থা ওই ক্ষণে খারাপও হয়ে যেতে পারে। তিন বেলা ব্লাড সুগার দেখতে হবে। পালস চেক করতে হবে। অনেক রকম কথা বলেছেন। অনেক ধরনের ওষুধও দিয়েছেন, টাইম টু টাইম এসব খাওয়াতে হবে। ভালো ভালো খাবার খাওয়াতে হবে। কমপক্ষে ছয় মাস লাগবে তাঁর স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসতে। এখন তো খাওয়ার রুচি একেবারে নাই, তারপরও যা যা খেতে চায়, তাই আমি বানিয়ে দিচ্ছি। প্রোটিনজাতীয় খাবার বেশি দিচ্ছি। গ্রিল, ফিশ কাটলেটসহ নানা ধরনের আইটেম দিচ্ছি—এগুলো সে পছন্দ করে। স্যুপও দিচ্ছি।’

বাবা সোহেল রানার সঙ্গে ছেলে মাশরুর পারভেজ

জিনাত বেগম জানালেন, ‘দিনের বেলা নির্দিষ্ট সময় পরপর শরীরের অক্সিজেনের পরিমাণ অক্সিমিটারে চেক করি। দিনে অক্সিজেনের খুব একটা সমস্যা হয় না। তবে রাতে অক্সিজেন মেশিনটা লাগিয়ে রাখতে হয়।’ কথায় কথায় জিনাত বেগম জানালেন, ‘গেল বছরের ডিসেম্বর মাসের ১৪ তারিখ থেকে সোহেল রানা শারীরিকভাবে অসুস্থ হন। হাসপাতালে ভর্তির কয়েক দিন আগে থেকে জ্বর ও কাশিতে ভুগছিলেন তিনি। শুরুতে চিকিৎসক ওষুধ দেওয়ার পর ভালো না হলে এরপর কয়েকটা টেস্ট করান। এরপর জানতে পারি, তিনি করোনা পজিটিভ। ২৫ ডিসেম্বর রাতে তাঁকে ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়।’

সোহেল রানার স্ত্রী জিনাত বেগম বললেন, আমরা অক্সিজেন দেওয়ার মেশিন বাসায় নিয়ে এসেছি। এই ধরনের রোগীর জন্য প্রাথমিকভাবে যা যা লাগে, সবই নিয়ে এসেছি

প্রসঙ্গত, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের প্রথম পূর্ণাঙ্গ চলচ্চিত্র ‘ওরা ১১ জন’ ছবির প্রযোজক হিসেবে চলচ্চিত্রজগতে প্রবেশ করেন মাসুদ পারভেজ। এটি পরিচালনা করেন চাষী নজরুল ইসলাম। ১৯৭৩ সালে সোহেল রানা নাম ধারণ করে কাজী আনোয়ার হোসেনের বিখ্যাত কাল্পনিক চরিত্র মাসুদ রানার একটি গল্প অবলম্বনে ‘মাসুদ রানা’ ছবির নায়ক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। একই ছবির মাধ্যমে তিনি মাসুদ পারভেজ নামে পরিচালক হিসেবেও যাত্রা শুরু করেন।

১৯৯০ সালের ১৬ আগস্ট সোহেল রানা চিকিৎসক জিনাত বেগমের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। ২০১৫ সালে ২৫তম বিবাহবার্ষিকীতে স্ত্রী জিনাত বেগম কেক খাওয়াচ্ছেন সোহেল রানাকে। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন জি এম কাদের, চলচ্চিত্র তারকা জাভেদ, ওমর সানি, মৌসুমী, শাবনূর, সিমলাসহ অনেকেই

দীর্ঘ ক্যারিয়ারে তিনি বহু কালজয়ী সিনেমা উপহার দিয়েছেন। তিনবার পেয়েছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। ২০১৯ সালে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে আজীবন সম্মাননা পান সোহেল রানা। ১৯৬১ সালে কলেজে পড়তেন সোহেল রানা। তখন থেকেই তিনি রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। মুক্তিযুদ্ধের সময় ঝাঁপিয়ে পড়েন পাকিস্তানি হানাদারদের বিরুদ্ধে। প্রযোজক হিসেবে সোহেল রানা ওরফে মাসুদ পারভেজ নির্মাণ করেন মুক্তিযুদ্ধের প্রথম ছবি ‘ওরা ১১ জন’।