ছুটির দিন শুক্রবারে মতিঝিল এলাকায় থাকে নিস্তব্ধতা। কিন্তু আজ সকালটা এর ব্যতিক্রম। দিলকুশায় দেখা মিলল শত শত মানুষের ভিড়। গাড়ির হর্ন নেই, কিন্তু মানুষের কথাবার্তার গুঞ্জন, মোবাইল ক্যামেরার ক্লিক, আর চায়ের দোকানের হাঁকডাক—সব মিলিয়ে যেন উৎসবমুখর শব্দের এক অদ্ভুত কোলাহল।
এই ভিড়ের একটাই কারণ—ঢাকাই সিনেমার শীর্ষ তারকা শাকিব খান। তাঁর নতুন সিনেমা ‘সোলজার’-এর শুটিং চলছে দিলকুশা এলাকায়। পরিচালনায় সাকিব ফাহাদ। সকাল থেকে লাইট-ক্যামেরা–অ্যাকশনের ব্যস্ততায় জমে উঠেছে পুরো এলাকা। পথচারীরা কাজ ফেলে দাঁড়িয়ে আছেন, খবর শুনে আশপাশের এলাকা থেকে ছুটে এসেছেন অনেকে; শুধু শাকিব খানকে একঝলক দেখার আশায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করছেন উৎসুক মানুষ।
শাকিবের আজকের লুকও ছিল নজরকাড়া—জলপাই রঙের শার্ট, সঙ্গে কার্গো প্যান্ট। অ্যাকশন লুকের রুক্ষতা আর তারকার গ্ল্যামারের সমন্বয়! ক্যামেরা অন হতেই দিলকুশা যেন পরিণত হয় সিনেমার যুদ্ধক্ষেত্রে—একটি দৃশ্যের জন্য বারবার শট, পুলিশি অ্যাকশন, স্টান্ট আর শাকিব খানের উপস্থিতি মিলিয়ে ছুটির দিনের শান্ত সকালটাকে বদলে দেয় ব্যস্ততম এক ফিল্ম সেটে।
এই নাটকীয় আয়োজন দেখতে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষের মুখে তখন একটাই কথা—‘শাকিব খান আসছে, আরও একটু সামনে গেলে দেখা যাবে!’
আন্দোলনকারীদের ভিড়ে ছিল বিভিন্ন বয়স ও শ্রেণির মানুষ। তাঁদের হাতে রঙিন প্ল্যাকার্ড, হাতে আঁকা ব্যানার; কারও কণ্ঠে ক্ষোভ। ব্যানারগুলোয় বড় বড় অক্ষরে লেখা দাবি।
কী চলছিল…
কয়েক মাস ধরে টুকটাক করে চলছিল ‘সোলজার’–এর দৃশ্যধারণ। তবে মতিঝিলের এ দিনের শুটিং ছিল পুরো সিনেমার অন্যতম উত্তেজনাপূর্ণ অংশ—একটি আন্দোলনের দৃশ্য। সকাল থেকেই সেট সাজানো হয়েছিল, যেন বাস্তবের কোনো আন্দোলনস্থল। ক্যামেরা অন হতেই চারপাশ কেঁপে উঠল স্লোগানে স্লোগানে—দ্রব্যমূল্যের দাম...., সিন্ডিকেট...। যেন বাস্তবের রাস্তায় চলছে আন্দোলন; শুটিং আর বাস্তবের ফারাক বোঝা কঠিন।
আন্দোলনকারীদের ভিড়ে ছিল বিভিন্ন বয়স ও শ্রেণির মানুষ। তাঁদের হাতে রঙিন প্ল্যাকার্ড, হাতে আঁকা ব্যানার; কারও কণ্ঠে ক্ষোভ। ব্যানারগুলোয় বড় বড় অক্ষরে লেখা দাবি, প্রতিবাদ আর বঞ্চনার ভাষা আরও ঘন করে তুলছিল দৃশ্যের নাটকীয়তা। সেটের একদিকে দাঁড়িয়ে ছিলেন সংবাদকর্মীরা। কেউ মাইকে বলছেন, ‘লাইভে আছি… পরিস্থিতি উত্তপ্ত…’ কেউ আবার মোবাইলে রেকর্ড করে মুহূর্তেই পাঠাচ্ছেন ‘ব্রেকিং নিউজ’। ক্যামেরার লেন্স আর প্রতিবেদকদের দৌড়ঝাঁপ যেন বাস্তব আন্দোলনেরই স্মৃতি ফিরিয়ে আনছিল।
দিলকুশার রাস্তার ওই অংশটায় দাঁড়িয়ে যদি কেউ অচেনা চোখে তাকাতেন, বুঝতেই পারতেন না—এটা বাস্তব আন্দোলন, নাকি সিনেমার দৃশ্য। শুটিং সেটকে পুরোপুরি ‘রাজপথের আন্দোলন’-এর মতো করতে নির্মাতারা এমনভাবেই সাজিয়েছিলেন সবকিছু।
এই বিশাল ভিড়ের মধ্যে সবচেয়ে ব্যস্ত ছিল পুলিশের দল। ব্যারিকেডের এক পাশে; তারা চেষ্টা করছিল মানুষকে শান্ত করতে, স্লোগান থামানোর আহ্বান জানাতে, ভিড়কে সামলাতে। মাঝে মাঝে পুলিশি বাঁশির শব্দ কেটে দিচ্ছিল কোলাহল, আবার মুহূর্তেই সেই শব্দ ডুবে যাচ্ছিল মানুষের সমবেত স্লোগানে।
ঠিক এমন উত্তেজিত মুহূর্তেই দৃশ্যের কেন্দ্রবিন্দুতে প্রবেশ করেন শাকিব খান। প্রবেশটা ছিল পুরোপুরি সিনেম্যাটিক—মুহূর্তেই যেন ভিড়ের গতি বদলে গেল। সবাই তাকিয়ে থাকল একদিকে।
নির্মাতারা দৃশ্যটি নিখুঁত করার জন্য শাকিব খানকে নিয়ে কয়েকবার টেক নিলেন। প্রতিবার স্লোগান, ধোঁয়া, পুলিশি নির্দেশ, মানুষের ধাক্কাধাক্কি—সবকিছু আবার নতুন করে সাজিয়ে নেওয়া হয়।
ক্যামেরা যখন তাঁর দিকে ঘুরল, তখন পুরো পরিবেশ আরও তীব্র হয়ে উঠল। নির্মাতারা দৃশ্যটি নিখুঁত করার জন্য শাকিব খানকে নিয়ে কয়েকবার টেক নিলেন। প্রতিবার স্লোগান, ধোঁয়া, পুলিশি নির্দেশ, মানুষের ধাক্কাধাক্কি—সবকিছু আবার নতুন করে সাজিয়ে নেওয়া হয়।
এমন দৃশ্য দেখে উপস্থিত অনেকেই মন্তব্য করছিলেন—‘এটা তো সিনেমার শুটিং, কিন্তু মনে হচ্ছে দেশে সত্যিকারের আন্দোলন চলছে!’
শাকিবের লুকও ছিল নজরকাড়া—জলপাই রঙের শার্ট, সঙ্গে কার্গো প্যান্ট। অ্যাকশন লুকের রুক্ষতা আর তারকার গ্ল্যামারের সমন্বয়!
উৎসুক জনতা
দিলকুশার রাস্তার ওই অংশটায় দাঁড়িয়ে যদি কেউ অচেনা চোখে তাকাতেন, বুঝতেই পারতেন না—এটা বাস্তব আন্দোলন, নাকি সিনেমার দৃশ্য। শুটিং সেটকে পুরোপুরি ‘রাজপথের আন্দোলন’-এর মতো করতে নির্মাতারা এমনভাবেই সাজিয়েছিলেন সবকিছু। পাশে আসল পুলিশ সদস্য, তাদের গাড়ি, হুইসেল—সব মিলিয়ে দৃশ্যটা এতই বাস্তব ঠেকছিল যে উৎসুক জনতার অনেকেই পড়ে গেলেন দ্বিধায়। কেউ বলছেন, ‘কী হইল আবার। এখানে কিসের আন্দোলন!’ আবার কেউ মোবাইলে খুঁজছেন খবর, কিছুক্ষণের মধ্যেই ফিসফাস—‘না না, শুটিং হয়তো… কিন্তু এত পুলিশ কেন?’
অভিনেতাশিল্পীদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষও ভিড়ে মিশে ছিলেন, যেন তারাও দৃশ্যের অংশ। ঠিক এ কারণেই বোঝা কঠিন হয়ে উঠেছিল কোথায় অভিনয়, কোথায় বাস্তব প্রতিক্রিয়া।
শুটিং চলছে জেনে কেউ কেউ চলে যেতে চাইলেও ‘শাকিব খান আছেন’—এই খবর ছড়িয়ে পড়তেই মুহূর্তেই ভিড় দ্বিগুণ হয়ে যায়। ব্যারিকেডের বাইরে থেকে তাঁকে একনজর দেখা যায়নি বটে, তবু শুধু শাকিব খানকে খুব কাছে শুটিং করতে দেখার অনুভূতি যেন মানুষের মাঝে নতুন উত্তেজনা ছড়িয়ে দেয়।
রিকশাওয়ালা থেমে দাঁড়িয়ে থাকে, হাতে বাঁধাই করা ঝালমুড়ির ডোল নিয়ে হকার থেমে যায় মাঝরাস্তায়। একজন পথচারী ফোন কলে বলছেন—‘একটু দেরি হবে, শাকিবের শুটিং লাগছে সামনে।’ আবার আশপাশের ভবনের ছাদে উঠে দাঁড়িয়েছেন বিভিন্ন অফিসের নিরাপত্তকর্মীরা, লুকিয়ে কেউ ভিডিও করছেন দৃশ্যধারণের প্রতিটি মুহূর্ত।
কঠোর নিরাপত্তা
ইদানীং শুটিংয়ের গুরুত্বপূর্ণ দৃশ্য সিনেমা হলের আগেই এসে পড়ে ফেসবুক নিউজফিডে। ‘সোলজার’ সিনেমার ক্ষেত্রেও তা–ই হয়েছে। শাকিব খানের লুক থেকে সিনেমার গুরুত্বপূর্ণ দৃশ্য ঘুরছে ফেসবুকে। আউটডোরে শুটিং হওয়ায় বাড়তি নিরাপত্তা ছিল আজ। প্রোডাকশন টিমের সদস্যরা ভিডিও ও ছবি নিতে বারণ করেছেন সবাইকে। প্রতিটি পয়েন্টে দায়িত্বে ছিলেন কেউ না কেউ। এমনকি আশপাশের ভবনেও দায়িত্বে ছিলেন ইউনিটের সদস্যরা।
হঠাৎই ভূমিকম্প
সবকিছু চলছিল স্বাভাবিক গতিতে। একটি গুরুত্বপূর্ণ দৃশ্যের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন শাকিব খান। হাতে ধরা আয়নায় একবার চুল ঠিক করছেন, আবার মেকআপ আর্টিস্টের দিকে তাকিয়ে নিশ্চিত হচ্ছেন আলো–ছায়ায় তাঁর চেহারা স্ক্রিনে ঠিকঠাক ফুটবে কি না। পাশে নির্মাতার টিম দাঁড়িয়ে দৃশ্যটির টেকনিক্যাল ব্রিফিং দিচ্ছিল—কোন দিক থেকে হাঁটবেন, কোথায় থামবেন, কোন সংলাপের আগে ক্যামেরা প্যান করবে—সবই সাজানো।
ঠিক সেই মুহূর্তেই আচমকা ঘটে গেল অপ্রত্যাশিত ঘটনা। প্রথমে হালকা কম্পন, তারপর দ্বিতীয় দফায় ভবনগুলো দুলে উঠতেই সবাই বুঝে ফেলল—ভূমিকম্প! মুহূর্তের ভেতর পুরো পরিবেশের গতি বদলে গেল। দুলতে থাকা মতিঝিলের বহুতল ভবনগুলো থেকে কাচের ঝনঝন শব্দও শোনা গেল! অনেকে দৌড়ে নেমে আসতে লাগলেন রাস্তায়। শুটিং স্পটে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ল মুহূর্তেই—কেউ চিৎকার করছে, কেউ এক জায়গায় জড়ো হচ্ছেন, আবার কেউ মোবাইলে প্রিয়জনকে ফোন ধরছেন কাঁপা কণ্ঠে।
চোখের পলকেই নিরাপত্তারক্ষী, বডিগার্ড এবং শুটিং ইউনিটের সদস্যরা শাকিব খানকে চারদিক থেকে ঘিরে ফেললেন। তাঁরা নিশ্চিত করতে চাইছিলেন, ভিড় ও আতঙ্কের মধ্যে যেন কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি না ঘটে। কিন্তু ঠিক তখনই সবচেয়ে শান্ত ছিলেন শাকিব খান নিজেই। কাঁপা সড়কের ওপর সোজা দাঁড়িয়ে তিনি আশপাশের সবাইকে বললেন—‘আরে, আমরা তো রাস্তায় আছি। ভয় পাবেন না কেউ। কেউ আতঙ্কিত হবেন না। সব ঠিক আছে।’
তাঁর এই দৃঢ়, শান্ত কণ্ঠ যেন আশপাশের মানুষকে একটা বড় স্বস্তি দিল। ধীরে ধীরে স্বাভাবিকতা ফিরতে শুরু করল। কয়েক মিনিটের মধ্যেই কম্পন থেমে গেলে ইউনিট সদস্যরা আবার পরিস্থিতি সামাল দিতে ব্যস্ত হয়ে উঠলেন।
কিছুক্ষণ বিশ্রাম, পানি খাওয়া আর সবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পর আবার শুরু হলো ‘সোলজার’-এর শুটিং। একজন বলতে শোনা গেল—‘রিয়েল হিরো শাকিব ভাই। ভূমিকম্পের সময়ও কতটা শান্ত!’
‘সোলজার’ ছবিতে শাকিবের নায়িকার চরিত্রে দেখা যাবে তানজিন তিশাকে। এ ছাড়া সিনেমাটিতে আছেন তারিক আনাম খান, তৌকীর আহমেদ, জান্নাতুল ফেরদৌস ঐশীসহ অনেকে।
‘সোলজার’ ছবিতে শাকিবের নায়িকার চরিত্রে দেখা যাবে তানজিন তিশাকে। এ ছাড়া সিনেমাটিতে আছেন তারিক আনাম খান, তৌকীর আহমেদ, জান্নাতুল ফেরদৌস ঐশীসহ অনেকে।