ভিউয়ের রেকর্ড গড়েছে শাকিব খান অভিনীত ‘তুফান’ সিনেমার ‘লাগে উরাধুরা’ ও ‘দুষ্টু কোকিল’ শিরোনামের দুই গান
ভিউয়ের রেকর্ড গড়েছে শাকিব খান অভিনীত ‘তুফান’ সিনেমার ‘লাগে উরাধুরা’ ও ‘দুষ্টু কোকিল’ শিরোনামের দুই গান

১০০ কোটি ভিউ! ইউটিউবে বাংলা সিনেমার দুই গানের মাইলফলক

ভিউয়ের রেকর্ড গড়েছে রায়হান রাফী পরিচালিত ‘তুফান’ সিনেমার দুই গান। শাকিব খান অভিনীত এ ছবির ‘লাগে উরাধুরা’ ও ‘দুষ্টু কোকিল’ শিরোনামের দুই গান ইউটিউবে ১ বিলিয়ন অর্থাৎ ১০০ কোটি ভিউয়ের মাইলফলক পার করেছে।
গত বছরের ২৮ মে ইউটিউবে প্রকাশ পায় ‘তুফান’ সিনেমার প্রথম গান ‘লাগে উরাধুরা’। ‘লাগে উরাধুরা’ গানটির কোরাস অংশ লেখা শরীফ উদ্দিনের, বাকি গানটি লিখেছেন রাসেল মাহমুদ, সুর ও সংগীত প্রীতম হাসানের। এতে দ্বৈতভাবে কণ্ঠ দিয়েছেন প্রীতম হাসান ও দেবশ্রী অন্তরা। চরকি ও এসবিএফের ইউটিউব চ্যানেল মিলিয়ে এ গানের ভিউ ৪৪ কোটি ৯৫ লাখের বেশি। এর মাঝে চরকির ইউটিউবে দেখা হয়েছে ৩৩ কোটি ৬৯ লাখ ৪০ হাজারের বেশি আর এসবিএফে ভিউ ছাড়িয়েছে ১১ কোটি ২৬ লাখ ৩১ হাজারের বেশি।

‘লাগে উরাধুরা’ শিরোনামের গানের দৃশ্যে শাকিব খান ও মিমি চক্রবর্তী

গত বছরের ২০ জুন অফিশিয়ালি দুটি ইউটিউব চ্যানেলে মুক্তি পায় এ ছবির গান ‘দুষ্টু কোকিল’। গানটিতে কণ্ঠ দিয়েছেন ঢাকার দিলশাদ নাহার কনা ও কলকাতার আকাশ সেন। গানটির গীতিকার ও সুরকারও আকাশ সেন। গানটির চিত্রায়ণে দেখা যায়, একটি পানশালায় এই গানে পারফর্ম করছেন মিমি চক্রবর্তী, তাঁকে দেখেই প্রেমে পড়ে যান নায়ক শাকিব খান। চরকি ও এসবিএফের ইউটিউব চ্যানেল মিলিয়ে এ গানের ভিউ ৫০ কোটির বেশি। এর মাঝে চরকির ইউটিউবে গানটি দেখা হয়েছে ৩৯ কোটি ৯১ লাখ ৪৮ হাজার বারের বেশি আর এসবিএফ ইউটিউবে ১৬ কোটি ৪০ লাখ বারের বেশি।

দর্শকের প্রতিক্রিয়া
প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গেই গান দুটি ভাইরাল হয়। দেশ-বিদেশের কয়েক শ ইউটিউবার, কনটেন্ট ক্রিয়েটর মেতে ওঠেন ‘তুফান’ সিনেমার দুই গান নিয়ে। সেখানে তাক লাগানোর মতো ছিল গানটি নিয়ে ইউটিউবারদের উচ্ছ্বাস। যাঁরা মূলত হিন্দি বা দক্ষিণী সিনেমা, সিরিজের রিভিউ করেন, এমন অনেক ইউটিউবারের প্রশংসা পায় গানটি। ইউটিউব শর্টস, ফেসবুক রিলস, টিকটকসহ নানা মাধ্যমে হয়ে ওঠে বহুল চর্চিত বিষয়। ইউটিউবের মন্তব্যেও প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন শ্রোতারা। গান দুটিতে মন্তব্য জমা হয়েছে লাখের বেশি।


উচ্ছ্বসিত শিল্পীরাও
এই মাইলফলকে সংগীতশিল্পী কনা বলেন, ‘অবশ্যই অনেক অনেক ভালো লাগার খবর। গানটি নিয়ে মানুষের এত এত ভালোবাসা পেয়েছি, তা বলে শেষ করা যাবে না। মঞ্চে যখন পারফর্ম করি, দর্শকের মাঝে এত উচ্ছ্বাস দেখি, অনেক ভালো লাগে। এ গান ছাড়াও আমার আরও কিছু সিনেমার গান মানুষের সাড়া পেয়েছে, শিল্পী হিসেবে এটা অনেক বড় পাওয়া। যদিও ভিউয়ের জন্য গান করি না, তবে ভিউকে অস্বীকার করার সুযোগও নেই। মানুষ ভালোবাসে বলেই ভিউ হয়।’

‘দুষ্টু কোকিল’ গানে শাকিব খান ও মিমি চক্রবর্তী। ছবি: প্রযোজনা সংস্থার সৌজন্যে

চলতি বছরের জুলাইয়ে ইউটিউবে ৫০ কোটি ভিউ পার করে ‘দুষ্টু কোকিল’। এত কম সময়ে ইউটিউবে দেশি বাংলা সিনেমার কোনো গানে এটি নতুন রেকর্ড। প্রথম আলোর কাছে এ মাইলফলকে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছিলেন আকাশ সেন। কলকাতা থেকে হোয়াটসঅ্যাপে প্রথম আলোকে জানান, এত কম সময়ে এত মানুষের ভালোবাসা, যেকোনো সংগীতশিল্পীর জন্যই অনেক বড় পাওয়া। আকাশ সেন বলেন, ‘দেখুন, একদিন আমি থাকব না। গানটা থাকবে। এত মানুষের ভালোবাসার উত্তর দেওয়ার ভাষা আমার নেই। গানটি শুধু বাংলাদেশে নয়, কলকাতাসহ ভারতের অন্যান্য রাজ্যের মানুষও পছন্দ করেছেন। এমনকি ব্যাংকক থেকেও বন্ধুরা কল করে জানিয়েছেন, সেখানকার নানা পার্টিতে এ গান বেজেছে। এর চেয়ে বড় পাওয়া আর কী হতে পারে।’
গানটি তৈরির পেছনের গল্পও শুনিয়েছিলেন আকাশ সেন। বলেছিলেন, ‘আমার বাড়ির পাশে একটি আমগাছ আছে। বসন্তকালে সেখানে সারা দিন কোকিল ডাকাডাকি করে। এক কোকিল আরেক কোকিলকে মুগ্ধ করতেই এভাবে ডাকাডাকি করে। এভাবে সবার সামনে কোকিল প্রেম নিবেদন করে বলেই তাকে দুষ্টু বলা হয়েছে। এই মজা থেকেই গানের জন্ম।’

গানটি কিন্তু অন্য একটি সিনেমার জন্য তৈরি করেছিলেন আকাশ। কিন্তু সে সিনেমার প্রযোজকের পছন্দ না হওয়ায় গানটি নিজের কাছে রেখে দেন তিনি। গায়িকা কনা গানটি রায়হান রাফীকে শোনান। পরিচালক সিনেমার জন্য গানটি পছন্দ করেন।
এ মাইলফলকের পুরো কৃতিত্ব দর্শকদের দেন আকাশ সেন। তাঁর কথায়, ‘শ্রোতারাই সবকিছু।’ তিনি বলেন, ‘জীবনে প্রথম গান যখন বানিয়েছিলাম, সেদিনও মনে হয়েছিল, একটা মঞ্চে দাঁড়িয়ে অনেক শ্রোতাকে গানটি শোনাচ্ছি। শ্রোতারা নতুন গানটি শুনে রোমাঞ্চিত হচ্ছেন। তো আমি যে গানই বানাই না কেন, পরিচালক-প্রযোজক থেকে হয়তো আইডিয়াটা নিই, কিন্তু আমার সামনে থাকেন সেই লাখো কোটি শ্রোতা; তাঁদের আবেগ, পছন্দই আমার মাথায় কাজ করে। গানটির মাধ্যমে এত শ্রোতার কাছে যে আমি পৌঁছাতে পেরেছি, এটাই আমার কাছে বড় আনন্দের।’

বাংলা সিনেমার এ জোয়ার অব্যাহত থাকুক
শুধু গানেই নয়, বক্স অফিসেও দারুণ সাফল্য পেয়েছে ‘তুফান’। বলা যায় এরপর ঘুরে দাঁড়ায় বাংলা কমার্শিয়াল সিনেমার বাজার। ১০০ কোটির মাইলফলকে উচ্ছ্বসিত নির্মাতা রায়হান রাফীও। প্রথম আলোকে এ নির্মাতা বলেন, ‘“তুফান” সিনেমার পর বাংলাদেশের সিনেমার একটা জোয়ার অব্যাহত আছে। মানুষ হলে যাচ্ছে। নতুন নতুন প্রযোজকেরা ইন্ডাস্ট্রিতে আসছেন। এ জোয়ার অব্যাহত থাকুক।’
গত বছরের ১৭ জুন পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে দেশের প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায় শাকিব খান অভিনীত ‘তুফান’। দেশের বাইরেও ‘তুফান’ তোলে এ সিনেমা। আদনান আদিব খান, রায়হান রাফীর গল্পে, আদনান আদিব খানের চিত্রনাট্যে ‘তুফান’ সিনেমায় শাকিব খানকে দ্বৈত চরিত্রে দেখা যায়। নায়কের বিপরীতে অভিনয় করেছেন ভারতের মিমি চক্রবর্তী এবং বাংলাদেশের নাবিলা। সিনেমাটি প্রযোজনা করেছে আলফা-আই স্টুডিওজ লিমিটেড; ডিজিটাল পার্টনার চরকি এবং ইন্টারন্যাশনাল ডিস্ট্রিবিউটর এসভিএফ।