কয়েক দিন ধরে হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন ‘সোহরাব রুস্তম’ ছবির নায়িকা সাহিনা আকতার বনশ্রী। আজ মঙ্গলবার ভোরে শিবচর সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। পরিবারের পক্ষ থেকে প্রথম আলোকে খবরটি নিশ্চিত করেছেন আবুল বাসার, তিনি সম্পর্কে বনশ্রীর ভগ্নিপতি।
আবুল বাসার বলেন, বনশ্রীর একমাত্র ছেলে তাঁর মামার সঙ্গে ঢাকার মোহাম্মদপুরে থাকেন। তাঁরা শিবচরের পথে। এরপর তাঁর দাফনের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে। তবে আপাতত তাঁর মরদেহ নিয়ে যাওয়া হবে শিবচর কুমিরপাড় এলাকায় নানিবাড়িতে।
একসময় রুপালি পর্দা কাঁপিয়েছেন চিত্রনায়িকা বনশ্রী। ‘সোহরাব-রুস্তম’, ‘মহা ভূমিকম্প’সহ আলোচিত কয়েকটি ঢাকাই সিনেমার নায়িকা তিনি। তবে বেশ কয়েক বছর ধরে সময়টা ভালো যাচ্ছিল না একসময়ের জনপ্রিয় নায়িকার। মাথা গোঁজার আশ্রয়ও হারান এক পর্যায়ে। শহুরে জীবনের নানা চড়াই-উতরাই শেষে তিনি ফিরে যান নিজ এলাকা মাদারীপুরের শিবচর উপজেলায়। নানা জায়গায় ঘুরে অবশেষে এ চিত্রনায়িকার ঠাঁই মেলে সেখানকার আশ্রয়ণ প্রকল্পের একটি ঘরে। সরকারি অনুদান হিসেবে পাওয়া ২০ লাখ টাকার সুদ হিসেবে মাসে মাসে যা পেতেন, তা দিয়েই চলছিল তাঁর সংসার।
শিবচরের মাদবরের চর ইউনিয়নের মেয়ে বনশ্রী। ১৯৭২ সালের ২৩ আগস্ট এই এলাকার শিকদারকান্দি গ্রামে জন্ম তাঁর। বাবা মজিবুর রহমান মজনু শিকদার ও মাতা সবুরজান রিনা বেগমের দুই মেয়ে ও এক ছেলের মধ্যে বনশ্রী বড়। সাত বছর বয়সে পরিবারের সঙ্গে রাজধানী ঢাকায় গিয়ে বসবাস শুরু করেন তিনি।
১৯৯৪ সালে ‘সোহরাব-রুস্তুম’ সিনেমার মধ্য দিয়ে রুপালি পর্দায় অভিষেক ঘটে বনশ্রীর। নায়ক ইলিয়াস কাঞ্চনের বিপরীতে ব্যবসায় সফল হয় ছবিটি। পরিচিতি পান বনশ্রী। এরপর আরও ৮ থেকে ১০টি ছবিতে অভিনয় করেন তিনি। নায়ক মান্না, আমিন খান, রুবেলের বিপরীতে নায়িকা হিসেবে অভিনয় করেন বনশ্রী। রুপালি পর্দার মতো জীবনও হয়ে উঠে রঙিন।
জীবনকালে এক সাক্ষাৎকারে বনশ্রী জানিয়েছিলেন, একসময় বিটিভিতে আবৃত্তি করতেন। ছোটবেলা থেকেই সংস্কৃতিমনা ছিলেন। উদীচী গণসাংস্কৃতিক সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। অভিনয় শেখেন সুবচন নাট্য সংসদে। অভিনয় শেখা থেকেই চলচ্চিত্রে কাজের টান তৈরি হয়। এরপর সুযোগ আসে। অভিনয় করেন ‘সোহরাব-রুস্তম’ সিনেমায়। বেঁচে থাকতে বনশ্রী বলেছিলেন, ‘৯০ দশকে বাংলা সিনেমার জয়-জয়কার ছিল। বিনোদনের মধ্যে বিটিভি আর ছিল সিনেমা হল। সে সময় ১০টির মতো সিনেমায় কাজ করেছি। “নেশা”, “মহা ভূমিকম্প”, “প্রেম বিসর্জন” ও “ভাগ্যের পরিহাস” ছবিতে একটানা কাজ করি। নায়ক মান্না ও রুবেলের সঙ্গে অভিনয় করেছি। তবে চলচ্চিত্র ছেড়ে দেওয়ার পরই আর্থিক অনটনে পড়ি। শাহবাগে একসময় ফুলের ব্যবসায়ও করেছি। বাসে বাসে হকারিও করতে হয়েছে তিন বেলা খাবার জুটাতে।’