
হঠাৎই আড়ালে চলে যান জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত অভিনয়শিল্পী সাদিকা পারভীন পপি। প্রায় পাঁচ বছর তাঁকে মিডিয়ার কোথাও দেখা যাচ্ছিল না। কোথায় আছেন তিনি, সেটাও জানা যাচ্ছিল না। এর মধ্যেই গত বছর জিডিসূত্রে আলোচনায় আসেন চিত্রনায়িকা। সেই পপি এখন কোথায় আছেন?
আড়ালে থাকার সময় সহশিল্পীদের অনেকেই বলতেন, পপি বিয়ে করে সংসারী হয়েছেন। হয়েছেন সন্তানের মা। কিন্তু এ সম্পর্কে যথাযথ তথ্য কেউ দিতে পারেননি। সেই পপি পারিবারিক বিরোধের জেরে জোর আলোচনায়। হঠাৎ তাঁর নাম সামনে আসে। তাঁর ছোট বোন ফিরোজা পারভীন খেয়ালির খুলনার সোনাডাঙ্গা থানায় জিডিসূত্রে এই আলোচনা।
জমি দখল ঘিরে জিডির প্রসঙ্গ হলেও সেই সময় আলোচনার ফাঁকে পপির ছোট বোন ও মা মরিয়ম বেগম পপির গোপন বিয়ের খবর প্রকাশ্যে আনেন। স্বামী আর সন্তানের ছবিও প্রকাশ করেন তাঁরা। সেই সময় গণমাধ্যমেও কথা বলেন এই নায়িকা। পরে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দীর্ঘ পাঁচ বছরের বেশি সময় ধরে পুরান ঢাকার ব্যবসায়ী আদনান উদ্দিন কামালকে বিয়ে করেছেন পপি। তাঁদের সংসারে চার বছরের আয়াত নামে একটি পুত্রসন্তান রয়েছে।
সেই সময় জিডি প্রসঙ্গে সমালোচিত হলে পপি আড়াল ভাঙেন। গণমাধ্যমে জানান, তাঁর সম্পত্তি জোর করে ভোগদখল করছেন তাঁর মা ও ভাইবোনেরা। তাঁর বৈধ জমিতে বিদ্যুৎ ও ওয়াসার মিটার নেওয়ার জন্য খুলনার সংশ্লিষ্ট অফিসে আবেদন করেছিলেন। নিয়মমাফিক আবেদন যাচাই–বাছাই শেষে সরেজমিন কর্মকর্তারা সেদিন এসেছিলেন। তাঁর জমির কাগজ থেকে শুরু করে সব প্রমাণ দেখাচ্ছিলেন। কোনো কিছু না বলে তাঁর বোন ফিরোজা তাঁকে মারধর করেন। অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ করেন। তাঁর যে সম্মান, সেটি ধ্বংস করার জন্য মা ও ভাইবোনেরা মিলে তাঁর নামে থানায় মিথ্যা জিডি করেছেন। এই জিডির কোনো সত্যতা নেই।
ঘটনা গত বছরের ফেব্রুয়ারির। সেই সময়ে আলোচিত হলেও পরে আবার লোকচক্ষুর আড়ালে চলে যান অভিনেত্রী। এ বছরও পুরো সময় তিনি নীরব ছিলেন। তাঁর মুঠোফোনে কল দিলেও নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়। তাঁর ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র এ প্রসঙ্গে কোনো কথা বলতে চান না। তাঁরা জানান, ব্যবসায়ী আদনানের সঙ্গে সন্তান নিয়ে নিজের মতো করে আছেন পপি।
ছয় ভাইবোনের মধ্যে পপি সবার বড়। তাঁর বাবা আমির হোসেন পেশায় একজন ঠিকাদার। মা মরিয়ম বেগম গৃহিণী। তাঁর জন্ম খুলনা শহরের সোনাডাঙ্গায়। তিনি যখন খুলনার একটি স্কুলে নবম শ্রেণিতে পড়তেন, তখন ‘লাক্স আনন্দ বিচিত্রা ফটোসুন্দরী’ প্রতিযোগিতা চলছিল। পত্রিকায় এ খবর দেখে তাঁর মা পপির ছবি পাঠান। এরপর মায়ের ইচ্ছায় পপি ওই প্রতিযোগিতায় অংশ নেন।
কিশোরী পপি সবাইকে অবাক করে ‘লাক্স আনন্দ বিচিত্রা ফটোসুন্দরী’ চ্যাম্পিয়ন হন। এরপর তাঁকে নিয়ে শুরু হয় আলোচনা। এর মধ্যে শেষ হয় স্কুলজীবন। এরপর মাকে সঙ্গে করে পপি চলে আসেন ঢাকায়। ভর্তি হন লালমাটিয়া মহিলা কলেজে। দারোগার মেয়ে পপির মা মেয়েকে চলচ্চিত্রে নায়িকা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য দৌড়ঝাঁপ শুরু করেন। এর মধ্যে পরিচয় হয় পরিচালক সোহানুর রহমান সোহানের সঙ্গে। তাঁর হাত ধরেই পপির সিনেমাযাত্রা শুরু। প্রথম সিনেমা ‘আমার ঘর আমার বেহেশত’।
নায়ক শাকিল খান। তবে এই ছবিতে প্রথম অভিনয় করলেও পপিকে মানুষ চেনে ‘কুলি’ সিনেমা দিয়ে। তাঁর নায়ক ছিলেন ওমর সানী, পরিচালক মনতাজুর রহমান আকবর।
আজ ১০ সেপ্টেম্বর এই নায়িকার জন্মদিন। জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন পপির ‘কুলি’ সিনেমার নায়ক ওমর সানী। তাঁদের মধ্যে প্রথম সিনেমা থেকেই ভালো বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক। পপি ওমর সানীকে দুলাভাই ডাকতেন, মৌসুমীকে ডাকতেন আপু। ওমর সানী পপির জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানিয়ে লিখেছেন, ‘কত দিন দেখি না তোকে। অনেক মিস করি। তোর জন্য আত্মা থেকে দোয়া, মাই ফ্যামিলি। শুভ জন্মদিন পপি।’ ওমর সানী গত বছরও পপির জন্মদিনে লিখেছিলেন, ‘যেখানেই থাকিস, ভালো থাকবি—আমার পরিবারের একজন।’