
মাসের বেশির ভাগ সময় শুটিং নিয়ে ব্যস্ত থাকতেন জসীম। সেই জসীমই হঠাৎ করেই অসুস্থ হয়ে পড়েন। অবস্থা এতটাই গুরুতর হয় যে তাঁর হার্টের অপারেশন করতে হয়। একদমই বিশ্রামে ছিলেন। শুটিং বন্ধ। প্রযোজক পরিচালক সবাই চাইছিলেন তিনি পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠে শুটিং শুরু করুক। কিন্তু সবাইকে চমকে দিয়ে অপারেশনের মাত্র ২০ দিন পরেই লাইট ক্যামেরার সামনে দাঁড়ান এই জনপ্রিয় নায়ক।
সেই শুটিংয়ের শুরুটা ছিল মারপিটের দৃশ্য দিয়ে। এমনকি সিনেমার একটি ক্লাইমেক্স দৃশ্য জমিয়ে তুলতে হবে। সেই সময় পরিচালকসহ টিমের অন্যরাও জসীমকে তাড়াহুড়া না করে সময় নিয়ে শুটিং করতে বলেন। কিন্তু শিডিউল জটিলতা ও বসে থেকে একঘেয়েমি কাটানোর জন্য জসীম শুটিংকেই বেছে নেন।
সেই ঘটনা নিয়ে সম্প্রতি ‘ঠিকানা’ নামের একটি আয়োজনে আহমেদ শরীফ বলেন, ‘আমি তো জসীমের শুটিংয়ের কথা শুনে চমকে উঠেছিলাম। জসীমকেও বললাম সে কথা। সে বলল, তাঁর সমস্যা হবে না। পরে দেখি ক্লাইমেক্স দৃশ্যের সেট ফেলেছে। টানা চার দিন চলবে এই শুটিং। সবকিছু প্রস্তুত। জসীম আমাকে বলল, আপনি যেভাবে আমাকে ঘুষি দিতেন সেভাবেই দেবেন। আমি বললাম ঠিক আছে।’
শুরু থেকে জসীমের হার্টের অপারেশন নিয়ে ভয় পাচ্ছিলেন আহমেদ শরীফ। তিনিই ছিলেন সিনেমার প্রধান খলচরিত্রের অভিনেতা। তাঁর সঙ্গে সবচেয়ে বেশি দৃশ্য ছিল। শুটিং নিয়ে আহমেদ শরীফ জানান, ভয় লাগছিল যদি কোনোভাবে জসীম আঘাত পায় তাহলে বড় ক্ষতি হয়ে যেতে পারে। ‘এসব চিন্তায় স্বাভাবিকভাবেই আমি মন খুলে অভিনয় করতে পারছিলাম না। তবু মনে হলো চেষ্টা করি। শুরুতে আমাদের ফাইটিং। জসীমকে ঘুষি মারতে হবে। একটা দুইটা ঘুষির পরে মোটামুটি একটু হালকাভাবে জসীমের পেটে একটা ঘুষি দিই। ঘুষিটা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে জসীম বলল, “এই কাট কাট।”’
এই শুটিংয়ের পরে কিছুটা ঘাবড়ে গেলেন আহমেদ শরীফ। ঘুষি জোরে লাগল কি না, জসীম অসুস্থ হলো কি না, এমনটাই ভাবছিলেন। এমন সময় কাছে এসে জসীম; আহমেদ শরীফকে চমকে দেয়। ৯০ দশকের সেই ঘটনা প্রসঙ্গে আহমেদ শরীফ বলেন, ‘“জসীম কাছে এসে আমাকে বলে, আজকে কি আপনার শুটিংয়ের মুড নাই। না থাকলে পেকআপ করে দিই।” জসীমের কথা শুনে ঘাবড়ে গেলাম। পরে সে জানাল, আমি যে ঘুষি দিয়েছি এটা এতটাই আস্তে ছিল যে জসীমের কাছে মনে হয়েছে গায়ে বাতাসও লাগে নাই। আমরা তো আসলে সিরিয়াস ফাইট করতাম। অনেক জোরে জোরে ঘুষি, লাথি গায়ে লাগত। পরে বললাম, কদিন আগে তোমার অপারেশন হলো। কি হয় না হয়, মারতে খারাপ লাগছে।’
কিন্তু সে–কথা কর্ণপাত করেননি জসীম। তাঁর একটাই কথা ছিল, শুটিংয়ে কোনো ছাড় দেওয়া যাবে না। তিনি যে অপারেশন করেছেন, সেটা আহমেদ শরীফকে ভুলে যেতে বললেন। এরপর খুব জোরে ঘুষ মারতে বলেন জসীম। আহমেদ শরীফ বলেন, ‘জসীম কখনো কাজে ছাড় দেয়নি। আমি আগের মতো ফাইটিং শুরু করলাম। আমাকে শ্বশুর বলে ডাকত। পরে সে বলল, “শ্বশুর এখন ঠিক আছে।” জোরে ঘুষি মারায় জসীম খুশি হলো। এতটা সিনেমার অন্তঃপ্রাণ মানুষ ছিলেন জসীম। আমাদের অনেক ভালো বোঝাপড়া ছিল। যে কারণে আমাদের জুটির প্রায় সব সিনেমাই দর্শক পছন্দ করে।’ সিনেমায় নায়ক হয়ে ঢালিউডে নাম লেখান আহমেদ শরীফ। পরে তিনি হয়ে যান খলনায়ক। অন্যদিকে খল অভিনেতা থেকে নায়ক হন জসীম। তাঁদের দুজনের জুটি সব সময়ই প্রশংসায় থাকত। ‘ঠিকানা’ অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনায় ছিলেন ঢালিউড নায়ক জায়েদ খান।