সবকিছু পেছনে ফেলে’ ছবির শুটিংয়ে সাকিব আল হাসান
সবকিছু পেছনে ফেলে’ ছবির শুটিংয়ে সাকিব আল হাসান
ঢালিউড

সাকিব আল হাসানের গোপনে করা সিনেমার শুটিংয়ের ১৩টি ছবি

বিনোদন ডেস্ক
ক্রিকেটে বাংলাদেশের ‘পোস্টারবয়’ সাকিব আল হাসান। বিশ্বসেরা এই বাংলাদেশি অলরাউন্ডারের জনপ্রিয়তাকে পুঁজি করে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান তাঁকে নিয়ে পণ্যের প্রচারণা চালিয়েছে। একটি পণ্যের শুভেচ্ছাদূত হওয়ার বদৌলতে এই ক্রিকেট তারকা একটি সিনেমায় অভিনয়ও করেছিলেন। শেষ খবর, গোপনে করা সেই ছবিটির কাজ শেষ হয়নি। সিনেমার শুটিংয়ে সাকিব আল হাসান কেমন ছিলেন, তা ডজনখানেক স্থিরচিত্রে দেখে নেওয়া যাক—
সময়টা ২০১২–১৩ সালের। তখন ফুজি ফিল্মসের শুভেচ্ছাদূত সাকিব আল হাসান। সেই প্রতিষ্ঠান ‘সবকিছু পেছনে ফেলে’ শিরোনামের একটি সিনেমার প্রধান পৃষ্ঠপোষক হয়। সেই সিনেমায় অভিনয়ের কথা হয় ক্রিকেট–বিশ্বের বাংলাদেশের মহাতারকা সাকিব আল হাসানের।
ফুজি ফিল্মসের সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী ‘সবকিছু পেছনে ফেলে’ সিনেমার শুটিংয়ে সম্মত হন সাকিব আল হাসান। এরপর পরিচালক রাজিবুল হোসেন সাকিব আল হাসানের সঙ্গে কথাবার্তা বলেন।
‘সবকিছু পেছনে ফেলে’ ছবির পরিচালক রাজিবুল হোসেন জানালেন, একাধিকবার তিনি সাকিব আল হাসানের সঙ্গে ছবিটি নিয়ে কথা বলেন। তাঁর চরিত্র সম্পর্কে ধারণা দেন। গল্প শুনে সাকিব আল হাসানও সিনেমায় অভিনয় করতে রাজি হন।
সাকিব আল হাসান তখন ক্রিকেটের ব্যস্ত তারকা। তাই পরিচালক সাকিবের খেলার শিডিউল প্রাধান্য দিয়ে সিনেমার শুটিংয়ের দিনক্ষণ ঠিক করেন। এতে সাকিবও সম্মত হয়। পুরো প্রক্রিয়ার মধ্যস্থতায় ছিলেন সোলায়মান সুখন।
পরিচালক ও সাকিব আল হাসানের আলোচনায় এই সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়, ‘সবকিছু পেছনে ফেলে’ ছবির শুটিং তিনি করবেন কক্সবাজারে। পুরো ইউনিট নিয়ে পরিচালক কক্সবাজার যান। চমৎকার পরিবেশে ও সাকিবের আন্তরিকতায় সিনেমার শুটিং শুরুও হয়।
‘সবকিছু পেছনে ফেলে’ সিনেমার শুটিংয়ের তিন দিনের মাথায় সংবাদপত্রে খবর প্রকাশিত হয়, সাকিব আল হাসান চলচ্চিত্রে অভিনয় করছেন। খবরটি পৌঁছে যায় সাকিবের কাছেও। এতে তিনি বেশ ক্ষুব্ধ হন। পরিচালকের সঙ্গে এ নিয়ে বাহাসও হয়। তারপর সাকিব সিনেমার শুটিং নিয়ে বেঁকে বসেন।
পরিচালক বোঝানোর চেষ্টা করেন সাকিব আল হাসানকে। কিন্তু তিনি কোনোভাবেই তা মানতে নারাজ। কোনো যুক্তি সাকিবের মনঃপূত হয়নি। সাকিব সরাসরি জানিয়ে দেন, ছবিটিতে তিনি অভিনয় করবেন না। তাঁর কথা, এভাবে কেন ছবিতে অভিনয়ের খবরটি প্রকাশ্যে এল। আগে না হয় শুটিং শেষ হতো, তারপর সবাই জানত। এরপর তিনি আর ছবিটিতে অভিনয় করেননি।
এদিকে ‘সবকিছু পেছনে ফেলে’ ছবির শুটিং নিয়ে জটিলতার কারণে সাকিব আল হাসানের সঙ্গে ফুজি ফিল্মসেরও দ্বন্দ্ব হয়। তাদের সঙ্গে চুক্তি বাতিল হয়। রাজিবুল বলেন, ‘ফুজি ফিল্মসের পক্ষ থেকে আমাকে জানানো হয়, সাকিবের যে অংশ শুটিং হয়েছে, তা যেন বাদ দিয়ে দিই। তত দিনে আমার ছবির শুটিংয়ে ওই সময় ৬৫ লাখ টাকা খরচ হয়ে যায়। আমি পুরো ব্যাপারটায় ট্রমাটাইজড হয়ে পড়ি। বাধ্য হয়ে শুটিং বন্ধ করে দিই। এরপর আর কখনো ছবিটির কাজ হয়নি।’
‘সবকিছু পেছনে ফেলে’ ছবির পরিচালক রাজিবুল হোসেন বলেন, ‘ফুজির সঙ্গে সাকিবের চুক্তি ছিল, বছরের সুবিধা অনুযায়ী আট দিন তিনি তাদের সময় দেবেন। সিনেমা নিয়ে আলোচনার একপর্যায়ে ফুজি ফিল্মস আমাদের জানায়, সিনেমার জন্য একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ দেবে তারা, সেই সঙ্গে সাকিব আল হাসান অভিনয় করবেন সিনেমায়। আমি সেই কথা মোতাবেক সাকিবের সঙ্গে মিটিং করি। ছবিটি নিয়ে কথা বলি। যেহেতু খেলা নিয়ে তাঁর ব্যস্ততা, শিডিউলের সঙ্গে মিলিয়ে শুটিংয়ের দিন–তারিখ ঠিক করি। সবকিছু ঠিকঠাকভাবে চলছিল। সাকিবও আনন্দ নিয়েই শুটিং করছিলেন।’
‘সবকিছু পেছনে ফেলে’ ছবির গল্পে সাকিব আল হাসানকে ক্রিকেটা তারকা হিসেবেই দেখানো হয়। কক্সবাজারের মারমেইড বিচ রিসোর্টের পাশে সাকিব শুটিংয়ে অংশ নেন। ছবির গল্পে সাকিব আল হাসান প্যারাস্যুটে করে সমুদ্রসৈকতে নামেন। এরপর তাঁর সঙ্গে দেখা হয় পাঁচ তরুণের। সাকিবকে পেয়ে তাঁরা চমকে ওঠেন। এরপর সাকিব সেই পাঁচ তরুণের সঙ্গে সমুদ্রসৈকতে ক্রিকেট খেলেন।
নির্মাতা রাজিবুল হোসেন বলেন, ‘অনেক স্বপ্ন নিয়ে সিনেমার শুটিং শুরু হয়েছিল। সাকিব আল হাসান শুটিং করেছেন, ক্যামেরার সামনে অভিনয় করেছেন, ক্ল্যাপস্টিক ও প্রফেশনাল রেকর্ডিংয়ের মধ্য দিয়ে আমরা দৃশ্য ধারণ সম্পন্ন করি। কিন্তু পরবর্তী সময়ে তিনি সিনেমায় অভিনয় করার বিষয়টি অস্বীকার করলে পুরো প্রজেক্ট অনিশ্চয়তার মুখে পড়ে।’
পরিচালক জানালেন, সাকিব আল হাসানকে ছাড়া তিনি ‘সবকিছু পেছনে ফেলে’ ছবির শুটিং করতে পারতেন, কিন্তু তিনি করেননি। রাজিবুল হোসেন বলেন, ‘কিন্তু আমি বিশ্বাস করি, একটি অসম্পূর্ণ সত্য দিয়ে পূর্ণ সিনেমা নির্মাণ করা যায় না।’
সাকিব আল হাসান ছাড়া ‘সবকিছু পেছনে ফেলে’ ছবিতে আরও অভিনয় করেছিলেন মেঘলা মুক্তা, অর্ণব অন্তু প্রমুখ।
আরও পড়ুন