নারায়ণগঞ্জে সন্ত্রাসী হামলার শিকার হন দিতি–সোহেল চৌধুরীর মেয়ে লামিয়া
নারায়ণগঞ্জে সন্ত্রাসী হামলার শিকার হন দিতি–সোহেল চৌধুরীর মেয়ে লামিয়া

ঘটনাটিকে রাজনৈতিক রং দেওয়ার চেষ্টা করছে, হামলা প্রসঙ্গে নায়িকা দিতির মেয়ে

নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে গত শনিবার আত্মীয়দের সঙ্গে জমিসংক্রান্ত বিরোধের জেরে হামলার শিকার হন চিত্রনায়িকা পারভীন সুলতানা দিতির মেয়ে লামিয়া চৌধুরী। ঘটনার সময় লামিয়া চৌধুরী সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে লাইভ করেন। সেই লাইভে লামিয়ার গাড়ি ভাঙচুর করতে দেখা যায়। ভিডিওতে লামিয়া বলছিলেন, তাঁর পা ভেঙে ফেলা হয়েছে। তিনি হাঁটতে পারছেন না। তাঁর গাড়িও ভাঙা হয়েছে। এদিকে আজ সোমবার দুপুরে লামিয়া জানান, একটা পক্ষ ঘটনাটি রাজনৈতিক রং দেওয়ার চেষ্টা করছে এবং তাঁকে রাজনীতির সঙ্গে জড়ানোর অপচেষ্টা করছে।

লামিয়া চৌধুরী

ঘটনার দুই দিনের মাথায় নিজের ফেসবুকে একটি পোস্ট দিয়েছেন লামিয়া চৌধুরী। সেখানে তিনি লিখেছেন, ‘গত পরশু আমার মায়ের (প্রয়াত চিত্রনায়িকা পারভিন সুলতানা দিতি) গ্রামের বাড়ি সোনারগাঁয় আমাদের পারিবারিক জমি দখল করার উদ্দেশ্যে একটি সন্ত্রাসী গোষ্ঠী আমার উপর পরিকল্পিতভাবে হামলা চালিয়েছে। লাঠি, দেশীয় অস্ত্র এবং ইট-পাথর নিয়ে তারা আমার উপর নির্মম আঘাত করে, যার ফলে আমি গুরুতর আহত হয়েছি এবং ইমিডিয়েট সার্জারি করানো লাগবে।’

মেয়ে লামিয়ার সঙ্গে দিতি

লামিয়ার মতে, এই হামলা তাঁদের জমি দখল এবং তাঁকে হত্যার উদ্দেশ্যে করা হয়েছে। এ নিয়ে তিনি তাঁর নিরাপত্তা দাবি করেছেন এবং প্রধান উপদেষ্টার কাছে বিনীত অনুরোধ জানিয়েছেন দোষীদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলত শাস্তির ব্যবস্থা গ্রহণ করতে।

লামিয়া তাঁর ফেসবুকে লিখেছেন, ‘আমি গভীর দুঃখের সঙ্গে লক্ষ্য করছি যে কিছু ব্যক্তি এ ঘটনাকে রাজনৈতিক রং দেওয়ার চেষ্টা করছে এবং আমাকে রাজনীতির সাথে জড়ানোর অপচেষ্টা করছে। আমি স্পষ্ট করে বলতে চাই, আমার বাবা প্রয়াত চিত্রনায়ক সোহেল চৌধুরী এবং মা প্রয়াত চিত্রনায়িকা পারভিন সুলতানা দিতি—কেউই কখনো রাজনীতির সাথে যুক্ত ছিলেন না। তাঁরা ছিলেন সংস্কৃতির মানুষ, আমিও তাঁদের আদর্শেই চলেছি এবং চলব। এই হামলা কোনো রাজনৈতিক বিষয় নয়, এটি সম্পূর্ণভাবে জমি দখল ও আমাকে হত্যার উদ্দেশ্যে সংঘটিত হয়েছে। আমি এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছি এবং দাঁড়িয়ে থাকব। আমি মাননীয় প্রধান উপদেষ্টার কাছে বিনীত অনুরোধ করছি, দোষীদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক। আমি আমার এবং আমার পরিবারের নিরাপত্তার জন্য পর্যাপ্ত সহযোগিতা চাই।’

ছেলে দীপ্ত ও মেয়ে লামিয়ার সঙ্গে দিতি

স্থানীয় লোকজন ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, চিত্রনায়িকা দিতির পাঁচ ভাই ও তিন বোন। তাঁর ৪ নম্বর ভাই লামিয়ার মামা টিপু সুলতান প্রায় ৯ বছর আগে মারা গেছেন। তাঁর পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে লামিয়াদের জমিসংক্রান্ত বিরোধ চলছে। এ নিয়ে আদালতে একটি মামলাও চলমান।

ঘটনার দুজন প্রত্যক্ষদর্শী জানান, শনিবার লামিয়ার নানাবাড়িতে জমি নিয়ে  বিচার-সালিস বসানো হয়। সালিসে লামিয়ার পক্ষে ঢাকা থেকে আসা কয়েকজন ছিলেন। অপর দিকে লামিয়ার মামির পক্ষে সোনারগাঁ উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মোশাররফ হোসেনের লোকজন অংশ নেন। সালিসের একপর্যায়ে উভয় পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা তৈরি হয়। একপর্যায়ে দুই পক্ষই হাতাহাতিতে জড়ায়। তখন লামিয়ার গাড়ি ভাঙচুর করা হয়। লামিয়ার ওপর হামলায় বিএনপি নেতা মোশাররফ হোসেনের লোকজন অংশ নেন। জানতে চাইলে শনিবার বিকেলে প্রথম আলোকে বিএনপি নেতা মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘আমার লোকজন কোনো হামলার সঙ্গে জড়িত না। মহিলারা মহিলারা এইটা করছে। আমিও গিয়েছি ঘটনার অনেক পরে। সেখানে গিয়ে শুনেছি, লামিয়া লোকজন নিয়ে তাঁর মামিকে মারধর করেছেন।’

স্ত্রী পারভীন সুলতানা দিতি ও দুই সন্তানের সঙ্গে

একই দিনে প্রথম আলোর সঙ্গে যোগাযোগ হয় লামিয়ার মামি লায়লা লুৎফুন্নাহারের সঙ্গে। তিনি সেদিন বলেছিলেন, ‘আমার মৃত স্বামীর নামে ৩৮ শতাংশ জমি আছে। সেখানে আমি আমার দুই সন্তানকে নিয়ে বসবাস করি। আমার একটি ছেলে অটিস্টিক। আমার স্বামীর জমি দখল করতে চায় লামিয়ারা। এ নিয়ে সালিস বসলে লামিয়া ঢাকা থেকে লোকজন নিয়ে এসে আমার ওপর হামলা চালায়। এতে আমি আহত হই।’

লায়লা লুৎফুন্নাহারের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে কথা হয় লামিয়া চৌধুরীর সঙ্গে। গত শনিবার সন্ধ্যায় তিনি জানান, তাঁর মামির এমন অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট। লামিয়া চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি তো আমাদের জায়গার দখলই নিতে পারছি না, সেখানে অন্যের জমি দখল করতে কেন যাব! অদ্ভুত তো। আশ্চর্য। এটা কেমন মিথ্যাচার! আমার ছোট মামি শান্তিমতো থাকেন, তাঁকে কেউই ডিস্টার্ব করে না। আমার মামার মৃত্যুর পর কোথায় শোক প্রকাশ করবেন, তা না করে এই মামি সম্পত্তি নিয়েই উঠেপড়ে লেগেছেন। তিনি তাঁর স্বামীর সম্পত্তি নিয়ে যা ইচ্ছা করুক, তাতে কোনো সমস্যা নেই; কিন্তু আমাকে, আমার পরিবারকে তো এভাবে সবার সামনে অসম্মান করতে পারেন না। লোকজন ডেকে এনে আমার ওপর হামলা করতে পারেন না। আমার গাড়ি ভাঙচুর করতে পারেন না। পা ভেঙে দিতে পারেন না। আমার গায়ে হাত তুলতে পারেন না। ভাড়াটে সন্ত্রাসীরা আমার গা থেকে ওড়না টেনে ফেলে দিয়েছে! আজকের ঘটনার অনেক ভিডিও ফুটেজ আছে, তাতে আমার সঙ্গে কী কী ঘটেছে, তার স্পষ্ট প্রমাণও আছে। আমার অন্য আত্মীয়স্বজনও সেখানে ছিলেন, সবাই দেখেছেন।’