সিনেমা ছাড়ার কষ্টের গল্প, কেন দেশ ছেড়েছিলেন কাজী মারুফ

কাজী মারুফ এখন যুক্তরাষ্ট্রে রয়েছেন
ছবি: সংগৃহীত

ঢালিউডে ‘ইতিহাস’ সিনেমা দিয়ে ভক্তদের কাছে জায়গা করে নেন কাজী মারুফ। একটি সিনেমা দিয়েই তারকাখ্যাতি পেয়েছেন। পরে নিয়মিত কাজ করলেও এখন সিনেমা থেকে দূরে এই নায়ক। শুধু তা–ই নয়, বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে রয়েছেন। তিনি নিজেই জানিয়েছিলেন দেশটিতে স্থায়ী হচ্ছেন। অভিমানে ঢালিউড ছেড়ে যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ী হওয়া এই নায়কের আজ জন্মদিন।

এক রাতে মন খারাপ করে এই নায়কের বাবা জানিয়েছিলেন, তাঁকে নায়ক হতে হবে। এমনকি তাঁর পরের ছবিতেই। হাতে খুব বেশি সময়ও ছিল না। সেদিন বাবাকে ভেঙে পড়া অবস্থায় দেখে রাজি হয়ে যান মারুফ। এভাবেই বাবা কাজী হায়াতের সিনেমা দিয়ে তাঁর পথচলা শুরু। এই পথটা শুরুতে মসৃণ হলেও পরে তাঁকে সংগ্রাম করে ঢালিউডে নিজের জায়গা তৈরি করতে হয়। পরিচালক–প্রযোজকদের কাছে সফল নাম হলেও বাবা পরিচালক হওয়ায় শুনতে হয়েছে নানা কথা।

মারুফ তাঁর পরিচালক বাবা কাজী হায়াতের সঙ্গে

‘পরিচালক বাবার কারণেই আপনি নায়ক হতে পেরেছেন’—এই প্রশ্ন শোনা একসময় সাধারণ বিষয় হয়ে যায়। শুরুতে বিষয়গুলো নিয়ে কথা বলতে না চাইলেও পরে সেসব প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন। এই নিয়ে তিনি এক বছর আগে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘অনেকেই বলেন আমার বাবা না থাকলে আমি নায়ক হতে পারতাম না। এটা তাঁরা ঠিকই বলেন। কারণ, আমি তো দেখতে নায়কদের মতো ছিলাম না। বাবা এসে বললেন সিনেমা করতে হবে, নায়ক হতে হবে। বাবার কথা ভেবে সিনেমায় নাম লেখাই। বাবার কারণেই নায়ক হয়ে যাই।’

কাজী মারুফ সিনেমায় বাবাকে ‘আব্বা সম্বোধন করেন। যা ভক্তদের কাছে পরিচিত শব্দ। এই নায়কের ভক্তদের কাছে সিনেমার ‘আব্বা’ সংলাপ যেন মারুফের ট্রেডমার্ক হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ, দূর থেকেও সংলাপটি মনে করিয়ে দেয় কাজী মারুফের কথা। তাঁর ফেসবুক লাইভ বা কোনো পোস্টে ভক্তরা মন্তব্য করেন ‘আব্বা’খ্যাত অভিনেতা হিসেবে। এই নায়ক এই নিয়ে চ্যানেল আইকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘আমি বাস্তবে এমনই। আব্বা আব্বাই বলি। এতে কে কী বলল মেটার করে না। আমি বাবার কাছে গৃহপালিত ছেলের মতো। আমি এভাবেই বাবার কাছে থাকতে আজীবন চাই। আমার আব্বা আছে, যাকে ভালোবেসে জড়িয়ে ধরে আব্বা বলতে পারি।’

কাজী মারুফ। ছবি: সংগৃহীত

মান্না, শাকিব খানদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে সিনেমায় সফল হন। এই নায়কের মতে, সিনেমায় যখন অশ্লীলতা চরমে, সেই সময়ে তিনি নাম লেখান। চাইলে হারিয়ে যেতে পারতেন। কিন্তু তা না হয়ে ভক্তদের কাছে তিনি হয়ে উঠেছেন পরিচিত মুখ। ‘অশ্লীল সিনেমা তখন চরম এগিয়ে। মান্না আংকেলও পারছিলেন না সেসব সিনেমাকে ডাউন করতে। চলচ্চিত্রের বড় বড় তারকার জন্য সময়টা ছিল হতাশার, লজ্জার। কেউ কেউ ভেঙেও পড়েছিলেন’ বলেন মারুফ।

২০১২ সাল–পরবর্তী বাংলাদেশের সিনেমা ও সিনেমা হলের সংখ্যা কমে যেতে থাকে। তখন ভালো সিনেমাও সেই অর্থে হচ্ছিল না বলে মনে করেন মারুফ। অন্যদিকে দেশে সিন্ডিকেটের কবলে পড়ে সিনেমা মুক্তি দিতে পারছিলেন না তাঁর বাবা। এসব ঘটনায় তাঁকে একসময় দেশ ছাড়তে হয়।

‘ইতিহাস’ সিনেমায় অভিনয় করে সুনাম অর্জন করেন কাজী মারুফ।

এই নায়ক এক লাইভে বলেন, ‘আমাদের “ছিন্নমূল” সিনেমা ১৪ ফেব্রুয়ারি (২০১৯) মুক্তির কথা ছিল। সেভাবেই টার্গেট করেছিলাম। কিন্তু সিনেমাটি মুক্তি দিতে দেয়নি একটি বড় প্রযোজনাপ্রতিষ্ঠান। পরিচালক ছিলেন আমার আব্বা (কাজী হায়াৎ)। তাঁরা আমার আব্বাকে বলেছিলেন, আমরা রিলিজ করতে না দিলে কীভাবে রিলিজ করবেন। আমার আব্বার মতো মানুষকে এই কথা শুনতে হয়েছিল। সেদিন আব্বা বাসায় এসে বললেন, ‘‘আমি এই বয়সে যুদ্ধ করব? আমি চাই না তুমিও যুদ্ধ করো এদের সঙ্গে। চলে যাও আমেরিকা। এসব কারণেই বাংলাদেশ ছেড়ে চলে এসেছি।’

বর্তমানে স্ত্রী ও সন্তানকে নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রেই অবস্থান করছেন মারুফ। সিনেমা থেকেও তিনি দূরে। সর্বশেষ তাঁকে দেখা যায় ‘গ্রিন কার্ড’ সিনেমায়। এটি তাঁর ইউটিউব চ্যানেলে প্রচার করা হয়েছে। এই নায়ক ক্যারিয়ারের শুরুতে টানা পাঁচ বছর বাবা কাজী হায়াতের সিনেমায় অভিনয় করেন। তাঁর উল্লেখযোগ্য সিনেমার মধ্যে আরও রয়েছে অন্ধকার, অন্য মানুষ, আমার মা আমার অহংকার। যুক্তরাষ্ট্রে তিনি ব্যবসা নিয়েই ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। ১৯৮২ সালের ৪ ডিসেম্বর তাঁর জন্ম।