শাকিব খানের বিপরীতে ‘প্রিয়তমা’ দিয়ে আলোচনায় আসা ইধিকা পালের ঢালিউডের যাত্রা এখন প্রশ্নের মুখে। পরপর ‘প্রিন্স’ ও ‘রাক্ষস’ থেকে বাদ পড়া, তার ওপর ‘বহুরূপ’–এর ব্যর্থতা—সব মিলিয়ে কি তবে ছন্দ হারাচ্ছেন তিনি?
‘প্রিয়তমা’র সাফল্যের পরপরই ঢালিউডের একাধিক প্রযোজনা সংস্থা ও পরিচালকের নজরে আসেন ইধিকা। শুরু হয় নতুন নতুন ছবির কথাবার্তা। সেই ধারায় নাম লেখান শরীফুল রাজের বিপরীতে ‘কবি’ সিনেমায়। যদিও ছবির মুক্তি নিয়ে এখনো কোনো চূড়ান্ত ঘোষণা আসেনি। এরপর শোনা যায়, সিয়াম আহমেদের বিপরীতে ‘সিকান্দার’ সিনেমায়ও অভিনয় করবেন তিনি। কিন্তু সেই ছবির শুটিংয়ের এখন পর্যন্ত কোনো দৃশ্যমান অগ্রগতি হয়নি।
এরপর ইধিকার নাম উঠে আসে আলোচিত ছবি ‘রাক্ষস’–এ। গত সপ্তাহে ছবিটির প্রযোজক শাহরিন আক্তার জানান, ‘ইধিকার সঙ্গে আমাদের কথা চলছে।’ কিন্তু আজ শনিবার সন্ধ্যায় পরিচালক মেহেদী হাসান জানিয়ে দেন, ‘এই ছবিতে ইধিকা নেই। নায়িকা হিসেবে আমরা সুস্মিতা চ্যাটার্জিকেই চূড়ান্ত করেছি।’ একই সময়ে আসে আরেকটি খবর—‘প্রিন্স’ সিনেমা থেকেও বাদ পড়েছেন ইধিকা।
পরপর এসব বাদ পড়ার খবর সামনে আসে এমন সময়ে, যখন ইধিকা অভিনীত সর্বশেষ মুক্তি পাওয়া সিনেমা ‘বহুরূপ’ বক্স অফিসে মুখ থুবড়ে পড়ে। সোহম চক্রবর্তীর বিপরীতে অভিনীত ছবিটি প্রচারণার সময় আলোচনায় এলেও মুক্তির পর দর্শক টানতে ব্যর্থ হয়। পশ্চিমবঙ্গের সমালোচকদের মতে, ‘দুর্বল চিত্রনাট্য ও পরিচালনার কারণেই ছবিটি প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেনি।’ ফ্লপের এই ধাক্কা ইধিকার ক্যারিয়ার গতিপথেও প্রভাব ফেলছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
তবে বাংলাদেশের বক্স অফিসে চিত্রটা ভিন্ন। শাকিব খানের সঙ্গে ইধিকার সর্বশেষ মুক্তি পাওয়া সিনেমা ‘বরবাদ’ হয়েছে ব্লকবাস্টার। বড় তারকার জনপ্রিয়তায় ভর করে ইধিকার অবস্থান আবার শক্ত হতে পারত, যদি ‘প্রিন্স’ কিংবা ‘রাক্ষস’–এর মতো বড় বাজেটের ছবিগুলোয় অভিনয়ের সুযোগ মিলত।
‘প্রিন্স’ ও ‘রাক্ষস’—দুটি সিনেমায় প্রযোজক–পরিচালকদের সঙ্গে ইধিকার আলোচনা অনেকটাই এগিয়েছিল বলে নিশ্চিত করেছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। তবে শেষ মুহূর্তে সিদ্ধান্ত বদলায়। ‘প্রিন্স’–এ শাকিব খানের বিপরীতে চূড়ান্ত হয়েছেন জ্যোতির্ময়ী কুণ্ডু, আর ‘রাক্ষস’–এ সিয়াম আহমেদের বিপরীতে দেখা যাবে সুস্মিতা চ্যাটার্জিকে। দুটি ছবির শুটিং শুরু হচ্ছে আগামী দুই সপ্তাহের ব্যবধানে।
পরপর দুটি ছবি হাতছাড়া হওয়ার পেছনে কারণ হিসেবেও শোনা যাচ্ছে ইধিকার পারিশ্রমিকসংক্রান্ত বিষয়। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রের ভাষ্য, ‘একাধিক ছবি হিট হওয়ার পর ইধিকা তাঁর সম্মানী বাড়ান। ফলে গল্প ও চরিত্র নিয়ে আলোচনা এগোলেও চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছানো যায়নি।’ আবার অন্য একটি সূত্র জানায়, ‘বিকল্প নায়িকাদের সঙ্গে আলোচনা প্রায় শেষ হওয়ার পর ইধিকা কাজের আগ্রহ দেখান। তখন আর সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের সুযোগ ছিল না।’
তবে চলচ্চিত্র–সংশ্লিষ্ট অনেকেই মনে করেন, এটি এখনই ক্যারিয়ারের সংকট বলে দেখার সুযোগ নেই। তাঁদের মতে, ‘হিট–ফ্লপ বা সুযোগ হারানো একজন শিল্পীর দীর্ঘ পথচলারই অংশ।’ তাঁদের ভাষায়, ‘প্রিয়তমা’র মতো সুপারহিট দিয়ে ক্যারিয়ার শুরু হওয়ায় ইধিকার ক্ষেত্রে প্রত্যাশার চাপ স্বাভাবিকভাবেই বেশি।
বাংলাদেশ ও ভারতের দুই ইন্ডাস্ট্রিতেই নিয়মিত কাজ করার আগ্রহ বরাবরই প্রকাশ করে এসেছেন ইধিকা পাল। ভক্তদের বিশ্বাস, সাময়িক এই ধাক্কা কাটিয়ে সামনে আবার নতুন কোনো বড় প্রজেক্ট তাঁর দরজায় কড়া নাড়বে। এখন দেখার বিষয়—এই অপেক্ষার শেষে আসে বড় কোনো চমক, নাকি আরও কিছু ধৈর্যের পরীক্ষা। সময়ই তার উত্তর দেবে।