শাকিব খান ও মেহেদী হাসান
শাকিব খান ও মেহেদী হাসান

আমাদের গল্পের জোর আছে, শাকিব ভাই আছেন...

প্রেক্ষাগৃহে চলছে মেহেদী হাসান পরিচালিত ‘বরবাদ’। দেশের ১২১ প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেয়েছে ছবিটি। যেসব প্রেক্ষাগৃহে ছবিটি প্রদর্শিত হচ্ছে, বেশির ভাগে হাউসফুল যাচ্ছে। এটি তাঁর পরিচালিত প্রথম চলচ্চিত্র। ছবিটি নিয়ে দর্শকের আগ্রহ এমনটা হবে কি ভেবেছিলেন, কী কী কারণে দর্শকের আগ্রহ, তা নিয়ে প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলেন পরিচালক। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মনজুর কাদের

প্রশ্ন

মুক্তির ১৯ দিন চলছে, এখনো ‘বরবাদ’ ছবিটি নিয়ে দর্শকের আগ্রহ বেশ লক্ষণীয়। যেসব প্রেক্ষাগৃহে ছবিটি মুক্তি পেয়েছে, সব জায়গায় টিকিট পাওয়া নিয়ে সংকটের খবর শোনা যাচ্ছে। মুক্তির আগে ছবিটি নিয়ে দর্শকের আগ্রহ এমনটা হবে ভেবেছিলেন?

মেহেদী হাসান : ছবিটি নিয়ে দর্শকের আগ্রহ থাকবে, এটা যে আগে ভাবিনি, তা কিন্তু নয়। কারণ, আমাদের গল্পের জোর আছে। শাকিব ভাই থেকে শুরু করে প্রযোজক, আমি; আমরা যারাই ছবিটির সঙ্গে যুক্ত ছিলাম, সবাই আমরা বুঝতে পেরেছিলাম। কারণ, ‘বরবাদ’ ছবির গল্পটা অনেক সুন্দর। নির্মাণের জায়গাটাও আমরা ভালো করার চেষ্টা করেছি। যেখানে যা দরকার—সবই আয়োজন ছিল। কোনো আপস করিনি। তাই আমরা বুঝেছিলাম, মুক্তির পর ‘বরবাদ’ ভালো যাবে, দর্শক খুব ভালোভাবে নেবে। প্রশংসা করবে। কিন্তু ‘বরবাদ’ নিয়ে এত বেশি দর্শক উন্মাদনা থাকবে—সত্যিই এমনটা ভাবিনি। ‘বরবাদ’–এর দর্শক আগ্রহ ঠেকানোর জন্য পুলিশ মোতায়েন করবে, অনেক সিনেমা হলে মিডনাইট শো চালু করবে—এগুলো সত্যিই বড় পাওয়া। আইএমডিবি মোস্ট পপুলার মুভিজ বিভাগে হলিউড-বলিউডের ছবির সঙ্গে জায়গা করে নেওয়া—এসব অনেক বড় পাওয়া। এগুলো সত্যিই ভাবিনি।

শাকিব খানের জন্মদিনে ‘বরবাদ’ পরিচালক মেহেদী হাসান
প্রশ্ন

দর্শকের আগ্রহ প্রসঙ্গে চলচ্চিত্র সমালোচক থেকে শুরু করে নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ নানা মত দিচ্ছেন। কারণ খুঁজতে গিয়ে ছবি হিটের জন্য কেউ ১০টি কারণ, কেউ–বা ৭টি কারণ দাঁড় করাচ্ছেন। আপনার দৃষ্টিতে কোন পাঁচটি কারণে ছবিটি নিয়ে দর্শকের এতটা আগ্রহ? সেই কারণগুলো একটু বিস্তারিত যদি বলতেন।

মেহেদী হাসান : প্রথম বিষয়টা হচ্ছে, ‘বরবাদ’ ছবির গল্পটা অসম্ভব ভালো। গল্পের উপস্থাপনেও আমরা নতুনত্ব রেখেছি। দুই নম্বর হচ্ছে, ছবিতে ইমোশনাল জায়গা আছে, যেগুলোর সঙ্গে দর্শকেরা খুব সহজেই কানেক্ট করতে পেরেছে। তিন নম্বর হচ্ছে, ছবিতে চমৎকার প্রেমের ব্যাপার আছে। ছবির সংলাপগুলোও অনেক বেশি শক্তিশালী। চার নম্বর হচ্ছে, সিনেমায় দর্শক যে লেভেলের অ্যাকশন ও ভায়োলেন্স চায়, আমরা আমাদের চিন্তা থেকে তেমনভাবে ডিজাইন করেছি। যা দর্শককে সহজে আকৃষ্ট করেছে। পাঁচ নম্বর হচ্ছে, সিনেমা হল থেকে বের হওয়ার পর আত্মতৃপ্তির যে ব্যাপার, সেটাও আমাদের ছবিতে ছিল। ছবিতে একটি বার্তাও ছিল। সিনেমার শেষ সংলাপ হচ্ছে—পাপ বাপকেও ছাড়ে না। আসলে যতই ধনী বা প্রভাবশালী হোক না কেন, পাপ কাউকে ছাড়ে না—আমাদের সিনেমায় এটা চমৎকারভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। পুরো ‘বরবাদ’ ছবির গল্পে এটাই ছিল আমার বার্তা, যা অন্য রকমভাবে সবার কাছে উপস্থাপন করা হয়েছে। এটাও দর্শকের ভালো লাগছে। এ ছাড়া সিনেমায় চমক ছিল। এক দৃশ্যের পর আরেক দৃশ্যে কী হবে, দর্শক অনুমান করে বুঝতে পারেনি। বিশেষ করে বিরতির সময়ের চমকটায় সবাই চমকে গেছে।

প্রশ্ন

ঈদুল ফিতরে মুক্তি পাওয়া অন্য ছবিগুলোর মধ্যে আপনার পরিচালিত ছবি ছাড়া আর কোনটি দেখার সুযোগ হয়েছে? যদি দেখে থাকেন, কেমন লেগেছে?

মেহেদী হাসান : ‘চক্কর’, ‘জংলি’, ‘দাগি’—তিনটি ছবিই দেখেছি। তিনটি ছবি আমার কাছে তিন রকম মনে হয়েছে। তিনটিই ভালো লেগেছে। ‘চক্কর’ থ্রিলার ও রহস্যের একটা সিনেমা। ‘দাগি’ একধরনের প্রায়শ্চিত্তের গল্প। আর ‘জংলি’ আবেগের গল্প।

‘বরবাদ’ ছবির পোস্টারে শাকিব খান
প্রশ্ন

দেশের মানুষ যে ছবি দেখতে চান, উৎসবের সময় এটা বেশ ভালোভাবে চোখে পড়ে। বছরব্যাপী মানুষকে ছবি দেখার ধারাবাহিকতা ধরে রাখার জন্য কীভাবে এগোনো উচিত বলে মনে করেন আপনি?

মেহেদী হাসান : আমি বিশ্বাস করি, শুধু উৎসবে না, উৎসবের বাইরেও আমাদের ছবি ভালো চলে, চলবেও। যদি আমরা আগেকার দিনের সিনেমার কথা চিন্তা করি, তাহলে এমনটা দেখতে পাব। একসময় অনেক ভালো ভালো সিনেমা তৈরি হতো। এখনো হচ্ছে। আমাদের সবচেয়ে বড় বিনোদনের মাধ্যম চলচ্চিত্র, দর্শক এই বিনোদন নিতে চায়, যদি আমরা ঠিকঠাকভাবে তাদের তা দিতে পারি। আমাদের সুন্দর গল্প, ঠিকঠাক বাজেট এবং সুন্দর নির্মাণ লাগবে। ঠিকঠাক গল্প একজন ভালো নির্মাতা যদি ভালো শিল্পী দিয়ে বানাতে পারেন, তাহলে ছবি চলবে। অবশ্যই চলবে, সে ক্ষেত্রে প্রচারণা বেশি করা লাগবে। ঈদের সিনেমায় সাধারণ প্রচারণা হয় বেশি। তাই অন্য সময়ে সিনেমা মুক্তি দিলে প্রচারণাটা অনেক বেশি জরুরি। অবশ্যই ভালো ছবির ব্যতিক্রম কিছু নেই। ভালো ছবি নির্মাণ করা গেলে দর্শক অবশ্যই সিনেমা হলে ছুটবে।