‘উৎসব’ সিনেমায় তরুণ জাহাঙ্গীরের চরিত্রে অভিনয় করেছেন তরুণ অভিনয়শিল্পী সৌম্য জ্যোতি
‘উৎসব’ সিনেমায় তরুণ জাহাঙ্গীরের  চরিত্রে অভিনয় করেছেন তরুণ অভিনয়শিল্পী সৌম্য জ্যোতি

কপালে ১৩টি এবং থুতনিতে ৪টি সেলাই করা লাগে

পবিত্র ঈদুল আজহায় মুক্তি পেয়েছে ‘উৎসব’। তানিম নূর পরিচালিত ছবিতে অভিনয় করে প্রশংসায় ভাসছেন সৌম্য জ্যোতি। এ সিনেমাসহ নানা প্রসঙ্গে তাঁর সঙ্গে কথা বলেছে প্রথম আলো

প্রশ্ন

‘উৎসব’ সিনেমায় তরুণ জাহাঙ্গীরের চরিত্রটির প্রস্তুতি কীভাবে নিয়েছিলেন?

সৌম্য জ্যোতি : ক্যারিয়ারের শুরুতে ‘আমাদের বাড়ি’ দিয়ে তানিম নূরের সঙ্গে পরিচয়, জিফাইভের একটা প্রজেক্ট ছিল। পরে ‘কাইজার’ করেছি। তাঁর সঙ্গে যে কয়টি কাজ করেছি, তাতে শুরুতে তিনি আমার চরিত্র কী, কারা অভিনয় করছেন, সেটা বাদ দিয়ে গল্পটা শুধু শেয়ার করতেন। এবারও গল্প শোনান। একদিন হঠাৎ বললেন, তোমাকে তো কাস্টিংয়ে রেখেছি। জিজ্ঞেসও করিনি, কোন চরিত্র। সরাসরি হ্যাঁ বলে দিই। পরে জানি, আমার চরিত্রের জন্য বাইক চালানো শিখতে হবে। শিখতে গিয়ে দুর্ঘটনা ঘটে। শুটিংয়ের সময় দুর্ঘটনায় কপালে ১৩টি এবং থুতনিতে ৪টি সেলাই পড়ে। শুটিংও পিছিয়ে দিতে হয়। সুস্থ হওয়ার পর আমার অংশের শুটিং শুরু হয়।

প্রশ্ন

‘উৎসব’-এর শুটিং করতে গিয়ে এমন কিছু কি ঘটেছে...

সৌম্য জ্যোতি : ‘উৎসব’ ঘটনাবহুল কাজ। আমার ও জেসমিনের (সাদিয়া আয়মান) পুরো শুটিং আলাদা একটা জায়গায় ছিল। আমরা খুব মজা করে শুটিং করেছি। এই প্রোডাকশনের সঙ্গে ‘কাইজার’ করার কারণে একটা পারিবারিক সম্পর্ক হয়ে যায়। সে ক্ষেত্রে পুরো শুটিং সময়ের পরিবেশ আনন্দময় ছিল। বিশেষ করে রাজশাহীতে যখন শুটিং হচ্ছিল, সেখানকার মানুষ যেভাবে এসে শুটিং দেখেছেন, আমাদের তাতে কোনো রকম সমস্যাও হয়নি। পুরো রাজশাহী শহরটা এত সুন্দর, আমার আগে কখনো যাওয়া হয়নি। ‘উৎসব’ শুটিংয়ের কারণে যাওয়া। ঘুরে দেখাও হয়েছে। অনেক দিন রাজশাহীর কথা মনে থাকবে।

‘উৎসব’ সিনেমায় সৌম্য জ্যোতি ও সাদিয়া আয়মান। চরকির সৌজন্যে
প্রশ্ন

‘উৎসব’ ছাড়া এবার অন্য কোনো কাজ দেখা যায়নি। এটা কি সচেতনভাবেই করা হয়েছে?

সৌম্য জ্যোতি : সচেতনভাবেই কাজ করিনি। আমার জীবনে প্রথম কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করা, এটার জন্য অন্য কোনো কাজ করিনি, চাইওনি। উৎসবের সাড়ার পরও আমি একটু বিরতি নেব। পরের কাজটাও একটু ভেবেচিন্তে করব।

প্রশ্ন

অভিনয়ের প্রতি আগ্রহ কি শৈশব থেকেই, নাকি পরে তৈরি হয়েছে?

সৌম্য জ্যোতি : ছোটবেলা থেকেই ছিল। কিন্তু নিজে অভিনয় করব, এ চিন্তা কখনো ছিল না। হঠাৎ করে ঘটনাক্রমে অভিনয় শুরু করা। এরপর মানুষের ভালো লাগা পেলাম, সিরিয়াসলি নেওয়া শুরু করলাম। দর্শক যেহেতু প্রশংসা করছেন, তাই কাজটা করছি, কাজটা প্রতিদিন শিখছিও।

জাহাঙ্গীর ও জেসমিনের দুই বয়সের চরিত্রে অভিনয় করছেন সৌম্য জ্যোতি, জাহিদ হাসান এবং সাদিয়া আয়মান ও আফসানা মিমি। সাদিয়া আয়মানের ফেসবুক থেকে
প্রশ্ন

মা শাহনাজ খুশি ও বাবা বৃন্দাবন দাস—দুজনই গুণী অভিনয়শিল্পী ও নাট্যকার। তাঁদের সন্তান হিসেবে অভিনয়ে আসাটা কি সুবিধা, নাকি চাপ?

সৌম্য জ্যোতি : মা–বাবার কারণে একটা সুবিধা আছে। সুবিধা নেই বললে, মিথ্যা বলা হবে। আবার একটা অসুবিধাও আছে। দর্শকের প্রত্যাশা আমাদের প্রতি একটু বেশি, মা–বাবার কারণেই। সেই প্রত্যাশা পূরণ করা নিয়েও একটু চাপে থাকি।

প্রশ্ন

মা-বাবার কোন গুণটি সবচেয়ে বেশি নিজের মধ্যে অনুভব করেন? তাঁরা কখনো কি অভিনয়ের ব্যাপারে নিরুৎসাহিত করেছেন, নাকি সব সময় সমর্থন দিয়েছেন?

সৌম্য জ্যোতি : আমার কাছে মনে হয়, মানুষের সঙ্গে মিশতে পারা, দর্শকের সঙ্গে যে সংযোগের ব্যাপারটি ন্যাচারালি বাবা-মায়ের কাছ থেকে পাওয়া। ছোটবেলা থেকে বাবা-মাকে দেখতাম, তাদের ভক্তদের সঙ্গে কীভাবে কথা বলছে, কীভাবে আচরণ করছেন, আমাদের সব সময় শিখিয়েছেন, ভদ্রভাবে, ভালোভাবে, বিনয়ের সঙ্গে কথা বলার। আমরাও সব সময় সেই চেষ্টা করছি। মানুষ যখন প্রশংসা করে, তখন বিনয়ে নত নই, এটাও বাবা-মায়ের কাছ থেকে পাওয়া। আর বাবা-মা দুজনই শুরুতে নিশ্চিত ছিলেন না, আমাদের কাজ করতে দেবেন কি না। মানুষ আমাদের কীভাবে নেবেন বা নেবেন না, সে জন্য প্রথম দিকে অভিনয়ে আমাদের নিরুৎসাহিতই করেছেন। পরে যখন দেখল যে মানুষ আমাদের সানন্দে গ্রহণ করেছেন, তখন থেকে সাপোর্ট করেছেন এবং এখনো করে যাচ্ছেন।

সিনেমার প্রচারে সাংবাদিকদের সামনে চঞ্চল চৌধুরী, সৌম্য জ্যোতি ও জয়া আহসান
প্রশ্ন

আপনি কি চান, আপনার নাম শুনে মানুষ ‘শাহনাজ খুশি-বৃন্দাবন দাসের ছেলে’ না ভেবে ‘সৌম্য জ্যোতি’র মা-বাবা বলুক?

সৌম্য জ্যোতি : আমি একটা জিনিস সব সময় সচেতনভাবে মাথায় রেখেছি যে মা–বাবা এত কষ্ট করে নিজ যোগ্যতায় বিনোদন অঙ্গনে নাম করেছেন, দর্শকের এত ভালোবাসা পেয়েছেন, আমাকে যখন বৃন্দাবন দাস ও শাহনাজ খুশির ছেলে হিসেবে সম্বোধন করে, তখন বেশ গর্বিত হই। আমি যে তাঁদের সন্তান, এটাও আমার নিজস্ব পরিচয়, তাই আমি খুব বেশি বিচলিত নই। তবে এ রকম যদিও কখনো হয়, সৌম্য জ্যোতির বাবা-মা বৃন্দাবন দাস ও শাহনাজ খুশি, তা বাড়তি পাওয়া হবে।

প্রশ্ন

নাটক, সিনেমা, ওটিটি—সব মাধ্যমেই কাজ করছেন। কোনটা বেশি টানে?

সৌম্য জ্যোতি : আমার অভিনয় করতেই ভালো লাগে—হোক তা নাটক, ওটিটি কিংবা সিনেমা, এমনকি বিজ্ঞাপনচিত্র। কাজের কারণে ক্যামেরার সামনে দাঁড়াতে ভালো লাগে। এবার ‘উৎসব’-এর বদৌলতে বড় পর্দায় কাজের যে সৌভাগ্য হলো, ভবিষ্যতে বড় পর্দায় কাজ করার জন্য একটু বেশি আগ্রহী হব মনে হয়।

প্রশ্ন

কোন ধরনের চরিত্র বা গল্পে আপনি নিজেকে সবচেয়ে বেশি দেখতে চান?

সৌম্য জ্যোতি : সব ধরনের চরিত্রে কাজ করতে চাই। কোনো নির্দিষ্ট ঘরানায় নিজেকে আটকে রাখতে চাই না। আমি অ্যাকশন, কমেডি, রোমান্স—সবই করতে চাই। সব জনরার আবার এক সিনেমায় মিশ্রণ হচ্ছে, সেই সিনেমায়ও কাজ করতে চাই। একজন অভিনয়শিল্পী হিসেবে নিজেকে প্রতিনিয়ত আবিষ্কার করতে চাই।

ছবিতে শহনাজ খুশি–বৃন্দাবন দাস দম্পতি ও তাঁদের দুই পুত্র দিব্য জ্যোতি ও সৌম্য জ্যোতি
প্রশ্ন

নতুন অভিনয়শিল্পীদের এক রকম সংগ্রাম থাকে। একজন নতুন অভিনেতা হিসেবে কোন জিনিসটা নিয়ে আপনাকে সবচেয়ে বেশি লড়াই করতে হয়?

সৌম্য জ্যোতি : আমার না এখন ক্যামেরার সামনে দাঁড়াতে ভালো লাগে। সে জন্য সংগ্রাম বা স্ট্রাগলকে স্পোটিংলি নেই, আমি মনে করি, যে কাজটা আমি করছি, সংগ্রাম তারই একটা অংশ।

প্রশ্ন

কোনো সিনেমা বা চরিত্র দেখে আপনি ভেবেছেন—‘ইশ, এটা আমি করলে কেমন হতো!’

সৌম্য জ্যোতি : দেশে এবং দেশের বাইরের সব ধরনের সিনেমা দেখা হয়। প্রত্যেক অভিনয়শিল্পীর মধ্যে একটা তাড়না থাকে, নতুন নতুন চরিত্রে কাজের, বেশির ভাগ সময় মনে হয়, এই চরিত্রটা যদি করতে পারতাম। তবে নির্দিষ্ট একটার কথা বলা যাবে না।

প্রশ্ন

আপনার স্বপ্নের কোনো পরিচালক বা অভিনেতা আছেন, যাঁদের সঙ্গে কাজ করতে চান?

সৌম্য জ্যোতি : কাজ করতে চাই তানিম নূরের সঙ্গে, তিনি আমার জীবনের সবচেয়ে বড় টার্নিং পয়েন্ট। ‘কাইজার’ ও ‘উৎসব’-এ তাঁর সঙ্গে কাজ করেছি। এ ছাড়া সৈয়দ আহমেদ শাওকী, আশফাক নিপুন, অমিতাভ রেজাও আমার স্বপ্নের পরিচালক।

জমজ দুই ভাই সৌম্য জ্যোতি ও দিব্য জ্যোতি
প্রশ্ন

অভিনয় না করলে কোন পেশায় নিজেকে কল্পনা করতেন?

সৌম্য জ্যোতি : সেনাবাহিনী, বিমানবাহিনী, নৌবাহিনীতে কাজ করার খুব ইচ্ছা ছিল। যেহেতু বিএএফ শাহীন স্কুলে পড়েছি, ছোটবেলা থেকে নিয়মের মধ্যে ছিলাম। খুব ইচ্ছা ছিল ডিফেন্সে যোগ দিয়ে দেশের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করব।

প্রশ্ন

শুটিংয়ের বাইরেও আপনি কী করতে ভালোবাসেন?

সৌম্য জ্যোতি : আমি এমনিতে খুব ঘরকুনো একজন মানুষ। শুটিংও খুব বেছে বেছে করি। যেটুকু সময় পাই, বাবা-মা ও পরিবারে যাঁরা আছেন, তাঁদের সঙ্গে সময় কাটাতে পছন্দ করি।